আত্মনির্ভরশীল হও মেয়ে, এর বিকল্প নেই

শিল্পী জলি: আমাদের দেশে দু’ধরনের মেয়ে রয়েছে। এক ধরনের মেয়েদের লক্ষ্য থাকে, শুধু বিয়ে করে ঘর সংসার করা, লাভ মেইক করা, সন্তান জন্ম দেয়া। আর আরেক দলের সাধ বিয়ে করা আবার চাকরি-বাকরিও করা।

যাদের শুধু বিয়ের শখ তারা স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে ততদিন, যতদিন না তাদের বিয়ে হয়ে যায়। তারা অন্যের উপর নির্ভর করে পুরো জীবন চালাতে চায়। তাই তারা প্রস্তুতি নেয় সব কিছুতেই কম্প্রোমাইজ করতে অথবা নানাবিধ ফন্দির মাধ্যমে নিজের চাওয়াগুলো পূরণ করে নিতে।

Shilpi Jolley 2
শিল্পী জলি

তাদেরকে আত্মবিসর্জন দিয়ে অন্যের জীবনাদর্শ এবং ভেল্যুর উপর ভিত্তি করে চলতে হয়। টিকে থাকতে সর্বক্ষণ তোয়াজের উপর থাকতে হয়। জীবনটি হয় অনেকটা চামচেগিরির মতো। নতুন নতুন কৌশল আয়ত্ত করতে করতে তারা নিজেকে হারিয়ে ফেলে। তাদের সংসার জীবনের নির্ভরতার ভিত হয় সেক্স, কৌশল, কম্প্রোমাইজ, এবং সন্তানের দোহাই।

দিন দিন তাদের জীবন থেকে আনন্দ হারিয়ে যেতে থাকে। জীবনটি হয় অনেকটা জড়বস্তুর মত। নিজের কথা বা মত বলে তাদের আর তেমন কিছু থাকে না–সবই অন্যের কথা, অন্যের চাওয়া। তাদের জীবন বলতে থাকে অন্যকে শোনা, তার সাথে একমত হওয়া, আর আদেশ-নির্দেশ পালন করা।
আরেক দল, যারা পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, আবার বিয়েও করতে চায়, তারা সংসার করলেও তাদের আত্মসন্মান পুরোপুরি বিসর্জন দিতে হয় না। বিয়ে করলেও তাদের স্বাধীনতা এবং নিজস্বতাকে ধরে রাখার অবকাশ থাকে।
বিয়েতে ছেলেরা চায় একটি সুস্হ এবং সুন্দরী মেয়ে যেন তারা আকর্ষণ অনুভব করে। ভদ্র এবং সভ্য একটি মেয়ে যে শাসন মানবে।

তেমনই একটি মেয়ে যে শুধু দিতে জানবে, নেবে কম। কাজে পারদর্শী হবে, দয়ালু হবে, উদার মনের হবে, মিশুক হবে, শিক্ষিতা হবে, কর্মপটু হবে, যত্নশীল হবে, আত্মনির্ভরশীল হবে, গভীর জীবনবোধ থাকবে, শিক্ষিত এবং সামর্থ্যবান পরিবারের হবে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ফিটফাট থাকবে, পজেটিভ এনার্জি ছড়িয়ে দেবে, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না, আবার সেক্সেও অতুলনীয় হবে। যেন যতবারই মিলিত হয় ততবারই মনে হয় ইহাকে আমি পাইলাম তবে এখনও বুঝিতে পারিলাম না –সে যেন রহস্যময়ী, অপ্সরা, মায়াবিনী, মোহিনী, বা অন্য ভুবনের কেউ ।

বিয়েতে মেয়ের পরিবার দেখে ছেলের পড়ালেখা, চাকরি-বাকরি, প্রতিষ্ঠা, টাকাপয়সা, বংশ-গোত্র-ধর্ম, সামাজিক অবস্হান, মাদকাসক্তি। তবে মেয়েদের মনের চাওয়া থাকে একজন নির্ভরযোগ্য বর। যে আগলে রাখবে, ইমোশোনাল হবে, রোমান্টিক হবে, রঙ্গ জানবে, উদার মনের হবে, দানশীল হবে, প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, পরিশ্রমী হবে।

বিয়েতে দু-পক্ষেরই হাজারও চাওয়া থাকে। কোন পক্ষই শুধু দিতে বিয়ে করতে আসে না। তাই মেয়েরা যখন ত্যাগ করে করে নিজস্বতাকে হারিয়ে ফেলে তখন তাদের মধ্যে আর পজেটিভিটি থাকে না, উচ্ছ্বলতা থাকে না, চঞ্চলতা থাকে না, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা থাকে না, আনন্দ থাকে না, সেক্সের আকাঙ্ক্ষা থাকে না,…। তখন তাদের জীবন থাকলেও তাদেরকে আর জীবন্ত মনে হয় না।

