গ্যাপ-ওয়াল মার্টের উদ্যোগ ‘ধোঁকাবাজি’ ছাড়া কিছু নয়

garmentsউইমেন চ্যাপ্টার: বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে নিরাপত্তার মান বাড়াতে গ্যাপ এবং ওয়াল মার্টসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার ১৭টি নামকরা কোম্পানি মিলে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার তীব্র সমালোচনা করেছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা। তারা ‘বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি ইনিশিয়েটিভ’ নামের এই উদ্যোগকে ‘ধোঁকাবাজি’ বলে বর্ণনা করেছে।

এদিকে বাংলাদেশ সরকার এবং বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেও শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, এই পরিকল্পনায় তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই।

বিবিসি বাংলার এক খবরে একথা জানিয়ে বলা হয়েছে, বুধবার ওই ১৭টি কোম্পানি তাদের এ সংক্রান্ত পাঁচ বছর মেয়াদী এই পরিকল্পনা ঘোষণা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের যেসব কারখানা তাদের জন্য পোশাক তৈরি করে, তার প্রত্যেকটি কারখানা পরিদর্শন করা হবে।

কিন্তু শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে কাজ করছে এরকম একটি বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট বলেছে, গ্যাপ এবং ওয়ালমার্টের এই পরিকল্পনা একটা ‘ধোঁকাবাজি’ ছাড়া আর কিছু নয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কারখানাগুলোকে নিরাপদ করা সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো যখন বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি স্বতন্ত্র চুক্তিতে উপনীত হলেও যুক্তরাষ্ট্র তখন তা থেকে বিরত ছিল। এমনকি অস্বীকৃতিও জানিয়েছিল তাতে সই করতে।

তারা জানিয়েছিল, বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা একটি পৃথক পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বুধবার তারা সেই পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোকে নিরাপদ করতে তারা এগুলো পরিদর্শন করবে, পাশাপাশি কারখানার কর্মী ও ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। কারখানা ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় মানোন্নয়নের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। আর কারখানাগুলোতে ‘শ্রমিকদের কমিটি’র মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা হবে।

কিন্তু ওয়ার অন ওয়ান্টের একজন মুখপাত্র মারে ওর্দি বলেছেন, এই পরিকল্পনায় অনেক ধরনের ত্রুটি রয়েছে। এরা যে কারখানাগুলো পরিদর্শন করবে, সেই রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করবে না। পরিকল্পনাটি মেনে চলার কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। কাজেই এখানে কোন নিশ্চয়তা নেই যে অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকান কোম্পানিগুলোর পরিকল্পনায় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের কোন স্বীকৃতি নেই। তারা শ্রমিকদের কমিটির কথা বলেছেন, কিন্তু তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।

অন্যদিকে শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে তৎপর আরেকটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল বলেছে, এটি বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তার নামে আরেকটি নখদন্তহীন কর্পোরেট পরিকল্পনা।

এদিকে বিবিসির অপর এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এবং পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আমেরিকান কোম্পানিগুলোর পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে এই পরিকল্পনায় তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব না রাখায় এর সমালোচনা করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলো।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ১৭টি কোম্পানি বাংলাদেশের পোশাক কারখানারগুলোর নিরাপত্তা মান উন্নয়নে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার যে প্রস্তাব রেখেছে তাকে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন ।

বিজিএমইএর সহ সভাপতি শহীদুল আজিম বিবিসিকে বলেন, ‘কারখানা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে তারা মাত্র চার থেকে পাঁচ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’

বস্ত্র মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, সরকার ছয়শো একর জমির উপর গার্মেন্টস পল্লী তৈরির একটি প্রকল্প নিয়েছে। কিন্তু অর্থ সংকটের কথা তুলে সেখানে কারখানা সরিয়ে নিতে মালিকরা অনীহা দেখাচ্ছিলেন। এখন স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া গেলে, সেটা সহায়ক হবে বলে করেন তিনি।
‘বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ। এত বেশি সুদে ঋণ নিয়ে অনেক মালিক তাঁর কারখানা সরিয়ে নিতে রাজি নন। ফলে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প সুদে ঋণ দেওযার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই।’

তবে এই পুরো প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের কোন প্রতিনিধিত্ব কেন রাখা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমেরিকাতো শ্রমিক অধিকারের কথা অনেক বেশি বলে ,কিন্তু তাদের উদ্যোগে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব কোথায় ?

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.