সাদিয়া নাসরিন: আপনি পুরুষ মানুষ, নারীরে কোপানো আপনি ফরজ এবাদত মনে করেন! শুধু নারী ক্যান, এই সমাজ, পরিবার, ধর্ম, আইন, মহাকাশ, মহাদেশ সবকিছু কোপাইতে পারেন আপনি। সেই যে কোন যুগে বিবি হাওয়া লোভে পইড়া গন্ধম ফল খাইয়া ফেলছিল, তারপর থেইকা যে নারীরে কোপানো শুরু করসেন আইজতক থামেন নাই। ধর্মের নামে, পরিবারের নামে, চরিত্রের নামে, সমাজের নামে, বিজ্ঞানের নামে, সভ্যতার নামে মাইয়াদের কোপাইতেই আছেন।
কখনো চাপাতি দিয়া, কখনো পাত্তর মাইরা, কখনো ফতোয়া দিয়া, কখনো এসিড মাইরা, কখনো আগুনে পোড়াইয়া, কখনো চুল ন্যড়া কইরা… । হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিজাবি-নাহিজাবি, কোপ খাওন কারো মাফ নাই।
দুনিয়া সৃষ্টির পর থেইকা মাইয়া মাইনষেরে কোপানোর ইতিহাস শুরু হইসে। পিতা হইয়া কোপান, স্বামী হইয়া কোপান, সন্তান হইয়া কোপান, সহকর্মি হইয়া কোপান, বন্ধু হইয়া কোপান, শত্রু হইয়া তো কোপাইবেনই। আপনি ক্লিন্টন হইয়া হিলারীরে কোপান, এরশাদ হইয়া রওশনরে কোপান। আপনি তেঁতুল হুজুর হইয়া কোপান, ভাতার হইয়া কোপান। চুলের মুঠি ধইরা কোপান, গালি দিয়া কোপান। বাঁশ দিয়া কোপান, লিঙ্গ দিয়া কোপান। আপনি মাতৃত্বের নাম কইয়া কোপান, সতিত্বের নাম কইয়া কোপান। আপনার রাগ হইলে কোপান, ভাব হইলেও কোপান। প্রেম পাইলেও কোপান, না পাইলেও কোপান।
মাইয়া মানুষ, তারে আপনে কোপাইবেন, তার কী কুনু গ্রামার আছে? আপনে বেশ্যা পাড়া বেড়াইলেও সে কোপ খায়, ঘরে থাকলেও কোপ খায়। মাথা নিচু করলেও কোপ খায়, মাথা সিধা করলেও কোপ খায়। সতী হইলেও কোপ খায়, অ-সতী(!) হইলেও কোপ খায়। ডাইলে লবন বেশী দিলেও কোপ খায়, পানি বেশী দিলেও কোপ খায়। দ্যাশ চালাইলেও কোপ খায়, দ্যাশ ছাড়তে চাইলেও কোপ খায়। হিজাব পরলেও কোপ খায়, খুললেও কোপ খায়। দোলনা থেইকা কবর পর্যন্ত আপনের কোপ খাওনই হইলো গিয়া মাইয়া মাইনষের নিয়তি, তাই না?
