দিন কয়েকের ভালবাসা….

শবনম সুরিতা: ভেবেও হাসি পায় ঠিক কতটা বোকামি মানুষ ভালোবাসার নামে করতে পারে। কী অকাজের ঠেলায় যে ফেব্রুয়ারি মাসে ছাতার মাথা গোলাপ-চকলেট-চুম্বন ইত্যাদি দিবস দিয়ে ছেয়ে ফেলেছিল কোনো এক কার্ড কোম্পানি কোন কালে। পৃথিবীর বিভিন্ন কোণায় থাকা কিছু লোকেদের এই সব দিন বিষয়ক আদিখ্যেতা দেখে গত কয়েকদিন ধরে একা একাই হেসে পাগল হয়ে যাচ্ছি। এতো ভালোবাসা কই ছিল এতদিন কে জানে?

শবনম সুরিতা

এমন হাবভাব, যেন সারা বছরের জমে জমে পচে যাওয়া প্রেম যা দেখছি এক সপ্তাহের ডেডলাইনের মধ্যেই দেখিয়ে ছাড়বে। যেন এই কদিনই সময়, এরপর ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দৌড় নির্ঘাত। যা কিছু প্রমাণ করার এই সপ্তাহেই করে ফেলতে হবে। তারপর বাকি বছরটায় যতোই মত্ত থাকি না কেন হাসি, ঠাট্টার ছলে সেক্সিজমকে নিপূণভাবে আয়ত্ত করতে। বাকি বছরের হিসেব কোনো কোম্পানি রাখে না। লিঙ্গবৈষম্য দ্বারা আহত হলে কোন কোম্পানিই ‘গেট ওয়েল সুন’ কার্ড ছাপায় না। কারণ যুদ্ধকালীন কার্ড এখনও ছাপিয়ে ফেলা হয়নি আমাদের।

এটাই আমাদের সংস্কৃতি। যতক্ষণ আশপাশের মানুষ প্রশ্রয় দেবে, যতক্ষণ বুঝতে পারব আমাদের কিছু পদক্ষেপের কারণে সমাজের চোখে জাতে ওঠার কাজটা সম্পূর্ণ, ঠিক ততক্ষণই আমরা স্রোতে গা ভাসাতে রাজি। আবার যেদিন গা ভাসাতে ভাসাতে দেখবো জোয়ার হারিয়ে গেছে, জল বড়ই স্থবির, তখন শুরু হবে অন্য গল্প। স্পিড বাড়ানোর চেষ্টা। শখ করে আমরা যাকে মাঝে মাঝে বিপ্লব বলি, সেটাই।

সেই বিপ্লবের রাস্তায় সবাই এক নয়। কেউ হয়তো জান লড়িয়ে দেবে নির্দ্বিধায়, আক্রোশের চোটে মুহুর্তে সমস্ত উজাড় করে দিতে ভাববে না একটুও। আবার কেউ কেউ সেই একই রাস্তার ফুটপাথ ধরে সন্তর্পণে হেঁটে যাবে। সমান্তরালভাবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে সেও যেন আসলে বিপ্লবের পথেরই পথিক। কিন্ত আসলে রাস্তায় নামার সাহস বা যোগ্যতা কোনটাই তার নেই।

নিপাট ভীরু, সুবিধেবাদী লোকেদের জন্য রাস্তা কখনোই নয়। সেখানে ধাক্কা খাবার, চাপা পড়বার, রোদে পুড়বার ভয় থাকে। ওসব উটকো ঝামেলা তাঁরা চাননা। তাদের জন্য ফুটপাথই যথেষ্ট। আর খুব বড়জোর একটু খানি সানস্ক্রিন লোশন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.