
বদরুন নাহার পলী: যে নারী শিক্ষক, তার কথা শিরোধার্য; যে নারী ডাক্তার, তার সিদ্ধান্তে চলে চিকিৎসা; সর্বোপরি যে নারী মা (মা হওয়া না হওয়া বা মা হওয়ার জন্য সময় নির্ধারণ অধিকাংশ নারীর সিদ্ধান্তে না হওয়া সত্ত্বেও) যে একটা প্রাণকে নিজের মধ্যে তিল তিল করে লালন-পালন করে জন্ম দেয়, খেয়ে- না খেয়ে সন্তানকে সুরক্ষা করে, তারা যখন নিজের সংসারের সদস্য তখন তাদের মতামতের কোন মূল্য নেই কেন?
মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিতে মায়েদের যে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হয় তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? ওরা তো নিজেদের বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়েই সবকিছু সামাল দেয়। তাহলে সংসারের যেকোনো সিদ্ধান্তে মেয়েদের মতামত নেয়ার ব্যাপারে অনেকেই এতো রক্ষণশীল কেন?
সংসার-সমাজ যদি একটা প্রজেক্ট হয়, তাহলে আমরা সবাই এর টিম মেম্বার। একটা প্রজেক্ট কি একজন দুজনের জন্য সফল হয়? সবারই এতে যার যার সাধ্য আর ক্ষমতা অনুযায়ী অবদান থাকে। কেন আমরা নারীদের এই অবদানকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করে থাকি?
পুরুষরা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। চলার পথের সাথী। যেসব পুরুষ নারীদের দক্ষতা আর পারদর্শিতার ব্যাপারে সন্দিহান, তাদের বলবো নারীদের সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব দিয়ে দেখুন, কতো দক্ষভাবে সেই দায়িত্ব সুসম্পন্ন হয়। আপনাদের এই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে একজন নারী পরিবারে আর সমাজে নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। আপনাদের উদারতা আর প্রগতিশীল মনোভাবই পারে আমাদের সমাজের অবহেলিত অপমানিত নির্যাতিত নারীদেরকে তাদের সঠিক অবস্থানে পৌঁছে দিতে। যেসব পুরুষ মনে করেন, এতে করে নিজেদের আধিপত্য নষ্ট হয়ে যাবে, তাদেরকে বলছি, সংসার কখনও ওয়ানডে ম্যাচ নয় যে, ৫০ ওভারেই তা শেষ হয়ে যাবে। সংসারের ইনিংস অনেকদূর পর্যন্ত প্রলম্বিত। দূরদর্শী চিন্তা করে দেখেন আখেরে লাভ ছাড়া লোকসানের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা!
পরিবার হচ্ছে সমাজ বা রাষ্ট্রের সবচেয়ে ছোট ইউনিট। এখান থেকে যদি শুরু হয় নারীকে মর্যাদা দেয়ার শিক্ষা তা একদিন সমাজকে একটা সুন্দর সহাবস্থানে পৌঁছে দিবে।
তাই, আমাদের পুরুষ সঙ্গী, সাথী, সহযোদ্ধাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, সংসারের সকল সিদ্ধান্তে সবার মতামত নিন, মা-বোন-স্ত্রী-মেয়েসহ সবার।