নারীবাদ মানে হেডম দেখানো নয়

লীনা পারভীন: নারীবাদ’ বিষয়টি সম্পর্কে আমি অতো জ্ঞান রাখি না। তবে নারীর অস্তিত্ব, নারীর অধিকার বা নারীর নানামুখী ক্ষমতায়ন নিয়ে আমার ভাবনা আছে, মানে আমি সচেতন।

নারীবাদ বিষয়টি একটি রাজনৈতিক আলাপ। নারীদের মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমেই এর সমাধান হতে পারে। বিষয়টা কি এতো সহজ? শত সহস্র বছর ধরে তৈরি করা একটা সিস্টেম আমার মনের ইচ্ছায় পালটে যায় না বা যাবেও না। তাই বিচ্ছিন্নভাবে নারীর কোনো একটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে কোনো কূলে পৌঁছানো যায় না।

লীনা পারভীন

সমাজ তার নিজের প্রয়োজনে একদল দুর্বল মানুষকে তৈরি করে নেয়। একটা সময় নারীর শাসনে ছিলো সমাজ। কালের বিবর্তনে সমাজ এগিয়েছে, প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, চালিকা শক্তিতে চলে এসেছে পুরুষ। শক্তির পরীক্ষায় নারীরা পিছিয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরুষরা ভাবতে থাকলো কীভাবে এই নারীকে তার অধীনে আনা যায়।

শ্রমবিভাজনের থিউরি অনুযায়ী নারীদের জন্য বরাদ্দ হলো গৃহকেন্দ্রিক কাজ। ভোগবাদী ভাবনা থেকে পুরুষরা নারীকে মনোরঞ্জনের একটি উপাদেয় মাধ্যম হিসাবে দেখতে চাইলো। নারীরাও ধীরে ধীরে নিজেদেরকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে থাকলো। তাই নারীর সাজপোশাক, নারীর নারীসুলভ আচরণ সবকিছুই এসেছে কিছু ধারাবাহিক কৌশলের থেকে।

আজকের যুগের আমরা যারা নারীকে শৃঙ্খলমুক্ত করার লড়াই করতে চাই, তাদের আগে বুঝতে হবে এটা একটা চেইন, যেখানে নারীরাও অংশীদার। হঠকারিতা বা হেডম দেখানো কর্মকাণ্ড কেবল ভুল বোঝাবুঝিই বাড়াবে। ওড়না পরা বা না পরাটা বা সাজগোজ করাটা বড় বিষয় নয়।

বিষয় হচ্ছে, আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ, আর তা অর্জনে কৌশল নির্ধারণ করা। হেডম দেখানো নারীবাদ সমাজে ভুল বার্তা দেয়, ভুল পারসেপশন তৈরি করে যা আখেরে নারীকে মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠার লড়াইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। কাজেই যারা সমাজে নারীবাদ প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছেন বা এ নিয়ে সোচ্চার আছেন, তাদের উচিত বিষয়টি মাথায় রাখা

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.