চিন্তার দৈন্য যখন হার মানায়…..

শিল্পী জলি: আমেরিকাতে বাচ্চাদের স্কুলে কাজ করতে গিয়ে শুরুতে আমাদের দেশীয় ধারা অনুসরণ করে সূত্রমাফিক ‘টু দি পয়েন্টে’ এগুচ্ছি। তারা রংধনু আঁকছে এবং রাঙাচ্ছে, কিন্তু রঙের কোন ঠিক-ঠিকানা নেই, যেই রঙ ইচ্ছে সেই রঙই ব্যবহার করছে– না রাখছে রঙের হিসেব, না রাখছে ব্যবহারের ধরনের হিসেব। তখনই মনে পড়ে গেল, ছোট বেলায় শেখা রংধনুর সূত্রটি- বেনীআসহকলা।

সূত্রটি যখন শেখাবো ভাবছি, তখন সহকর্মী বললো, ওরা যা করতে চায় তাই করতে দাও–এতে ওদের সৃষ্টিশীলতা এবং চিন্তার নানা দিক প্রসারিত হবে। উদ্ভাবনী ক্ষমতার ভিত তৈরি হবে। অতঃপর প্রকৃতি অনুযায়ী একেকজন একেক রকমের হবে।

শিল্পী জলি

আজ যা সত্যি, কাল সেটিরও পরিবর্তন, পরিবর্ধন হতে পারে– সেদিনই অনুধাবন করলাম।

শিখলাম কী করে নিজেকে সংবরণ করতে হয়, ঝুঁকি নিতে হয়, সুদিনের আশায় আনাড়িকেও ফ্রিডম দিতে হয়। চিন্তার ফ্রিডমের অভাবে আমরা কতভাবেই না কতরকম সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। অথচ কত কীই না হতে পারতো–কে জানে !

বাংলাদেশে মানুষের চিন্তার ভিন্নতার অভাবে যুগের পর যুগ ধরে একই ধারার মুভি হচ্ছে। এখনও মুভির শুরু দেখলেই শেষ বলে দেয়া যায়। অথচ আমেরিকাতে নানা বিষয়ের উপর মুভি হয়– কত রকমের ইমাজিনেশন। আমেরিকানদের মুভির শেষ পর্যন্ত দেখেও চিন্তা করে বের করতে হয় আসল ঘটনাটি কী ছিল–আবার দেখে, চিন্তা করে, মাথা খাটায়। ফলে দিনে দিনে তাদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে।

তাই বড় বড় ডিগ্রি না থাকলেও তারা জীবনের যেকোনো সমস্যাই কাটিয়ে উঠতে পারে, সহজে ভীত হয় না, আবার দ্রুততার সাথে সমাধানও করে ফেলে। ‘পারবো না’ বলে তাদের ডায়েরিতে আর তেমন কিছু স্হান পায় না।

কাল আতিক বললো , একটি হরর গল্প লিখবো।

বললাম, ভালো।

অতঃপর গল্পটির প্লট শোনালো। শুনি আর অবাক হই। জিজ্ঞ্যেস করি, কারও আইডিয়া চুরি করোনি তো?

বলে, কেন চুরি করবো–আমারই আইডিয়া!

এখন সে ধৈর্য্য ধরে গল্পটি লিখলে ভালো।

তবে হুমকি দিয়ে রেখেছি, ‘না লিখলে, গল্পের প্লটটি চুরি হয়ে যাবে!’

বিরক্তি নিয়ে বলে, হায়রে!

এবার নিজেরই ইচ্ছে ছিল একটি বই ছাপাবার। বেশ কিছু লেখাও ছিল। শুধু একটু এডিট করতে হতো। সময় হয়নি। আর যখন এডিট করবো বলে মন ঠিক করলাম, তখনই ল্যাপটপটি নষ্ট হয়ে গেল। জীবনে হয়তো কোন কিছুরই গ্যারান্টি থাকে না।

সেবার নিউইয়র্কে গিয়েও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে যাইনি।

চাপাচাপিতে বলেছিলাম, পরের বার এসে ঠিক দেখবো–ওয়ার্ল্ড ট্রেড তো আর কোথাও চলে যাচ্ছে না!

সাতদিন যেতেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

অনেকেই বিয়ে হতে না হতেই ভাবে বউ এবার সারাজীবনের জন্যে ঘাড়ে চেপে বসেছে। অতঃপর কথায় কথায় মুখ ঝাম্টা, বাপ-মা তুলে খোঁটাখাটিসহ ক্ষণে ক্ষণে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবার হুমকি, গালাগাল, চড়- লাথি-হুমকি…।

বউ তাকিয়ে তাকিয়ে তামাশা দেখে, আর মনে মনে হাসে। কখনও হয়তো ভাবে কোটি লোকের ভিড়ে শুধু একজনই কি শাহেন শাহ!

অতঃপর একদিন …

ঘর আছে, বাড়ি আছে, বাঁধন নেই–বউ হাওয়া।

তখন বেশির ভাগই চড়কির মতো ঘুরে, আর কপাল থাপড়ায়!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.