আমাদের দেশে বিয়েতে ছেলেমেয়ের মধ্যে কেমিস্ট্রি বা মিল মহব্বত দেখা হয় না, তাদের পছন্দ-অপছন্দের মিল খোঁজা হয় না, তারা সেক্স শব্দের সাথে পরিচিত হলেও তাদের ঐ সম্পর্কিত জ্ঞান থাকে ভাসা-ভাসা। এমনকি বেশীর ভাগ ছেলেমেয়েই একটি কিসও দিতে শেখে না। অথচ অনেকেই বিয়েতে সেক্সকে অতি পাওয়ারফুল মনে করে বসে। মনে করে ওটার উপর নির্ভর করেই তার দুনিয়াকে সে হাতের মুঠোয় রাখতে পারবে।

বাস্তবে দেখা যায়, বিয়ের এক দেড় বছর হতেই অনেক বর বউয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ঐ জীবনকে তার কাছে একঘেয়েমি জীবন বলে অনুভূত হয়। সে আর তেমন বউয়ের প্রতি আকর্ষণবোধ করে না। শুধু বাচ্চা বা সামাজিকতার চাপে জীবনকে বয়ে বেড়ায়।

ছেলেদের ক্ষেত্রে বিয়েতে ত্যাগের মজা বলে কিছু নেই। আছে শুধু বিনিময়–মেয়ের সৌন্দর্য, সুস্বাস্হ্য, নিজস্ব ভয়েজ, আত্মনির্ভরশীলতা, মিষ্টি স্বভাব, সার্বিক পারদর্শিতা, নিজের জীবন নিজে উপভোগ করতে জানা, পজেটিভ এনার্জি, চঞ্চলতা, সেক্স… ইত্যাদি তাদেরকে একটি মেয়ের সাথে কানেকটেড রাখে। যখন কোন মেয়ে নিজেকে বরের মাঝে হারিয়ে ফেলে তখন বরও আর তাকে খুঁজে দেখে না।

বিয়ের আগে এবং পরে অনেক স্ত্রী’ই বরের সাথে নিজেকে তুলনা করে, তার দক্ষতার সাথে নিজেকে তুলনা করে, তার ক্ষমতার সাথে নিজেকে তুলনা করে, তার যোগ্যতার সাথে নিজেকে তুলনা করে, তার পরিবারের সাথে নিজের পরিবারের তুলনা করে, অতঃপর নিজেকে সেভাবে তৈরি করে যোগ্যতা অর্জনে উঠেপড়ে লাগে। যেটা মোটেই হেলদি নয়। এতে তার নিজের হীনমন্যতা বৃদ্ধি পায়, আত্মবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Roma
ছবিটি আতিকা রোমার। সংগৃহীত

দু’টো আলাদা মানুষ ভিন্ন, তাদের দক্ষতা ভিন্ন, চাওয়া-পাওয়া ভিন্ন, স্বপ্ন ভিন্ন, আদর্শ ভিন্ন, ক্ষমতা ভিন্ন, দর্শন ভিন্ন। তাই সব হারিয়ে ফেললে মানুষটি আর মানুষ থাকে না, পরিণত হয় জড় বস্তুতে। জড় বস্তু হয়ে মানুষের পক্ষে দীর্ঘদিন জীবনযাপন সম্ভব নয়।

বিয়ে আনন্দদায়ক হলেও নানাবিধ কারণে দীর্ঘস্হায়ী নাও হতে পারে। আইন করে যেমন বিয়ে হয়, আবার আইন দিয়েই সেই বিয়ে ভেঙে দেয়া যায়। তাই যেসব মেয়ের জীবনে স্বাধীনতা, নিজস্বতা, আদর্শ, এবং প্রতিষ্ঠার মূল্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাদের পড়া শেষ হতেই বিয়ের পিঁড়িতে না বসে আরেকটু সময় ব্যয় করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নেয়া ভালো। এতে জীবনে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধাও অনেক কম থাকে, আবার বিয়ের জীবনটিও সহজ এবং আনন্দদায়ক হয়।

বিয়ে মানে দু’জন দু’জনার পরিপূরক হওয়া, নিজেকে বিসর্জন দেয়া নয়।
বিয়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা নয়, যদিও মনের চাওয়াটি ঠিক তেমনই।
মানুষের জীবনে আত্মনির্ভরশীলতার বিকল্প কিছু নেই।

 

শেয়ার করুন:

আত্মনির্ভরশীল হও নারী, এর বিকল্প নেই। -লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে মেয়েরা যেভাবে জীবন যাপন করে, জীবনকে নিয়ে যেভাবে ভাবে এবং যে ভাবে বাঁচতে চায় এই সংক্ষিপ্ত লেখায় পুরো চিত্র উঠে এসেছে। অভিনন্দন জানাচ্ছি লেখক কে।

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.