পিরিয়ডের ট্যাবু ভেঙে এগিয়ে যাক মেয়েরা

মারজিয়া প্রভা: “আমার বাবা আমাকে স্যানিটারি প্যাড কিনে দিয়েছে। মা কাপড় দিয়েছিল। বাবা সায় দেয়নি। ফার্মেসি থেকে প্যাড কিনে এনেছিল। এই আমার প্রথম মাসিকের অভিজ্ঞতা”।

দেউতি হাই স্কুল এন্ড কলেজের ক্লাস টেনের মেয়ে অংকনের কিছু ভুল বানানের এই লেখা পড়ে, আমাদের তিনজনের চোখ ছলছল করছিল। বন্ধু সাকির মাটি ওসব বানানের ভুলকে থোড়াই কেয়ার করে সবচেয়ে হাইয়েস্ট মার্ক দিয়ে দিল। তার হাতে তুলে দিলাম সমরেশের ‘গর্ভধারিণী’ বইটি। বেশ জানি, ও জয়িতার চেয়ে কম কিছু হবে না। 

আমার মনে ভাসে, হ্যাপি টু ব্লিড আন্দোলনের সময়ের কথা। এক আপু প্রথম ঋতুস্রাবের অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন লিখেছিল আমাদের ফেসবুকের ভাই বেরাদরদের নিকৃষ্টতম আচরণসহ, সেই মেয়েকে গালাগাল করা থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুই হয়েছিল অনলাইনে। 

আমার সেই ভাইরা জানতো, এই দেশে মেয়েদের স্বাস্থ্যকর পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। এদেশের ৬০ পারসেন্ট মেয়ে জানে না প্যাড কী করে ব্যবহার করতে হয়! এ দেশের ৮৭ পারসেন্ট মেয়ে পিরিয়ডের সাতদিন এক কাপড়ে পার করে। তবুও তারা গালি দিয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম হ্যাপি টু ব্লিড মুভমেন্টকে। 

আমরা যখন Donate a Pad for hygiene Bangladesh প্রজেক্টের কাজ শুরু করি, সারাদিনই গালিগালাজ এর উপরে থাকতাম। ঢাকা থেকে প্রতি মাসে আমাদের স্কুলগুলোতে প্যাড যায়। প্যাড সার্ভিসের জন্য প্যাড। সিএনজিওয়ালা হাসে, কুরিয়ারওয়ালা হাসে, বাসওয়ালা হাসে। টিপেটুপে দেখে কী দিচ্ছি বস্তা ভরে! আমার দিকেও তাকায় তারা। খুব বুঝি আমার শরীরে একচোট স্ক্যানিং করছে। এই এতোসবের পরেও তো দমে যাইনি একদম। 

এই দমে না যাওয়ার বিরাট ফল হচ্ছে উত্তরবঙ্গে এবার শুরু হলো Donate a Pad for hygiene Bangladesh এর প্যাড সার্ভিস। দেউতি হাই স্কুল এন্ড কলেজ। এটাতে আগামী ছয় মাস সাকসেস হবার স্বপ্ন এখন চোখে।

সেই সুবাদে গত ৪ ফেব্রুয়ারি এই স্কুলে সেমিনার করি। আর সব বারের সেমিনারের চাইতে আলাদা ছিল এই সেমিনার। অফলাইনে প্রথম ঋতুস্রাবের অভিজ্ঞতা লিখতে দেয়েছিলাম মেয়েদের। সঙ্গে কিছু কুইজ। লাজলজ্জা ভুলে ৫০০ মেয়ে অংশগ্রহণ করেছিল এই কুইজ প্রতিযোগিতায়। 

মাসিকের অভিজ্ঞতা নিয়ে কী কী সব লেখা তাদের! অনলাইনে আমরা যারা নারীদের নিয়ে লিখছি, তাদেরও হার মানিয়েছে সে লেখা। সেই লেখার উপর ভিত্তি করে তিনজনকে পুরস্কার দিতে পেরেছি। টাকার অভাবে মাত্র তিনজনকে পারলাম। হয়তো আরও কিছু ভালো বই কিনতে পারলে আরও কিছু মেয়েকে পুরস্কার দিতে পারতাম। 

অফলাইনে এই ট্যাবু ভেঙ্গে ফেলার ১০০ টি গল্প সাজিয়েছি। ক্রমেই তা প্রকাশ করা হবে। আমরা চাই-

#Breaking_the_taboo এর এই মোটো ছড়িয়ে যাক বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ের কাছে। মাসিকের লজ্জা ভুলে সচেতন হোক নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি। আর এভাবেই এগিয়ে যাক আমাদের বালিকারা। 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.