মাইয়া মাইনষে আপনের সেবাযত্ন না কইরা বেণী দুলাইয়া স্কুল-কলেজ যায়। যাকগা, কিন্তু দুই পাতা পড়া শিখছে বইলা সে আবার আপনার সমান হইয়া টাকা কামাইবার চায়? আইচ্ছা, তাও না হয় কামাইলো। কিন্তু দুইটা টাকা কামাইসে বইলা সে আপনার চোখে চোখ রাইখা কথা কইবো? এত্তো বড়ো সাহস? দিলেন কোপাইয়া।
আপনার জমি, আপনি যখন খুশি চাষ দিবেন, যখন খুশি ভালবাসবেন, যখন খুশি পাশ ফিরা শুইবেন। মাইয়া মাইনষে এত বাগড়া দ্যায় ক্যান? আপনিই বা এতো সহ্য করবেন ক্যান? আরে, যে মাইয়া মাইনষেরে ফুল দিয়া খুশি করন যায় না, তেল-সাবান দিয়া পোষ মানান যায় না, তারে কোপানো ছাড়া কীইবা করার আছে আপনার? তাই তারে ভাতে কোপান, হাতে কোপান, কামে কোপান। মনের সুখে কোপাইতেসেন জন্ম ইস্তক।

আপনি হইলেন গিয়া পুরুষতন্ত্রের বাদশা। জগতের সকল ধর্ম আপনারে দিসে নারীরে কোপানোর নিরঙ্কুশ অধিকার(?) “পুরুষরা নারীদের অবলম্বন, যেহেতু আল্লাহ তাদের এক শ্রেণীকে অন্য শ্রেণীর উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, এবং যেহেতু তারা তাদের সম্পত্তি থেকে খরচ করে। কাজেই সতীসাধ্বী নারীরা অনুগতা, গোপনীয়তার রক্ষয়ীত্রি, যেমন আল্লাহ রক্ষা করেছেন। আর যে নারীদের ক্ষেত্রে তাদের অবাধ্যতা আশঙ্কা কর, তাদের উপদেশ দাও, আর শয্যায় তাদের একা ফেলে রাখো, আর তাদের প্রহার কর। তারপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে অন্য পথ খুঁজো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ব জ্ঞাতা, মহামহিম। (৪:৩৪)”
খৃষ্টধর্ম কইসে, “মানব জাতির স্বর্গ হইতে পাপ-পঙ্কিল দুনিয়ায় আগমনের জন্যে নারীই দায়ী। কারণ , বিবি হাওয়া (Eve) হইলো শয়তান প্রবেশের দ্বারপথ”।
বৌদ্ধশাস্ত্রের ৫৩৬ নম্বর জাতক, যার নাম কুণাল জাতক। কুণালের মুখে উচ্চারিত হয় নীতি গাথা: “সদা রক্ত-মাংস প্রিয়/কঠোর হৃদয়,পঞ্চায়ুধ, ক্রূরমতি সিংহ দুরাশয়/অতিলোভী, নিত্য প্রতিহিংসাপরায়ণ/বধি অন্যে করে নিজ উদর পূরণ/ স্ত্রীজাতি তেমতি সর্বপাপের আবাস/চরিত্রে তাহাদের কভু করো না বিশ্বাস।” কুণালের মতে, “নারীকে বেশ্যা, কুলটা বললেই সব বলা হয় না, নারী প্রকৃতপক্ষে এর অধিক কিছু।
নারীরা হইলো- উন্মুক্ত মলভাণ্ডের মতো দুর্গন্ধ যুক্ত। বিষমিশ্রিত মদিরার মতো অনিষ্টকারী। কুটিলা সাপের মতো দুই জিহ্বাবিশিষ্ট। রাক্ষসীর ন্যায় সন্তোষহীন। অগ্নির ন্যায় সর্বগ্রাসিনী। বায়ুর ন্যায় যথেচ্ছাগামিনী। বিষবৃক্ষের ন্যায় বিষফল প্রসবিনী”।

সনাতন ধর্মের বেদগ্রন্থে, শুক্ল যজুর্বেদের অন্তর্গত শতপথ ব্রাহ্মণে নারীকে কোপাইতে বলা হইসে এইভাবে, “বজ্র বা লাঠি দিয়ে নারীকে দুর্বল করা উচিৎ, যাতে নিজের দেহ বা সম্পত্তির উপর কোনো অধিকার না থাকতে পারে” (৪/৪/২/১৩)। বৃহদারণ্যকোপনিষদে ঋষি যাজ্ঞবাল্ক্য কইসেন, “স্ত্রী স্বামীর সম্ভোগকামনা চরিতার্থ করতে অসম্মত হলে প্রথমে উপহার দিয়ে স্বামী তাকে ‘কেনবার’ চেষ্টা করবে, তাতেও অসম্মত হলে হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে মেরে তাকে নিজের বশে আনবে” (৬/৪/৭, ১/৯/২/১৪)।
