পর্নোগ্রাফি ও আমাদের অপ্রাকৃত জীবনাচরণ

কাজল দাস: পর্নোগ্রাফি একটা স্লো পয়জন। এটা বিষক্রিয়ার মতো শরীরের প্রতিটা অনুভূতির স্তরে পৌঁছে যায়। এটা তখন স্বাভাবিক যৌনক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। পর্নোগ্রাফিতে অভ্যস্ত একজন মানুষ একসময় স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার জায়গায় অস্বাভাবিক রকমের ছন্দপতনে ভোগে। সে তখন সুনির্দিষ্ট কোনো নারীর প্রতি বিশেষ আগ্রহ হারিয়ে সব নারীর প্রতি যৌন কাতরতায় ভোগে।

কাজল দাস

পর্নোতে ক্রিয়া করা নারীর মতো সকল নারীকেই তখন সে এটা ভাবতে শুরু করে। একটি পর্নোতে অভিনয় করা নারী খুব আর্টিকুলেট হয়ে যৌনক্রিয়া করে, সে সুন্দরী হয়, খুব সাজে, ফিগার টান টান করে, কৃত্রিমভাবে স্তনকে সাজায়, এভাবে সে পর্নোতে যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়, আর এটা দেখে একজন দর্শক নিজের মধ্যে যৌনতাকে খুব কৃত্রিমভাবে ইন্টারনালাইজ করে। এই বিষয় বাস্তবে একজন মানুষের মধ্যে যখন ক্রিয়া করে তখন সে তার সেক্স পার্টনারকে সেভাবে দেখতে চায়।

কিন্তু তার বাস্তবের সেক্স পার্টনার আর পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করা নারী এক নয়। এই দুইয়ের ক্রিয়া ব্যক্তির যৌন জগতে দ্বন্দ্ব তৈরি করে। তার মাথায় থাকে পর্নোর নারী, কিন্তু বাস্তবে সে ক্রিয়া করছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা নারীর সাথে। এই নারীর শরীর কিন্তু পর্নোতে আসক্ত একজন পুরুষের আশেপাশে থাকা যেমন – মা, বোন, আত্মীয়া, প্রেমিকা এদের থেকে ভিন্ন। একজন মানুষের শরীর সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে ধারণা লাভ হয় কাছের মানুষের শরীর থেকে।

ছেলের ক্ষেত্রে মা বা অন্যান্য কাছের নারী আবার নারীর ক্ষেত্রে পিতা বা কাছের পুরুষ। এখন এই যে কাছের নারী তাদের সবার শরীর ভিন্ন। গায়ের রং ভিন্ন। শরীরে আবেদনও ভিন্ন। তাদের স্তনের আকৃতি বিসদৃশ। তাদের প্রতিটি বিষয়ই ভিন্ন। কিন্তু পর্নোতে অভিনয় করা কোন নারীই অভিন্ন নয়। এরা সবাই তীব্র আবেদনময়ী, উত্থুংগ স্তনী, বলিষ্ঠ বাহুসম্পন্না, স্ফীত নিতম্বের অধিকারী। তাদেরকে প্রদর্শণের জন্য এইভাবে ক্যামেরার সামনে হাজির করা হয়।

কিন্তু আমাদের পাশে থাকা নারীরা ক্যামেরায় প্রদর্শিত হবার জন্য শরীর নিয়ে থাকে না। আমরা ক্রিয়া করি তার সাথে। এই নারী পর্ণোর নারীর মতো না, অথচ আমরা তাকে সেভাবে কামনা করছি, যা আমাদের সম্পর্কের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠা অনুভূতি ও সেই জায়গা থেকে যৌনতায় যাওয়ার জায়গাকে ফারাক করে তুলছে।

এই ফারাক বাস্তবতাকে ঘিরে গড়ে যৌন সম্পর্কের দুজন মানুষকে অস্বাভাবিকতার জন্ম দেয়। আবার দেখেন পর্নোতে অভিনয় করা নারীর যৌনক্রিয়ার সময়ের কোনো যন্ত্রণা আমরা দেখি না, তার পিরিয়ডের সাথে এর সম্পর্ক দেখি না, সে কী ধরনের প্যাটার্নে যৌনক্রিয়ায় আগ্রহী, সেটা দেখি না, একাধিকবার ক্রিয়াতে সে কী যন্ত্রনা ফিল করছে, সেটা দেখি না, অথচ বাস্তবের নারীর ক্ষেত্রে উপরের প্রতিটা বিষয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। আমাদেরকে এইসব নিয়েই ক্রিয়া করতে হয়।

সেজন্য প্রতিটি নারী-পুরুষের সম্পর্ক আইডেন্টিক্যাল, এর উপরেই আমাদের যৌন ধারণা ও সম্পর্ক গড়ে উঠা উচিত। পর্নো কিংবা অস্বাভাবিক উপায় থেকে না হওয়া বেটার। সমাজের নারী-পুরুষের সম্পর্কের জায়গাটা আরও উদার করার জন্য আমাদের কাজ করা দরকার। নারী -পুরুষের যৌন সম্পর্কের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব বাড়াতে সবার জায়গা থেকে এগিয়ে আসা দরকার।

শেয়ার করুন: