আমি পুরুষ, আমি রেপিস্ট নই

রেহমান মোস্তাফিজ: “কি যেন বলেন আপনারা rape। হ্যাঁ রেইপ। আপনি পারবেন rape করতে? মেয়েরা বিভিন্ন কাপড় পরে আমাদের উত্তেজিত করবে, আর আমরা কিছু করলেই সেটা rape হয়ে যাবে। ধর্ষণ করতে বিগ হার্ট লাগে। যারা করে তাদের বিগ হার্ট আছে। আপনার বিগ হার্ট নাই বলে আপনি সেটাকে লুকাতে rape নাম দেন।।।।”…….

হোল্ড অন এ সেকেন্ড। কথাটা আমার না, এই ফেসবুকেই দেখা এক ভদ্রলোকের কোন এক লেখায় কমেন্ট ছিল এটা। তারপর থেকেই মনে হচ্ছে আমার বাসায় মাঝে মাঝে আমার বোন আমাদের সাথে ওড়না ছাড়া থাকে, আমার চাচি তার বাচ্চাকে আমাদের সামনেই তার ছোট বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ায়। আর জানেনই তো বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও বুকের কিছুটা অংশ দেখাই যায়।

তাহলে কি এই দুজনের উপর ঝাঁপ দিতে পারি? যেহেতু বুকের সেই মাংসপিণ্ডটা ছেলেদের উত্তেজিত করে। ট্রাস্ট মি আমার হার্ট অনেক বড়। কিন্তু না, আজ পর্যন্ত এখনো কোনদিন ঝাঁপ দেয়া হলো না। এখন মনে হচ্ছে কী বিশাল অপর্চুনিটিই না মিস করলাম। পুরুষত্ব দেখানোর এরকম চান্স কি বারবার আসে? আমার মা, বোন, চাচিরা এতোটা নিশ্চিন্তে ঘরে ঘুরে বেড়াতে পারে, কারণ তারা জানে তারা এখানে সেফ। আমি নিশ্চিত সেই ভদ্রলোকের পরিবারের মেয়েরা এতোটা সেইফ না তাদের বাড়িতে। এটা কি তাদের একটু লজ্জাও লাগে না?

থাক বাদ দেই, কারও দোষ দিবো না। সেই ভদ্রলোককে গালিও দিবো না। আর শুধু সেই ভদ্রলোকই না, আমাদের দেশের একটা বিশাল সংখ্যা এই মানসিকতা রাখে। কিন্তু কেন তারা এমন হলো? এই ভুল বিশ্বাস রাখাটা আসলো কোথা থেকে? জন্মের পর থেকেই নিশ্চয়ই এমন ছিল না। আর শুধু ছেলে না, একটা ভাল সংখ্যক মেয়েও এরকম ধারণা রাখে। যাদের কাছে পোশাকই হচ্ছে ধর্ষণের প্রধান কারণ। সেক্স এডুকেশনটা এখানেই জরুরি আমাদের। শুধু পর্ন দেখে আর কতোদিন সেক্স সম্পর্কে জানবো আমরা? আমাদের টিচাররা কি এবার আমাদের বইয়ের সেক্স সম্পর্কিত চ্যাপ্টারগুলোর স্টেপলার করা পেইজগুলোকে আনস্টেপল করে আমাদের এগুলো একটু বুঝিয়ে দিবেন? আমাদের ধর্মীয় গুরুরা কি এবার থেকে তাদের বক্তব্যগুলোতে একটু নারীদের সম্মান দিয়ে কথা বলবেন?

আপনি বলতেই পারেন, মুসলিম ধর্মে আছে হিজাব করে থাকার কথা, তো হুজুররা তো ঠিকই বলেন। আমিও বলি ওনারা ঠিকই বলেন, কিন্তু কথা হচ্ছে হিজাবটা কিন্তু যার যার ব্যক্তিগত ইচ্ছের ব্যাপার। যার ইচ্ছে করবে, যার ইচ্ছে সে করবে না। আর হিজাবটা তো মধ্যপ্রাচ্যের পোশাক কালচার। আমাদের মেয়েরা আমাদের নিজস্ব কালচারের পোশাক শাড়ি পরবে অথবা সালোয়ার কামিজ পরতেই পারে।

আমার চোখে আমাদের দেশের সবচেয়ে বোল্ড ড্রেস এই শাড়িই। কারণ এই পোশাকে একজন নারীর সাম পার্ট অফ দেয়ার বডি ইজ বাউন্ড টু শো। তার মানে কি আমি এদের রেপ করবো? একটা কথা আছে এরকম no matter if a woman is fully covered or doesn’t wear any clothes, a man has NEVER the right to have sex with her, if she doesn’t want it. ঠিক এই কথাটা মেয়েদের জন্যও প্রযোজ্য। অনেক দেশেই আবার পুরুষও ধর্ষণের শিকার হয় কীনা!!

সব দেখে মনে হয়, এতোদিনে সিরিয়াল রেপিস্ট হওয়ার কথা ছিল আমার। কেন জানেন? কারণ আমাদের এখানে সামারে প্রায় সব পার্কেই কিছু মেয়ে বুক খোলা রেখে সূর্যের নিচে শুয়ে থাকে, বিচগুলোতে থাকে বিকিনি পরা, রাস্তাঘাটে থাকে রিয়েলি শর্টস স্টাফ পরে। আর সেগুলো তো মনে হয় আর বেশি উত্তেজনাকর। কিন্তু বিশ্বাস করেন, ঠিকমতো চোখও যায় না এতোটা। কারণ জানি অনুমতি বলে একটা শব্দ আছে।

তাই বলি, একজন পুরুষ হিসেবে আমাদের অনেক রোল আছে। বাবা হওয়া, ভাই, বন্ধু, প্রেমিক হওয়া। যখন আমরা এতোকিছু হতে পারি, সেখানে ধর্ষক কেন হবো বলতে পারেন? এর চেয়ে বরং ভালো প্রেমিক হন, সত্যি বলছি জোর করা লাগবে না তাতে। মনের টানেই দেহ আসবে তখন। আর তা না করতে পারলে মেয়ে মানেই আজীবন মাংসপিণ্ড থেকে যাবে আপনার কাছে। সেটা আপনার মা হোক আর বোনই হোক। আপনি তার বাইরে চিন্তাই করতে পারবেন না।

আরেকটা কথা জানেন তো আমাদের পিঠে একটা হার আছে, যেটাকে আমরা মেরুদণ্ড বলি। ধর্ষকদের মনে হয় সেটা থাকে না। যেটা থাকে সেটাকে কী বলতে হয় জানি না। আর তার জোরেই আজ তারা এতোকিছু করছে। কিন্তু স্পাইনাল কর্ড ছাড়া তো মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সো প্লিজ খেয়াল রাখেন এতোটাই না আবার কুঁজো হয়ে যান, যাতে কোমরের নিচ থেকে যে পুরুষত্ব মাপেন আপনারা, তখন আর সেই কোমর নাড়ানোরও শক্তি আর না থাকে!!!!!!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.