‘কিরণমালা’ ও তার দর্শক

badrun-nahar
বদরুন নাহার পলী

বদরুন নাহার পলী: (সবার জন্য এই কথাগুলো প্রযোজ্য নয়) মাঝে মাঝেই কিরণমালা সিরিয়াল দেখা নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা কিছু স্ট্যাটাস দেখি। কোন সময় কথায় বাণ মেরে, কোন কোন সময় ব্যঙ্গচিত্র বা কার্টুনের মাধ্যমে। বেশ কয়েকবার কয়েকজনের স্ট্যাটাসে কমেন্ট করার পর একটা দাঁত কেলানো বা হাসির ইমো দিয়ে আমার কথাটাকে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ভাবলাম আজ একটা স্ট্যাটাস দিই এর উপর। মতামত প্রকাশ করার অধিকার সবার আছে। সবার মতামত একই রকম হবে তা কখনও আশাও করি না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যা আমি আশা করি তা হলো, স্ট্যাটাসই হোক আর কমেন্টই হোক তা যেন অমানবিক, অশালীন কিংবা আক্রমণাত্মক না হয়। আমি ধরেই নিয়েছি বা আশা করি যারা আমার ফেসবুক বন্ধু, তারা সম্পূর্ণ না হলেও আমার চিন্তার কাছাকাছি মানুষ। নিদেনপক্ষে অমানবিক না। কারো কারো কিছু অমানবিক বা অশালীন স্ট্যাটাস দেখার পর মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেছি এটা তার মতামত কিনা। উত্তর জানার পর আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ আমার বন্ধু কেমন হবে এটা নির্বাচন করা আমার অধিকার।

যাই হোক কিরণমালায় আসি। এর কাহিনী কী জানি না, এটা ভারতীয় চ্যানেলে প্রচার করা একটা সিরিয়াল শুধু এটুকু জানি। হয়তো ফুলানো ফাঁপানো অনেক কুটিল আর ষড়যন্ত্রে ভরা এই কাহিনীর চরিত্রগুলি। যারা এই কিরণমালা দেখা পছন্দ করেন না তাদের কারণটা যদি হয় ফালতু গাঁজাখুরি কাহিনী ইত্যাদি, তর্ক করছি না। হয়তো আমিও পছন্দ করতাম না। রুচি বা পছন্দ প্রত্যেকের নিজস্ব।

এখন আসি কারা দেখে এই সিরিয়ালটা বা এমন সিরিয়ালগুলি। আমার জানা মতে, বেশীরভাগ দর্শকই বাড়ির গৃহিনী, সংসারের অন্যান্য বয়স্ক বা অল্প বয়স্ক মহিলা আর গৃহকর্মীরা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যাদের জীবন বাড়ীর চারদেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যাদের সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয় সংসার আর রান্নাঘরের বিভিন্ন কাজে, বাইরের দুনিয়া বা ভার্চুয়াল দুনিয়ার সাথে কোন সংযোগ নেই। দিনের পর দিন মাসের পর মাস ক্লান্তিহীনভাবে একই কাজ করে যাচ্ছে। সংসার নামক জেলখানায় ওরা বন্দী। বিনোদন কী জিনিস তারা জানে না। শুধু জানে এই কিরণমালার মত দুয়েকটা সিরিয়াল দেখলে মনটা একটু ভাল লাগে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষ হয়ে যায় বা কমে যায়।

যারা এই নিয়ে সমালোচনা করেন তারা কি কখনও ভেবে দেখেছেন ওদের কথা? সংসারের কাজ, ধর্ম কর্ম সবকিছু করার পরও ওদের একটা মন আছে যার কিছু খোরাক দরকার। আপনার তো ফেসবুক আছে, ২৪ ঘন্টায় ৪৮ বার প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করে নিজের বিনোদন বজায় রাখেন; নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কথা ফেসবুকের মাছ বাজারে বলতে কোন দ্বিধা করেন না; কেউ কেউ পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটে লাইক দিতেও কার্পণ্য করেন না। যারা কিরণমালা দেখেন সেই দর্শকরদেরই শুধু রুচিহীন মনে হয়; অথবা মনে হয় ওরা ফালতু সময় নষ্ট করছে?

মানুষকে মানুষ ভাবার চেষ্টা করুন। কিরণমালা দেখার ওই সময়টা ওদের জন্য বরাদ্দ করুন। অল্প কিছু অসুবিধা হলে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন। ওদের জায়গায় নিজেকে রেখে তারপর উপসংহার টানুন।

শেয়ার করুন: