নাহিদ খান: আজকাল দেখি পরিচিত, অর্ধপরিচিত অনেক মেয়ে লিখছেন, অনেকেই খুব ভালো লিখছেন। মন ভরে যায় লেখাগুলো পড়ে। কিন্তু আমি ক’দিন ধরেই খেয়াল করে দেখলাম লেখাগুলোর একটা প্যাটার্ন আছে। প্রায় সব লেখা অনেকটা এরকম- একটা মেয়ে যে অন্য দশজনের মতো না, স্রোতের প্রতিকূলে চলে, নিজে সিদ্ধান্ত নেয়, অনেক স্বপ্ন দেখে। তারপর দুম করে সে একজন কাউকে খুব পছন্দ করে বসে। তারপর একসময় আবিষ্কার করে সে আসলে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে, কিন্তু তৃতোদিনে একটু দেরি হয়ে গেছে, কারণ সে প্রেগন্যান্ট।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গল্প এইখানে আন্দাজ করা যায়। স্বামী বা প্রেমিক বলছে এ্যাবরশন করতে, মেয়েটা রাজি হয় না। সে এক পৃথিবী বাঁধা ডিঙিয়ে সন্তানের জন্ম দেয়, প্রতিপালন করে, একলা লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়, কিন্তু নিজেকে খুব সফল ভাবে।
বাস্তবে আমি দেখি গল্প কিন্তু অন্যরকম ও হয়। আমার পরিচিত অন্তত আধা ডজন নারী আছেন যারা জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে অপরিকল্পিত, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ করে দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়েছেন। তাদের স্বামীরা, প্রেমিকেরা দিব্যি বলেছেন আহা থাকুক না বাচ্চাটা। এদেশের পুরুষেরা সন্তান লালনপালনের তেমন কিছুই করেন না, সন্তান জন্মদানে তাদের ব্যপক আগ্রহ। আর বেশিরভাগ পুরুষ জানে, সন্তান মানেই বউয়ের পাখা একটু গুটিয়ে যাওয়া, সেটা কে না চায়!
আমি একজনকে জানি যে প্রতারক প্রেমিকের সন্তান জন্ম দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু মাসতিনেক পরে সে সন্তানকে বাবার কাছে রেখে এসেছে। আমি এই মেয়েটিকে একদমই ঘৃণা করতে পারিনা, আমি বরং তাকে বেশ সমীহ করি! আমি আরেকটি মেয়েকে দেখেছি রোকেয়া হলে, অনার্স ফাইনালের সময় যে ছিল আটমাসের প্রেগন্যান্ট। তার রেজাল্ট ভালো হয়নি, মাস্টার্সে তাই মনপ্রাণ ঢেলে পড়েছে। মাস্টার্সের আগে আগে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়লে সে খুব দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় অ্যাবরশনের। তাকেও আমি খারাপ মেয়ে মনে করি না।
এই অন্যরকম গল্পগুলো কেউ লিখুন। মাতৃত্বের জয়গান, নারীত্বের সম্মান ইত্যাদি তো অনেক হলো……