সাবরিনা শারমীন বাঁধন: কাজের সময় ফোন রিসিভ করা নিষেধ। তাই ফোনে রিং হওয়া সত্ত্বেও ফোন রিসিভ করলো না মেয়েটি। খানিকবাদে মনে পড়লো হয়তো তার স্বামী ফোন করেছে এবং এটাও মনে পড়লো আজ যে সে কাজে এসেছে তা তার স্বামী জানে না। কারণ হিসাব মতে আজ তার ছুটির দিন, কিন্তু অনিবার্য কারণবশত তার আজ কাজে আসতে হয়েছে। এই ভেবেই মেয়েটি দৌড়ে তার মালিকের কাছে গিয়ে অনুরোধ করলো সে জেনো তার স্বামীকে ফোন করে বলে আজ সে কাজে এসেছে।
একটু পরে মালিক জানালো মেয়েটিকে যে, সে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু তাতে মেয়েটির মনের দুশ্চিন্তা যায় না। সে কাজ করতে করতে অন্যমনষ্ক হয়ে যায়, ভাবে তার স্বামী হয়তো ভেবেছে সে মিথ্যা খবর জানিয়েছে, হয়তো ভাবছে সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে! হাতের কাজ একটু সেরে তড়িঘড়ি করে তার স্বামীকে ফোন করলো। ফোন করা মাত্রই কেমন আছে, হাঁটতে পারছে কিনা জানতে চাইলো। প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই হয়তো স্বামী তার নিজের কথা শুরু করেছিল।
বোঝা গেল স্বামীটি তাকে খুব বাজে কথা বলছে, কিন্তু মেয়েটি তাকে বারবার বোঝাতে চাইছে সে কাজে। স্বামীকে মেয়েটি বলছে, তাকে খুব মিস্ করছে, তাকে দেখতে ইচ্ছা করছে, একসাথে খেতে যেতে ইচ্ছা করছে। সামনে ভ্যালেন্টাইন ডে, সে শাড়ি তৈরি রেখেছে আর একটা শার্ট বা পাঞ্জাবী কিনবে, তারপর তারা একসাথে বেড়াতে যাবে তাদের ছেলেকে মায়ের (মেয়েটির) কাছে রেখে। কিন্তু স্বামী বোধহয় এসব শোনার লোকই নয়! মেয়েটি চোখে জল নিয়ে ফোন রাখলো।
ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস কি শুধু একদিনের? ওই একদিন টেনেটুনে সম্পর্ক ঠিক রেখে একটু বেড়ানো আর বাকী দিনগুলোয় প্রবল সন্দেহ! এভাবে কি ভালোবাসার সম্পর্ক হয়? দুইজন ছেলে- মেয়ে ভালোবাসার সম্পর্ক করতে গেলে হয়তো মান, অভিমান, ঝগড়াও হতেই পারে, কিন্তু তাই বলে সন্দেহ?
সন্দেহ হলো ঘুণ পোকা। একটা সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট করতে একটু সন্দেহই যথেষ্ট।
এমন পরিস্থিতির সকল মেয়েদের বলি, বিয়ের আগেই ভাবো, বিয়ে করে দুজন ভাল থাকতে পারবে কিনা? কারণ জোড়াতালি দিয়ে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না! একদিনের বেড়ানো, একটা ভ্যালেন্টাইনস ডে কার্ড দিয়ে সম্পর্ক টেকে না। সম্পর্ক টেকাতে চাই বিশ্বাস। বিশ্বাসের ভিত শক্ত করো। দুজনে বসে নিজেদের সমস্যা সমাধান করো, প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নাও, তাও যদি সমাধান নাহয় তবে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসো। নিজেদের দা-কুমড়া সম্পর্কের জেরে বাচ্চার জীবনটাকে দুর্বিষহ করে দিও না। একটা বাচ্চা কখনও একা এই পৃথিবীতে আসে না। বাবা-মায়ের ইচ্ছায় আসে। কাজেই এই পৃথিবীটা বাচ্চার জন্য নরক করে দিও না। নিজের বাচ্চার জন্য সুন্দর পৃথিবী তৈরি করার দায়িত্ব মা – বাবা উভয়ের।
শেয়ার করুন: