উইমেন চ্যাপ্টার (০৭ জুলাই): প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, সরকারের চার বছরের দু:শাসনের প্রতিবাদ করেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে জনগণ ১৮ দলীয় জোটকে ভোট দিয়েছে। মি. নোমানের এ মন্তব্যের জবাবে সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নয়। তবে ব্যর্থতা বা ত্রুটিগুলো বের করে সংশোধন করলে, জাতীয় নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে বলেই তিনি মন্তব্য করেন।
রোববার ঢাকার বিয়াম মিলনায়তনে বিবিসি’র বাংলাদেশ সংলাপের সংলাপের এই পর্বে আলোচক ছিলেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বিরোধী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শফিউল আলম ভুঁইয়া এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশন এইড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।
অনুষ্ঠানে একজন দর্শক জানতে চান পরপর পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় কি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সরকারের জনপ্রিয়তায় ব্যাপকভাবে ধস নেমেছে?
পাঁচটি সিটি নির্বাচন ক্ষমতাসীন সরকারের পরাজয়ের ইঙ্গিত বহন করে কিনা শাহীন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী বলেন, “রাজনীতির মাঠে জয়-পরাজয় আছেই। এটাকে আমি পরাজয় বলবো না। কারণ, জয়-পরাজয় আল্লাহ ও জনগণের কাছে। তবে সরকারের জন্য বড় একটা সতর্ক বার্তা।
তিনি বলেন, “উদ্বিগ্ন হওয়ার হওয়ার কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। ভুল সংশোধন করতে পারলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনেও জনগণ আওয়ামী লীগ বা মহাজোটকেই আবার নির্বাচিত করবে।”
আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারের চার বছরের দু:শাসনের প্রতিবাদ করে জনগন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকেই ভোট দিয়েছে।
তিনি বলেন, “সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারের পরাজয় হয়েছে। বিরোধী দল জয়ী হয়েছে। দু:শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে জনগণ ১৮-দলীয় জোটকে ভোট দিয়েছে।”
শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলগুলো আওয়ামী লীগের জন্য বড় আঘাত। নির্বাচনের ফলে সরকারের প্রতি জনগণের বিরক্তির বহি:প্রকাশ ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো জনগণ সরকারের প্রতি একটি বার্তা দিয়েছে। আর তা হলো, সরকার যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তার অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেনি।”
ফারাহ কবির মন্তব্য করেন, জনগণ আসলে পারফরমেন্সের বিচার করেছে। তবে আওয়ামী লীগের কৌশলও হতে পারে। কারণ এখানে আস্থার ঘাটতি ছিলো। তারা হয়তো প্রমাণ করতে চাইছে, তাদের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠূ হতে পারে।
র্যাবের গুলিতে আহত লিমন হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার প্রতি নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিচ্ছে কিনা – এমন এক প্রশ্নে অনেক দর্শক লিমনের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার সমালোচনা করেন।
একজন দর্শক বলেন, “যে ছেলেটা সকালে খেলে দুপুরে কি খাবে সেটা এড়াতে বই পড়ে, সেই লিমনকে নিয়ে যে স্ট্যান্টবাজি, সরকার তার পুরষ্কার পেয়ে যাবে।”
জবাবে মন্ত্রী বলেন, লিমনের সঙ্গে সরকারের কোন বিরোধ নেই। তবে মি. নোমান বলেন, সরকারি সংস্থা অর্থাৎ সরকারই লিমনের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দুর্গ গাজীপুরে পতনের পর প্রথম দুর্গ গোপালগঞ্জে পতন হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবারে শাজাহান খান বলেন, “বিএনপি সরকারে থাকাকালীন সময়ে চট্টগ্রামে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হেরেছিল। আমি এটাকে পতন বলবো না। বরং সংশোধন করার সুযোগ।”
নোমান বলেন, “জনগণ যে নীরব বিপ্লব ঘটাচ্ছে, তাতে মনে হয়, সরকারের সব দুর্গে পচন ধরেছে।”
জাতীয় পার্টিকে অবমূল্যায়ন করা কি পরাজয়ের কারণ, সিরাজুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে নোমান বলেন, “এই পরাজয়ের পেছনে জাতীয় পার্টির তেমন কোনো ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, জনগণই এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এরশাদ তো এই সরকারেরই একটা অংশ।”
নৌমন্ত্রী বলেন, “অবমূল্যায়ন নয়, হয়ত একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে।” সংলাপ সঞ্চালনা করেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আকবর হোসেন।