স্পটলাইট, মাদ্রাসায় যৌন হয়রানি এবং আমাদের নীরবতা

শারমীন জান্নাত ভুট্টো: ২০১৫ সালে ৮৮তম অস্কার আসরে সেরা চলচ্চিত্রের পুরষ্কার ঘরে তুলেছেস্পটলাইটমুভিটি খবরটি সবারই বেশ আগে থেকেই জানা বেস্ট অরিজিনাল মুভি ক্যাটাগরিতে অস্কার পাওয়া মুভিটির বিষয়বস্তু ছিলো বেশ চোখে পড়ার মতো

spotlight মুভিটি তৈরি হয়েছিলো, আমেরিকায় অনেক বছর ধরে ঘটতে থাকা সত্য একটি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। ধর্মযাজকরা কিভাবে ছোট ছোট শিশুদের নির্যাতন করে তাদের যৌন চাহিদা মেটাতো এবং সেই সব ঘটনা লোকলজ্জার ভয়ে ধামাচাপা দেয়া হতো সেই কাহিনীই গোপনে অনুসন্ধান করে তুলে ধরে চার সাংবাদিক

মুভিটি হলে বসে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার পুরো দুই ঘন্টা মিনিট আমি মুভির প্রতিটি চরিত্র আর ইনভেস্টিগেশনের সাথে এক হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, সাংবাদিকদের টিমে আমিও একজন ভার্চুয়াল সদস্যনিজে সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করি বলে তাদের চাপ আর প্রতিটি দৃশ্য ঘটনার টান টান উত্তেজনা অনুভব করতে লাগলাম আমিও নিজের অজান্তে ভাবতে লাগলাম কখনও কী সম্ভব আমার নিজের দেশে এভাবে ধর্মগুরুদের যৌননির্যাতনের বলি হওয়ার ঘটনাগুলো তুলে ধরা?

bhutto
শারমীন জান্নাত ভুট্টো

যারা ধর্ম নিয়ে রীতিমত ব্যবসা করেন তা থেকে ফায়দা লুটেন আমরা কি পারবো তাদের চেহারা ফাঁস করতে? নিজের মনের অজান্তে অনেক প্রশ্ন ঝাঁকে ঝাঁকে উঁকি দিচ্ছিল

আমিআপনি মোটামুটি সবাই বিপদে পড়লে কিছু করি আর না করি মসজিদের দানবাক্সে মানত বা নিয়ত করা বাবদ টাকা দিতে কিন্তু একদমই ভুলি না। আগে আমি প্রায়ই কাজ করতাম। বিশেষ করে পরীক্ষার ফলাফলের দিন।

কারণ আমার ধারণা ছিলো, শুক্রবারে মসজিদে টাকা দান করলে মনের সব বাসনা পূরণ হবে আর এই বলেই মসজিদের মাইকে আওয়াজ দেয়া হতো। আরো একটা কাজ আমাদের দেশের বিত্তবানরা করে থাকেন। কিছু টাকা হলেই একটা মসজিদ নয়তো বা মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। এখানেও আমার ধারণা ছিলো, যারা সৃষ্টিকর্তার নামে মসজিদ, মাদ্রাসা কিংবা ধর্মীয় উপাসনালয় তৈরি করেন, তারা হয়তো বা সেইরকম মহৎ চরিত্রের অধিকারী। পরে দেখলাম, আমাদের পাড়ার প্রভাবশালীরা তাদের বাপদাদার নামে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো বানিয়েছেন শুধুই নিজের প্রতিপত্তির জোর আর রাজনৈতিক পরিচয়কে আরও ধারালো করার জন্য।

harass-1মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আমার রীতিমতো মায়া এবং কষ্ট লাগে। কারণ বেশিরভাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী অনাথ নয়তো বা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। আর দুটি সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একদল হায়েনা প্রতিনিয়ত তাদের ওপর চড়াও হয়ে যৌনতার স্বাদ গ্রহণ করে। কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

ঘটনা ) গত ২৩.০৫.২০১৬নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এক শিশুকে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশের পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়া হয় বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মসজিদের গ্রেপ্তারকৃত মুয়াজ্জিন হাফেজ জহিরুল ইসলাম। (সোর্সhttp://www.banglamail24.com/news/153086)

ঘটনা ) গত ২৬.০২.২০১৬কুমিল্লার দেবিদ্বারে এক মক্তব ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে উপজেলার বরকামতা সরকার বাড়ি মসজিদের ইমাম মক্তবের শিক্ষক হাবিবুল বাশার হাবিব(২২) ঘটনায় অভিযুক্তকে আদালতের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। (সোর্স http://www.manobkantha.com/2015/02/26/16046.php)

ঘটনা ) গত ০৯.০৮.২০১৫কক্সবাজারের চকরিয়ায় দুই শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের চেষ্টার অভিযোগে সামসুউদ্দিন নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা। রোববার বিকেলে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ঘটেছে ঘটনা। অভিযুক্ত শিক্ষক স্থানীয় ডুলাহাজারা সাফারী পার্কস্থ দারুল ফোরকান উম্মে হানি মাদরাসার শিক্ষক। আক্রান্তরা ওই মাদরাসার শিক্ষার্থী।(সোর্সhttp://www.ctnews24.com/?p=19447)

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে ঘটনাগুলো হরহামেশাই ঘটে যাচ্ছে আমাদের আশেপাশে। বেত্রাঘাত, রড দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়ার মতো শাস্তির শিকার হয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। শারীরিক মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত হেয় হতে হয় তাদের। কিন্তু ঘটনাগুলো জেনেও আমরা হয় না জানার ভান করছি, নয়তো মুখে কুলুপ আঁটছি পাছে আমাদের ধর্মীয় পাপপূণ্যের হিসাব শুরু হয়ে যায়।

আবার অনেক সময় খানিকটা তাচ্ছিল্য করেও ঘটনাগুলোর দিকে নজর দেই না। দেবোই বা কেনো?

harass-2মাদ্রাসায় পড়া শিক্ষার্থীরা তো আর স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা নয়, তাই আমরাও তাদের অধিকারের বিষয়ে কিছুটা উদাসীন। শহীদ আনোয়ারা গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষক মণ্ডল স্যার আর ভিকারুননেসার পরিমলের ক্ষেত্রে জনগণ যে প্রতিবাদ জানিয়েছে, কঠোর হয়েছে, তার এক শিকেও জোটেনি মাদ্রাসার শিক্ষকদের অপরাধের ব্যাপারে।

কারণ সবাই আমরা ধর্ম নিয়ে একটু বেশীই অনুভূতিশীল। ধর্মের সুনাম নষ্ট হবে, মাদ্রাসায় ডোনেশান কমে যাবে, শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে না, এইসব কথা বিবেচনায় রেখে অনেকেই একটা টু টা শব্দও করেন না।

শিশুদের জাতির ভবিষ্যৎ বলি আমরা, অথচ এই শিশুরাই যখন বর্তমানের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে অতীত হয়ে যাচ্ছে আমরা সেখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছি। আমাদের নীরবতার তালা ভাঙুক আর পড়ুক স্পটলাইট

শেয়ার করুন:

আপনার চোখটা শুধু মাদ্রারার পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গেলো। স্কুল কলেজ ছাত্রীদের উপরে কেনো গেলো না? আপনি এখানে শুধু তিনটি ঘটনার সূত্রপাত দিয়েছেন কিন্তু স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা কি কম নির্যাতিত হয়? শিক্ষকদের হাতে কত নারী ধর্ষনের শিকার হয় সেকথা বেমালুন ভুলে গেলেন? আপনার লেখার উদ্দেশ্য মোটামোটা ভালো ছিল কিন্তু মতলব খারাপ সেটা প্রমাণিত হয়ে গেলো। সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতার পরিচয় দিলেন।

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.