নারী

তাহমিনা সালেহ: দরজার কলিংবেলটা বেজে উঠলো। আমি দরজা খুলে অতিথিকে স্বাগত জানালাম। উনি ঘরে এসে বসলেন।

প্রথমে যে প্রশ্নটা আমাকে করলেন,
– আপনি কি একা থাকেন?
– হ্যাঁ, আমি একাই থাকি।

তাহমিনা সালেহ

একটু যেন ঘোর লাগে — আবার বলেন, এ…কাই থাকেন? আবারও বলি, হ্যাঁ, একাই থাকি। মনে মনে নিঃশব্দে তাকে উত্তর দেই, ‘দোকা’ পাবো কোথায়?

তারপর আমাকে আরও নানা প্রশ্ন করেন — কে বাজার করে, অন্যান্য আরও নানা কাজ কীভাবে সম্পন্ন করেন। আমি বলি, সংসারের নানা কাজ, যেমন বাজার করা, ব্যাংকে যাওয়া, সংসারের নানাবিধ খুঁটিনাটি কাজ যেমন বালব্ কেনা, দুধ কেনা, কিছু নষ্ট হলে মেরামত করানো, এমনকি প্লেনের টিকেট কেনা, সব আমিই করি। ছেলেমেয়েরা বিদেশ থেকে আসে যখন, তাদেরও যথাসাধ্য আদর-আপ্যায়ন করি।

আমি সব প্রশ্নের উত্তর সাধ্যমত দিলেও আমার প্রশ্নকর্তার কিন্তু উত্তর পাওয়া হয় না। আমি যথেষ্ট বয়স্ক একজন ব্যক্তি, তায় আবার মেয়ে মানুষ। কি করে আমার পক্ষে দীর্ঘ এতগুলি বছর একা পার করা গেলো!

চারিদিকে এতো উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও সবাই কেন বুঝতে চায় না মেয়েরা কত শক্তিময়ী। একটু সহমর্মিতার দৃষ্টি নিয়ে সবাই যদি নারীদের দেখেন তবে তারা অনায়াসেই দেখতে পেতেন যে — নারী নির্মাণ কার্য্যে অংশগ্রহণ করেন, রাস্তার কোনে পিঠা বানান, ফসল তোলায় পুরুষের সঙ্গে সমান তালে চলেন, তারা সমাজে-সংসারে কতটা অবদান রাখেন! অনেক সময় পেটে সন্তান বহন করেই কাজগুলো করেন নারী।

সুযোগ পেলেই অনেকেই মেয়েদের অবহেলা আর অপমান করেন, যেন নারীরা বুদ্ধিহীন প্রাণী। এরকম তারা কেন করেন? আমি মনে করি যারা এরকম করেন, তারাই অতি নির্বোধ। নারীরাই পৃথিবীর আদ্যশক্তি। তাদের উপর ভর করেই সমস্ত সংসার চলছে।

আজ জীবনের প্রান্তসীমায় পৌঁছেছি। পেছনে ফিরে যখন তাকাই, দেখি, প্রাণপণে সমস্ত শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে সংসারটা দাঁড় করিয়েছি, বুদ্ধিমান-সুন্দর ছেলেমেয়েদের বড় করেছি, তাদের লেখাপড়া শিখিয়েছি, ছবির মতো সাজানো একটা জীবন তৈরি করেছিলাম।

আজ আমার দায় কর্তব্য শেষ। নদীতীরে বসে আছি। সোনার নৌকাটা আমারই সোনার ধানে পূর্ণ। একটু পরেই নৌকাটা খেয়াঘাট ছেড়ে চলে যাবে। আমার জীবনেও ‘আষাঢ় সন্ধ্যা’ ঘনিয়ে এসেছে। জানি না রজনী কেমন যাবে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.