আপনার মনীষীরা কইয়া দিসে, নারী শৈশবে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বার্ধ্যকে পুত্রের কোপ খাইব’। আপনার রচিত শাস্ত্র নারীরে কোপানোর সমস্ত বন্দোবস্ত কইরা দিসে আপনারে। এ ব্যাপারে যাতে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ না থাকে সেজন্যে মনুশাস্ত্রে সুস্পষ্ট বিধান জুড়ে দেয়া হয়েছে- ‘নাস্তি স্ত্রীণাং ক্রিয়া মন্ত্রৈরিতি ধর্মে ব্যবস্থিতিঃ। নিরিন্দ্রিয়া হ্যমন্ত্রাশ্চ স্ত্রিয়োহনৃতমিতি স্থিতিঃ।।’ স্ত্রীলোকদের মন্ত্রপাঠপূর্বক জাতকর্মাদি কোনও ক্রিয়া করার অধিকার নাই; এই হলো ধর্মব্যবস্থা। স্মৃতি বা বেদাদি ধর্মশাস্ত্রে এবং কোনও মন্ত্রেও এদের অধিকার নেই; এজন্য এরা মিথ্যা বা অপদার্থ (১৮/৯)” “নারীদের মৃত্যুর পর তাদের মৃতদেহ সৎকারের সময় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে কিছু পাঠ করা যাবে না” (মনুসংহিতা ২:৬৬)।
আর কী? যান, আপনার চাপাতিতে তো ধর্ম আর শাস্ত্রের ধার দেওয়াই আছে! আপনি পুরুষ, আপনি “শুভ”। আপনার বানানো ধর্ম কইসে, নারী ‘অশুভ’। নারী শয়তানের ফাঁদ, নারী দোজকের কাঠ, নারী দেখলেই পুরুষের ধ্যান নষ্ট হয়। নারীর কারণে স্বর্গ থেকে পতন হইসে পুরুষের। আর নারী তো আপনার পাঁজরের বাঁকা হাড় থেইকা তৈয়ার হইসেই, তারে দুইবেলা কোপাইয়া সিধা করা তো আপনারই দায়িত্ব। আহারে, সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়া আপনার এক্কেরে নাভিশ্বাস উইঠা যাইতেসে। খালি কোপাইতেসেন। আপনে কোপাইসেন, আপনার বাপে কোপাইসে, দাদায় কোপাইসে, তার দাদায় কোপাইসে…।
তয় একটু সামলে, ভাইসাব। এলা থামেন। আমার দাদী, তার দাদী, তার দাদী সকলেই আপনার কোপ খাইয়াই বেহেস্ত নিশ্চিত করসে। কিন্তু তাই বইলা আমিও পইড়া পইড়া আপনার কোপ খামু, সেইদিন শেষ।
শেষ মানে, শেষ। অহন মাইয়াগো মাথা-মুথা নষ্ট। কখন যে তারা উলটা ঘুইরা দাঁড়াইয়া কোপান শুরু কইরে দেয়। তাই কইসিলাম কি, যেইদিন মাইয়া মাইনষের কোপানো শুরু হইবো, সেইদিন লুঙ্গির কাছাটা ঠিকমতো গিট্টু দিয়েন। দৌড়ানোর সময় পাইবেন না কিনা!
Thanks.
Lot of tthanks.expecting more writing on this issuses.
Lot of thanks. Expecting more witing on this issues.
Lot of thanks, expecting more writing on this issues.
You have quoted from all religious scriptures, but you have willfully avoided quoting from Quran and Hadith. This is your professional dishonesty.
অসাধারণ ! এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম । আমাদের সবার অন্তরের জ্বালা এতো পরিষ্কার এবং সাবলীল ভাষায় ব্যাক্ত করার জন্য সাদিয়া নাসরিন কে আমার অভিবাদন ।
লেখাটা আরও অনেকের সাথে শেয়ার করার অনুমতি চাই ।
Wonderful write up by Sadia Nasrin. A mixture of local dialogue with information taken from scriptures made this really intelectually superb. It will act to imbube males to change their mind to behave properly with female partnerse.sisters.mothers .women educationist. leaderd and enterpreneurs at large.
Dhiraj Nath