নববর্ষের রাতে গারো তরুণী ধর্ষণ: ফূর্তির কী নমুনা!

শান্তা মারিয়া: নববর্ষের রাত বলে কথা। এই রাতে আনন্দ ফূর্তি না হলে কি চলে! কেমন সেই ফূর্তি? সেই ফূর্তি হলো ধর্ষণের মতো একটি গুরুতর অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ঘটেছে এই পৈশাচিক ঘটনা।

এক গারো মেয়েকে ধর্ষণ ও গুরুতর আঘাত করে নববর্ষ উদযাপন করেছে এলাকার বখাটে যুবক রমজান, গিয়াসউদ্দিন ও আরো কয়েকজন। ৩১ ডিসেম্বর রাতে প্রতিবছরের মতো গোবরাকুড়া গ্রামে গারো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কীর্তন গানের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সদ্য নবম শ্রেণিতে ওঠা মেয়েটিকে ফোন করে রমিজ ও গিয়াস। তারা এলাকার বড়ভাই পরিচয় দিয়ে মেয়েটিকে ওই অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবে বলে। সরল বিশ্বাসে মেয়েটি ঘরের বাইরে পা দিলে তাকে মুখ চাপা দিয়ে ধরে নিযে যাওয়া হয় গ্রামের পাশে দাবুয়া নদীর তীরে। সেখানেই গণধর্ষণের শিকার হয় সে। তার মাথায়ও গুরুতর আঘাত করা হয়্।

মেয়েটি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মাতৃতান্ত্রিক গারো সমাজে (মান্দি সমাজ) ধর্ষণের ধারণাটি একসময় অপরিচিত ছিল। কিন্তু প্রতিবেশি বাঙালি পুরুষরা তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে ধর্ষণ কী। কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ধর্ষণ হলো বিকৃত আনন্দলাভের সেরা উপায়্। এই সব বিকৃত পুরুষদের চোখে নারীর কোনো মানবিক সত্ত্বা নেই্। নারী হলো শুধুই যৌনবস্তু। এবং এমন যৌনবস্তু যে, যার মত প্রকাশেরও অধিকার নেই। বিকৃত পুরুষ চাইলেই তাকে ধর্ষণ করতে পারে। করতে পারে অন্য ধরনের যে কোনো নির্যাতন।

এই ধর্ষণকারী বখাটেরা শাস্তি পাবে নাকি আইনের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে যাবে তা জানি না। অতীত রেকর্ড খুব একটা সুখপ্রদ নয় আমাদের।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা চরম প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে। প্রথমত নারী হওয়ার কারণে, দ্বিতীয়ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার কারণে তারা সবদিক থেকে ভঙ্গুর অবস্থায়। যখন তখন আদিবাসীদের ভূমি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে, আবার সুযোগ পেলেই ধর্ষণ করা হচ্ছে আদিবাসী নারীদের।  ২০১৬ সালের শেষদিকেও খোদ রাজধানীতে এক গারো নারী গণধর্ষণের শিকার হয়। এর আগে মাইক্রোবাসে ধর্ষণের শিকার হয় আরেক গারো নারী।

আদিবাসীদের প্রতি এই যে অপরাধ দিনের পর দিন করা হচ্ছে, এই যে তাদের ভূমি দখল করা হচ্ছে, তাদের নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, এর মাশুল কি কখনও দেশকে দিতে হবে না? যে ভূমিতে তাদের রক্ত ঝরছে, ঝরছে চোখের জল, সেই ভূমিপুত্র-কন্যাদের মধ্যে জমা হচ্ছে ক্ষোভের বারুদ। যেদিন এই পুঞ্জীভূত বারুদে বিস্ফোরণ ঘটবে সেদিন কী হবে?

শান্তা মারিয়া

পুলিশ প্রশাসন, কেন নিরব দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে আছে?এই সব নরপিশাচ বখাটেদের, ধর্ষকদের, ভয়ংকর অপরাধীদের গ্রেপ্তার কি খুব কঠিন কাজ? নাকি একটি গারো মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তাতে আর এমন কী হলো বলে অন্য কোনো গুরুতর কাজে তারা ব্যস্ত রয়েছে?

‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’ এ কেবল মুখের কথা নয়। সত্যিই ঋণশোধের সময় এসেছে। প্রতিটি পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রামে এখন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলা দরকার। দরকার আদিবাসী নির্যাতন প্রতিরোধ বাহিনীও। এইসব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কাজ হবে ধর্ষকদের ধরে নপুংসক করে দেওয়া। নির্যাতক, দখলদারদেরও কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

নতুন বছর নারীর জন্য কতখানি নিরাপদ হবে তাতো হালুয়াঘাটের বদমাশদের ফূর্তির নমুনা থেকেই বোঝা গেছে। এখন শুরু হোক নির্যাতকদের কঠোর শাস্তি দিয়ে নিপীড়িত মানুষের ফূর্তি। হালুয়াঘাটের ঘটনার বিচার চাই। বিচার চাই সব ধর্ষণ, নির্যাতনের। বিচার কি আমরা পাবো? প্রশ্নটি জাতির বিবেকের কাছেই রইলো।

লেখক ও সাংবাদিক

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.