প্রেম বোঝার সেই যোগ্যতা পুরুষের কই?

শিল্পী জলি: মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু ভয়, বড় বাঁধা অন্যের চোখে নিজেকে দেখা, আর বড় বিপদ অন্যের সন্তুষ্টির জন্যে নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দেয়া–পা থাকতেও খোড়া হয়ে যাওয়া।

অনেক মেয়েই জীবন গড়ার শুরুতেই ভালোবেসে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসে যায়। কেউবা পড়ালেখা শেষ করেও ক্যারিয়ার গড়ে না। ফলে বরের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বর খাওয়ালে খায়, পরালে পরে, পরিবার এবং সন্তানকে দেখাশোনা করে। তখন তাদের সম্পর্কের আদান-প্রদানের একমাত্র মাধ্যম হয় সেক্স। প্রয়োজনীয় সময় দিনে হয়তো পাঁচ মিনিট।

শিল্পী জলি

আমাদের সমাজে ঘরে ঘরে দেখা যায় কাজের মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। কারণ একটিই–তারা আর্থিকভাবে স্বয়ং-সম্পূর্ণ নয়। ঐ আয়েই হয়তো কোনমতে তাদের জীবন চলে। তাই চাইলেই আর হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত নেবার পথ থাকে না, যদিও তাদের নিয়মিত কিছু আয় থাকেই এবং কর্মক্ষেত্রেও যাতায়াত চালু। তাহলে যারা শুধু গৃহবধূ হিসেবে জীবনযাপন করেন, তাদের অবস্হা কতটা ভয়াবহ?
তাদের শ্রমের কোনো প্রাপ্তি নেই–কাজ সম্পাদিত হয় বিনামূল্যে। উল্টা ভর্তুকি হিসেবে যুক্ত হয় সেক্স–যদি বরের বাসনা জাগে তবেই।
সময়ের সাথে তাদেরও কর্ম ক্ষমতা কমে, সেক্স আপিল হারায়, রোগ বাসা বাঁধা, কোন সঞ্চয় থাকে না।

দেখা যায় বউ যতই সুন্দরী হোক পুরোনো হলে তার কদর কমে। কেননা পুরুষ আকৃষ্ট হয় সেক্সের মোহে– নতুনত্বে। এক নারীর সাথে সেক্সের দেড় বছর হতেই বেশীর ভাগ পুরুষেরই মনের গুণগুনানি কমে যায়। কল্পনা বাস্তবভিত্তিক চিন্তায় রূপান্তরিত হয়। প্রেমিকা বা বঁধূর সন্তুষ্টির চেয়ে নিজের লাভ লোকসানের চিন্তা এবং ভালোলাগায় মনোযোগ বাড়ে। এ সময় ভালোবাসায় ভরপুর পুরোনো নারীটি যদি ভালোবাসায় গদগদ হয়ে নিজেকে আরও উজার করে দিতে চায়– বাবু, বাবু বা…আ…আ…বু বাবুউউ সোনা করে নিজের সত্ত্বা হারিয়ে ফেলে, তখন অধিকাংশ পুরুষ ঐ বিসর্জনকে গলার ফাঁস মনে করে। সে জেনে যায় একে আর জয় করার কিছু নেই, আমি ছাড়া তার কোনো জগৎ নেই, কোনো অস্তিত্ব নেই– হু দ্যা হেল শি ইজ!

দীপিকা পাডুকোন (পাদুকোন?) ঘাড়ে রণবীরের নাম লিখতেই রণবীর ইউ টার্ণ দেয়। সেই দেখে ক্যাটরিনা কাইফ ভাবলেন, দীপিকা বলেই বোল্ড আউট হলো, আমি হলে….!
কোটি পুরুষের বুকে ধুক্ধুকানি সৃষ্টিকারী ক্যাটরিনা সালমান খানের হুমকিকে অগ্রাহ্য করে ভালবাসার দাপটে ভর করে রণবীরের সাথে থাকতে শুরু করলেন। দেড় বছরের মাথায় রণবীরের ঘোর কেটে গেল–কিসের বিয়ে? মায়ের মত নেই– দুনিয়াতে মায়ের উপরে আর কেউ আছে নাকি! ক্যাটরিনার মা লন্ডন থেকে এসেও রণবীরকে বোঝাতে পারলেন না। সে তার সিদ্ধান্তে অটল।

