আমার দৃষ্টিতে নারী স্বাধীনতা

বদরুন নাহার: আমি মনে করি আমি একজন স্বাধীন নারী। নারী স্বাধীনতার অর্থ আমার কাছে অন্যান্য অনেকের চেয়ে একটু আলাদা। এর অন্যতম প্রধান কয়টা কারণ হলো:

• আমার দর্শন মানবতাবাদ
• আমি পুরুষ-বিদ্বেষী না
• আমি আমার চিন্তা, নীতি, আদর্শ নিয়ে চলছি
• আমি আমার নিজস্ব পরিচয় নিয়ে চলছি
• আমার বুদ্ধি, মেধা, চিন্তা, ভাবনা, নীতি, আদর্শ, ভালবাসার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে

আমার দর্শন মানবতাবাদ

প্রগতিশীল পরিবারে জন্ম হওয়ায় আমি অনেক ভাগ্যবানদের কাতারে পড়ে গেছি এটাতো বলারই অপেক্ষা রাখে না। ভাইবোনরা বড় হয়েছি একই রকম ভাবে। বাইরের সমাজে মেয়েদের নিয়ে যা কিছু প্রতিকূল পরিবেশ ছিল/আছে তা মোকাবিলা করছে আমার পরিবার, এখন আমরাও করছি। তবে কারো উপর বিদ্বেষ নিয়ে বড় হইনি। ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে ভালবাসতে শিখেছি। মানবতাকে নিয়ে চলার চেষ্টা করছি সর্বক্ষণ।

আমি পুরুষ-বিদ্বেষী না

বদরুন নাহার পলী

যে সব পুরুষ নারীদের মর্যাদা করেন না তাদেরকেও আমি প্রতিপক্ষ মনে করি না। তবে ওদের এই চিন্তার সাথে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করি। সময় সুযোগ হলে বলার বা বোঝানোর চেষ্টা করি নারী হচ্ছে সর্বপ্রথম মানুষ তারপর নারী। হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা নারীদের প্রতি পুরুষের এই মনোভাব একদিন দুইদিনে বদলে যাবে তা ভাবি না। তবে আশা করি পরিবর্তন হবে এবং হচ্ছেও। যারা নিজেদের এই ভাবনাকে পরিবর্তন করেছেন তাদের জানাই সাধুবাদ। যারা এখনও করেননি তাদের প্রতি থাকলো আমার আন্তরিক আহবান।

আমি আমার চিন্তা, নীতি, আদর্শ নিয়ে চলছি

বাবা-মা’র সংসার ছেড়ে নিজের সংসারে আসার পর আমি আবার ভাগ্যবান হয়েছি। টাকা-পয়সা বা ধন-দৌলতের কথা কিন্তু নয়। যে ভাবনা, যে নীতি, যে আদর্শ নিয়ে বড় হয়েছি সেগুলো নিয়ে আজও পর্যন্ত মাথা উঁচু করে চলতে পারছি। এমন কি আমার রাজনৈতিক দর্শনও প্রচণ্ডভাবে মর্যাদা পায়।

আমি আমার নিজস্ব পরিচয় নিয়ে চলছি

আমি গর্ববোধ করি বাবা-মা’র পরিচয়ে পরিচিত হতে। তেমনি গর্ববোধ করি ভাইবোনের, হাসব্যান্ডের এবং ছেলের পরিচয়েও পরিচিত হতে। তবে সবচেয়ে বেশী গর্ববোধ করি আমার নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে। ওদের সহায়তায় এ আমার নিজস্ব অর্জন। ওদের কাছে সেজন্য আমি ঋণী।

আমার বুদ্ধি, মেধা, চিন্তা, ভাবনা, নীতি, আদর্শ, ভালবাসার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে

– উপরের সবগুলি কারণের ফলাফল হচ্ছে শেষের এই কথাগুলি। বাবার বাড়ীতে আমরা সবাই সমান ভাবে বড় হয়েছি, যেজন্য নিজেদের চিন্তা ভাবনার পার্থক্য খুব কম।

– কাজের ক্ষেত্রে দেশেও সম্মানীত হয়েছি। যে কোম্পানীতে সাড়ে চৌদ্দ বছর চাকরী করেছি তার মালিকসহ অনেক সহকর্মীর সাথে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় আজও সেখানে কাজ করার আহবান পাই।

– এখানকার কাজের ক্ষেত্রেও তাই, আমার কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে আমার যোগ্যতানুযায়ী।

– নিজের সংসারের ক্ষেত্রে আমি যা প্রস্তাব করি তার মূল্যায়নও যথাযথভাবে করা হয়। সব মতামত গৃহীত হয় তা কিন্তু নয়। সবাই মিলে আলাপ আলোচনা করে ভাল-মন্দ বিচার করে তবেই সিদ্ধান্ত নিই। বেশীর ভাগ সময়েই দেখা যায় আমার সিদ্ধান্তই গৃহীত হচ্ছে। সিদ্ধান্তগুলির উচ্চ মূল্যায়ন হতে দেখে উৎসাহিতও হই অনেক। অফিসের বসই হোক আর বাসার বসই হোক, তাঁরা যখন বলেন ‘It was a smart and intelligent decision’, তখন কি মনে হয় না আমার সিদ্ধান্তের সঠিক মূল্যায়ন হলো?

– খুব জটিল আর বড় ধরনের কোন সমস্যা সমাধানের পর ছেলে যখন বলে ‘Ma, you handled the situation perfectly. It was done brilliantly, nobody could do better than you!’ মানুষ হিসেবে এর চেয়ে বেশী চাওয়ার বা পাওয়ার আছে কি?

একজন নারী হিসেবে এই হলো আমার কাছে নারী স্বাধীনতা।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.