মানুষে মানুষে ভেদাভেদ আর কতো!

শিল্পী জলি: এক বন্ধুর পোস্টে পড়লাম দেশের কোন এক চেয়ারম্যান জুতা পরে ছাত্রদের গায়ের উপর দিয়ে হেঁটে গিয়েছে। প্রতি বছরই নাকি ঐ এলাকার শিক্ষার্থীরা এভাবেই এলাকার চেয়ারম্যানকে সম্মান প্রদর্শন করে। হয়ত আমাদের মত দেশগুলোতে এভাবেই চিন্হিত হয় সমাজের উঁচুনিচু, তৈরি হয় মানুষে মানুষে ভেদাভেদ। সমাজে এভাবেই লোপ পায় মানুষের বিবেক, বুদ্ধি, এবং নীতিবোধ। হারিয়ে যায়, মানবিকতা। ভোগে সবাই।

শিল্পী জলি

বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে গরু দিয়ে হাল চাষ করা হয়, গাড়ি টানানো হয়। বোবা জানোয়ার পিঠে থকথকে ঘা নিয়ে গাড়ি টানে। রিক্সাচালক দিনভর রিক্সা চালায়। অমানুষিক পরিশ্রম করে খাদ্যের জন্যে। উপায়ও নেই আমাদের, কেননা এখনও আমরা ততটা অগ্রসর হতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে অনেক কিছুই এখনও মেনে নিতে হয়। তাই বলে মানবিকতা একেবারেই ভুলে গেলে চলে কী করে?
আজ যে সুবিধাগুলো নেই সেগুলো হয়তো আগামীতে আসবে, কিন্তু মানুষ অমানুষ হয়ে গেলে তখন আর ভবিষ্যতের আশা থাকে না।

ক’দিন আগে দেখলাম আমেরিকাতে শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে দীপিকা পাডুকোনের মাথায় একজন লোক ছাতা ধরে রাখছে। যেই আমেরিকাতে নিজের কাজ নিজে করাকে অতি শ্রদ্ধার চোখে দেখতে শেখানো হয়, প্রেসিডেন্ট ওবামার মেয়েকেও ফ্যাস্টফুডের দোকানে কাজ শেখাতে পাঠানো হয় সেখানে মধ্যবিও পরিবারে জন্ম নেয়া দীপিকাকে আরেকজনকে দিয়ে ছাতা ধরাতে দেখে সত্যিই অবাক হলাম। আমেরিকাতে মানুষ ভাড়া করে ছাতা ধরানোর চেয়ে আরও কমেই ছাতা কেনা যায় যেটা একাই দাঁড়িয়ে থাকবে এবং ওটাই মানবিক এবং সন্মাণজনক।

যাই হোক, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আমেরিকায় এসে ওলটপালট তেমন কিছু করেননি। বরং ইন্ডিয়ার জন্যে সন্মাণ বয়ে এনেছেন–তাঁর অভিনয় এবং কাজের মাধ্যমে।
টাইম ম্যাগাজিন ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামের তালিকায় প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নাম অর্ন্তভুক্ত করেছে। তিনি তাঁর রাইটারকে দিয়ে অভিনেতা/অভিনেত্রীদের রোলকে পরিবর্তন করিয়ে মানবিক করিয়েছেন। যেটা সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি ছিল মুভিতে মেয়েদের শুধু সেক্স অবজেক্ট হিসেবে উপস্হাপন ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্যেই অসম্মানজনক। এতে মেয়েদের যেমন (সেক্স ছাড়া ) মানবিক পরিচয়সহ সব পরিচয় হারিয়ে যায় তেমনি ছেলেরাও সেক্সের চক্করে ধরা খেয়ে মনুষত্ব হারিয়ে ফেলা জীব হিসেবে উপস্হাপিত হয়। অথচ মানুষের জীবন এর চেয়ে আরও বেশী অর্থপূর্ণ আরও বিস্তৃত এবং ছেলেমেয়ে উভয় মিলে ভালো অনেক কিছুই করতে পারে।

সম্প্রতি দেখলাম জয়পুর লিট ফেস্টে মোল্লারা চাপ প্রয়োগ করেছে যেন তসলিমা নাসরীনকে আর কখনও আমন্ত্রণ জানানো না হয়। অতঃপর নানা তর্কবিতর্ক।

এক মোল্লা বললেন, তাঁকে ফিরে যেতে। তিনি ইন্ডিয়ার নন তাই । শ্বশুরবাড়ীতে তাল রেখে না চলতে পারলে মেয়েদের যেমন অবস্হা হয় তার চেয়েও বিব্রতকর অবস্হা তখন তাঁর।

আমাদের দেশের একজন নাগরিক অন্য দেশে এভাবে অপমানিত হতে দেখলে খুবই খারাপ লাগে, অসম্মান এসে কাঁটার মতো বিঁধে গায়ে। অথচ অপারগ– কতটুকুই বা ক্ষমতা আমাদের যে কিছু করি!

সারা বিশ্বেই মেয়েরা কমবেশী বঞ্চিত।
এক শ্রেণীর লোকেরা ধর্মকে কৌশলে ব্যবহার করে মেয়েদের এই বঞ্চনাকে আজীবন টিকিয়ে রাখে। রাষ্ট্র চাইলে একটু একটু করে সমাজে অনেক পরিবর্তনই আনতে পারে যেটা সবার জন্যেই কল্যাণকর। কিন্তু ক্ষমতাধররা সব বুঝেও একটুও ঝুঁকি নিতে চান না–যদি ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যায়! অথচ জীবনে একবার ঝুঁকি নিলেই বোঝা যায় সঠিক কাজে মানুষের লাভ ছাড়া ক্ষতি তেমন হয় না। মানুষ অন্যায়ের কাছে যত বেশী আত্মসমর্পণ করে অন্যায় ততই তাকে চেপে ধরে। আর একটু একটু করে এক সময় পুরোপুরিই ডুবে যেতে হয়।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.