শাহরুখ খানকে প্রিয়াংঙ্কা চোপড়া সেই বাল্যকাল থেকে বিভোর হয়ে ভালোবেসেছে। তার জনপ্রিয়তা এবং পরিচিতি মিলতেই তার ভালোবাসায় শাহরুখ খানও মুগ্ধ হয়ে একদিন তাকে বুকে টেনে নেন।
এতো ভালোবাসাকে কি অস্বীকার করা যায়? তাই আর বললেন না, ঘরে আমার গৌরী আছে। তোমায় রাখি আজ আর সে উপায় যে নেই!
কিছুদিন কানাকানি, লুকোলুকি, ঘোর লাগা, স্বপ্ন দেখা কাছাকাছি….এভাবেই….।
এখন শাহরুখ খানের প্রশ্ন, হু ইজ প্রিয়াংঙ্কা চোপড়া? আমি কি চিনি?
প্রিয়াংঙ্কা ভাবে, আমি তো তোমাকে ভালোই বাসতাম–না বললে ‘সম্ভব না’, এখন আবার চেনো না ! এ বয়সে একি ভয়াবহ মেমোরি লস, বন্ধু আমার।

আমাদের সমাজে পতিতাকে কাম-বাসনায় অতি দক্ষ নারী হিসেবে দেখানো হয়। তারাও রাত পেরুতেই পুরুষকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। সেখানে পরনির্ভরশীল আনাড়ী ঘরের বঁধূ বা প্রেমিকারা কতটুকু ক্ষমতা রাখে তাদের পুরুষ সঙ্গীটিকে শুধু সেক্সের বাঁধনে আজীবন ধরে রাখতে, যদি না সে পুরুষ সত্যিই ভালোবাসতে শিখে?

বাংলাদেশ- ভারত-পাকিস্তানের কয়েকজন পুরুষের সাথে ভালোবাসার কথা বললেই বোঝা যাবে তাদের বেশীর ভাগই ভালোবাসা বলতে কী বোঝেন! মূলত বলবে, কখন কোথায় কীভাবে ধরবে, কোথায় কোথায় চুমু খাবে, কতক্ষণ, কীভাবে সেক্স করবে! সাথে যুক্ত হবে বড় জোর জান, সোনা, ময়না, টিয়া, চাঁদ! শুধু দশ মিনিটের পরিকল্পনা। তাদের জানাই নেই একটি সঙ্গের মূল্য, ভালোবাসার মাধুর্য্য, প্রতিশ্রুতি রক্ষা, মানুষের আত্মার শুদ্ধতা, সৃষ্টির কদর, জীবনের স্বীকৃতি, পারস্পরিক কেয়ার, সম্ভ্রম রক্ষা এবং দায়িত্ব গ্রহণ করতে না পারলে কোন ভালোবাসাই হয় না। আর একদিন ঐ মেয়েটিও বুঝতে পারে সব– মনে মনে ভালোবাসা ফিরিয়ে নেয়। যে ভালোবাসার কদরই জানে না, তাকে আর বোঝাবার কী থাকে?

ছবিটা প্রীমা নাজিয়া আন্দালিবের আঁকা

হাটে-ঘাটে-পথে-ঘরে হাজারও মেয়ে ভালোবাসায় ঝাঁপ দিয়ে ভালোবাসার কদর্য রূপ দেখে ফেরে। নিজেকে ব্যর্থ মনে করে। অথচ ভাবে না যার ভালোবাসার যোগ্যতাই নেই, সে কী করে ভালোবাসবে –আদার বেপারির কাছে জাহাজের খবর নাই বা পেলাম !

সাগরে ডুব দিয়ে মুক্তা খুঁজে না পাওয়াকে হয়তো জীবনের একটি শখ পূরণ না হওয়া বলা যেতে পারে, জীবনের ব্যর্থতা নয়। মেয়েরা কল্পনায় যে ভালোবাসার প্লেন উড়ায়, সেই ভালোবাসার প্লেনের পাইলট হবার যোগ্যতা অধিকাংশ ছেলেরই থাকে না। আবার কারও কারও শুরুতে কিছুটা থাকলেও সেটা স্হায়ী হয় না– আর্লি অবসর নেয়। তাই ভালোবাসায় চোখ বন্ধ করে উড়াল না দিয়ে নিজের চলার পথটি মজবুত করাই উত্তম। মেয়েরা জীবনে একা হবার ভয়ে যে সঙ্গটিকে আঁকড়ে ধরতে চায়, সেটিই হয়তো জীবনের একমাত্র বাহক নয়। তাই চলার পথে কেউ হাত ছেড়ে দিতে চাইলে ঐ হাতটি ধুয়ে নেয়াই ভালো–তাতে জীবাণুমুক্ত হয়।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.