নুরুন নাহার বেগম: যখন তুমি অনেক ছোটো, খালাতো ভাই, মামাতো ভাই, ফুপাতো ভাই, পাড়াতো ভাই সকলের চোখ থাকে তোমার দিকে। কারণে-অকারণে তোমাকে কোলে নিতে চায়, তোমাকে চুমু খেতে চায়, তোমাকে স্পর্শ করতে চায়, কিন্তু এই খারাপ স্পর্শগুলো তুমি বুঝতে পারলেও চারপাশের মানুষদেরকে বুঝাতে পারো না, বলতেও পারো না।
কারণ তুমি তো তখন কথা বলতেই পারো না। যখন তুমি একটু একটু করে বড় হও, তখন এ দলে নাম লেখায় আরও কিছু মানুষ; প্রাইভেট শিক্ষক থেকে শুরু করে পাড়ার মুদি দোকানদারও বাদ পড়ে না।

কিন্তু নারী এখন তুমি কথা বলতে পারো, তারপরও সমাজের ভয়ে তুমি বলো না। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে একটি সময়ে তুমি হয়তো যাও উচ্চ শিক্ষার জন্য, নারী তুমি সেখানে কি নিরাপদ? বয়স যখন তোমার ১৬/১৭ পার হয়, সমাজ লেগে যায় তোমার পিছু, বিয়ে নামের চুক্তিটি তোমার ঘাড়ে চাপাতে তারা বদ্ধপরিকর।
সেখানেও বলতে হয় তোমার সতীত্ব বজায় আছে কীনা! এতো গুলো মানুষের চোখ যদি থাকে তোমার দিকে, তা হলে কি তোমার সতীত্ব বজায় রাখা সম্ভব? তারপরও বলতে হয় তুমি সতী। কারণ তা না হলে সমাজ তোমাকে ছি: ছি: করবে, তোমার বিয়ে ভেঙ্গে যাবে, তোমার লজ্জায় মা-বাবা আত্মহত্যা করবে।
বিয়ে হওয়ার পর তুমি হয়ে যাবে স্বামী নামের ব্যক্তিটির ব্যক্তিগত সম্পদ। তখন কর্তার ইচ্ছায় কর্ম হবে, তোমার কিছু করার নাই, তুমি এ নিয়ে ক্ষমতায়িত না, তাই কিছু বলারও নাই, তখন তোমার অবস্থাটা এমন যে, তুমি না পারো গিলতে, আর না পারো ফেলতে।
একটা সময়ে তুমি না পেরে অাত্মহত্যা করো, অথবা তুমি যদি ভাগ্যবান হও, তোমার পরিবার যদি ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে পারে, তাহলে তুমি তালাক দিতে সক্ষম হও, তখন তোমার কপালে লেগে যায় তালাক নামের একটি সাইনবোর্ড।
সেখানেও নারী তোমার শান্তি নাই। তখন তুমি হয়ে যাও গণিমতের মাল। তোমার সহকর্মী থেকে শুরু করে বন্ধু, এমনকি অফিসে যাওয়ার পথে যে লোকটির সাথে সকালে তোমার বাসে পরিচয় হয়, সেও অপেক্ষা করে তোমার জন্য। আবার তোমার সেই পুরুষ বন্ধুটি, যাকে খুব কাছের মানুষ ভাবতে, যাকে বিশ্বাস করে তার যৌন চাহিদা মেটাতে, হোক তার ইচ্ছায়, হোক তোমার ইচ্ছায়, হোক দুজনার ইচ্ছাতেই, এই তুমি হয়ে ওঠো তার বন্ধুদের সাথে গল্পের একটি টপিক।
নারী অনেক হয়েছে। তোমার চারপাশের মানুষদের কথা তুমি অনেক ভেবেছো, অনেক দিয়েছো, এবার নিজের দিকে তাকাও, এবার তুমি মেরুদণ্ড শক্ত করো, নাইলে তোমার উপায় নাই।
নুরুন নাহার বেগম, উন্নয়ন কর্মী।