মিথিলারা যখন কেবলই খবর!

সালমা লুনা: জ্যাকুলিন মিথিলা নামে যে কেউ ছিলো সেটা অনেকেই জানতো না। সে যে ছিলো এটি জানা গেলো মেয়েটি আত্মহত্যা করবার পর। অন্তরা নামে একজন নায়িকা ছিলো, কখনো-সখনো দেখেছি টিভিতে-পত্রিকার পাতায় বোধকরি, তার নাকি কোন খোঁজ ছিলো না অনেকদিন। হঠাৎই ফেসবুকে দেখলাম খবর- তিন বছর পর তার দেহ কবর থেকে তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ সে তিন বছর আগেই মারা গেছে বা খুন হয়েছে।

জ্যাকুলিন মিথিলা বা জয়া শীল, অন্তরা বা নাম না জানা এরকম অনেকেই খবর হয়ে সামনে এলে ভাবতে বসি, এদের সংখ্যা খুব দ্রুতই বাড়ছে দেশে – অনেকদিন থেকেই। কেউ লক্ষ্য করছে না এদের। ফেরাচ্ছে না। সমাজ, রাষ্ট্র। পরিবার। কেউ না।

এরা যখন পাঁকে পড়ে খাবি খায়, আরো জড়াতে থাকে এবং চোরাবালিতে ডুবে যেতে থাকে, তখন ওদের কেউ বাঁচাতে যায় না। হয়তো মজা দেখে, মজা নেয়। কিংবা চূড়ান্ত মজা দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।

মিডিয়া নামে এক স্বৈরিণী চরিত্র আছে গ্রিক মিথোলজিতে। আমাদের মিডিয়াকেও আমার সেইরকম মনে হয়। নিজেকে লোভনীয় করে অন্যের পাতে উঠে পড়তে এরা যা নয় তাই করতে পারে, ফলে জন্ম নেয় এই মেয়েগুলোর মতো খবরের উপাদান এবং পরিণতিও। বিশদ ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।

ভারি এক জ্বালা হয়েছে , স্বাধীনতা ! কত রকমের স্বাধীনতা যে আছে! কাপড় খুলে ঘুরে বেড়ানোও এক স্বাধীনতা। প্রকাশ্যে চুম্বনের অধিকারও স্বাধীনতা। সবাই স্বাধীন হতে চায়। এই দেশের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাস সবই এই স্বাধীনতার পাকেচক্রে দিশেহারা।

স্বাধীন হতে চেয়ে এরকম পাঁকে পড়ে কতো মিথিলারা যে পথ ভুলে যায়, তার তো হিসেবই হয় না। কেবল কখনো কোন জয়া শীল বা জ্যাকুলিন মিথিলা দড়িতে ঝুলে কিংবা বিষ খেয়ে জীবনের বাকি পথটা খুব দ্রুত পাড়ি দিয়ে ওপারে চলে গেলে আমরা বুঝি আমরা পচে যাচ্ছি খুব দ্রুতই। আমাদের পতন ঠেকানোর চিন্তা না করে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে ইন্টেলেকচুয়াল বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি এবং কয়েকটা দিন গেলে আরেকজন মিথিলা বা আরো কোন রগরগে জ্বালাময়ী ভাষণ দেবার বিষয় সামনে চলে এলে আবার সেটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, এবং বর্তমান বিষয়টি ভুলে যাই।

মিথিলার আত্মহত্যার কারণ হিসেবে তার বাবা জানিয়েছেন তার একজন স্বামী ছিলো এবং স্বামীটি তাকে আগে ভালোবাসলেও এখন আর ভালোবাসে না। মিথিলারা চলে যায় আর আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে যায় এইসব বাস্তবতা। আমরা খবরগুলো ভালোবাসি, সমালোচনা ভালোবাসি, রগড় ভালোবাসি, নারী শরীর আর যৌনতা সমার্থক এই ঢাকঢাক গুড়গুড় বিষয়টি নিয়ে এই সুযোগে বেশ খোলামেলা আলোচনা করতে ভালোবাসি, শরীর প্রদর্শনকারী নারীকে গালি দিতে ভালোবাসি, আবার লুকিয়ে তার ছবিটিও দেখতে ভালোবাসি, গালভরা কিছু আমদানী করা বিশেষণে ভূষিত করতে ভালোবাসি, যেমন সেক্সডল, সেক্সবোম; কিন্তু, তার সম্মানের সাথে বেঁচে থাকাটাকে ভালোবাসি না।

মিথিলারা যখন কাপড় খুলে দেখায় তখন দু’হাজার, তিন হাজার মানুষ তা দেখে। আবার তারা গালিও দেয়। যা নয় তাই বলে অপমান করে। কিন্তু মিথিলারা এসব বন্ধ করে না। কেন করে না? কারণ সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে চাওয়ার ইচ্ছা। মডেল বা নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা বা এমনিতেই হয়তো মনোবিকৃতি!

সালমা লুনা

একজন ডেন্টিস্ট আছেন , তারও এরকম কিছু ছবি দেখেছি। তিনিও খোলামেলা ছবি ফেসবুকে দিয়ে ফট করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। কেউ তো তার এসব নোংরামি দেখা বন্ধ করেনি। তাকে বলেনি, আমরা তোমার এসব দেখবো না। অন্য মেয়েরা তাকে আইডল ভাবতেই পারে এক্ষেত্রে। ওই যে স্বাধীনতা!

মিথিলাও তাই করেছে।
তাকে তুলনা করেছে কোনো মডেলের সাথে বা নায়িকার সাথে। যারা এরকম স্বল্পবসনা হয়েই ওইরকম মডেল বা নায়িকা হয়েছে। সে এটি করেই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চেয়েছে। সে এরকমটি না করলে অন্যকেউ ওইরকমভাবেই উপরে উঠার সিঁড়িটির পথ পেয়ে যাবে।
এই মেয়েগুলো যেন পতঙ্গ, আগুনকে ঘিরেই এদের জীবন বহমান।
একসময় ওই আগুনেই ঝাঁপ।

আমি বুঝি না, এরা এতো সাহস করে সমাজের পরিবারের বিরুদ্ধাচারণ করতে পারে। কাপড় খুলে দেখাতে পারে। পুরুষের লোভী চোখকে আরাম দিতে – চোখের খাদ্য জোগাতে নিজের মান কেও বিসর্জন দিতে পারে। অথচ স্বামী পুরুষটি তাকে ভালোবাসে না বলে দিব্যি আত্মহত্যা করে ফেলে ! এতো সংগ্রামের জীবন ছেড়ে চলে যায়!

কোথায় যেন মেলে না!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.