‘মুখ বুঁজে সহ্য করার দিন শেষ’

রোকসানা ইয়াসমিন রেশনা: এক্স হাজব্যান্ড এর ব্যবহার নিয়ে এতো কথা বলার কোনো মানে হয় না। তারা খারাপ ব্যবহার করে, গায়ে হাত তোলে, লুচ্চামী করে বেড়ায় বলেই তো ‘এক্স’ হয়ে যায়। আর বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার পর সব অপবাদ এসে মেয়েদের ঘাড়েই পড়ে, এমনকি চাইলে পরকীয়ার কেচ্ছাকাহিনীও ফাঁদা হয়। এ নতুন কিছু না। সুতরাং সমাজের এই অপবাদের ভয়ে হয় মেয়েদের ভাল মেয়ে হয়ে থাকতে হবে, নয়তো বেরিয়ে আসতে হবে। মাঝামাঝি বলে কি কিছু আছে?

ওর থেকে সেই ভালো, সমাজের চোখে সতী-সাধ্বী নারী হওয়ার চিন্তা মন থেকে মুছে ফেলা। বর্তমান হাজব্যান্ডরা কি বউদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করে? যদি বউ তার অন্যায়কৃত কাজ মুখ বুঁজে সহ্য না করে প্রতিবাদ করে? বউ ততোদিনই ভালো থাকে, যতোদিন সব কিছু মুখ বুঁজে সহ্য করে। দিনের পর দিন বউদের মেরুদণ্ড বাঁকা দেখতে দেখতে হঠাৎ করে কোনো বউ এর মেরুদণ্ড সোজা দেখলে চোখ জ্বালা করে।

মুখ বুঁজে খারাপ ব্যবহার মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা নারীরা বলে থাকি সংসার তো করতে হবে। ইনকাম নেই, মা-বাবার বাড়িতে জায়গা হবে না, শেষ পর্যন্ত যাবো কই? অর্থাৎ আর্থিক নিরাপত্তা থাকলে মনে হয় খারাপ ব্যবহার সহ্য করে হাজব্যান্ডের সংসারে পড়ে থাকতো না। আসলেই কী তাই?

আমি প্রথম শ্রেণীর প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন নারীকে খুব কাছ থেকে চিনি। তাদের একজন আমাকে উপদেশের ছলে বলেছিল, হাজব্যান্ডকে যত্ন করতে হয়, সে যতো খারাপ ব্যবহারই করুক না কেন, কিছু বলতে নেই। হাজার হলেও পুরুষ তো। বলা যায় না, কখন বিগড়ে গিয়ে আবার অন্যদিকে চোখ দেয়!

আরেকজন তো আরেক কাঠি উপরে। অন্য মেয়েকে বিয়ে করে হাজব্যান্ড তাকে কবে ছেড়ে গিয়েছিল, সেই দিবস ঘটা করে পালন করে, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আর বরণ ডালা নিয়ে অপেক্ষায় থাকে, যদি সে আবার ফিরে আসে, সেই আশায়।

আরেক জন আবার তার থেকেও উদার। হাজব্যান্ড দিনরাত মদ, ক্লাব, পার্টি, আর অন্য মেয়ে নিয়ে পড়ে থাকে। সারাদিন অফিস শেষ করে উনি বাসায় এসে রান্না করে অপেক্ষা করে কখন হাজব্যান্ড এসে তাকে ধন্য করবে। কাজের কাজ কিছুই হয় না, হোম সহকারিদের সামনেই জোটে অপমান। এর মাঝে আবার একান্ত হোম সহকারিটি প্রেগন্যান্টও হয়ে পড়ে।

কী আর করবে? টাকা ইনকামের সাথে ব্যক্তিত্ববোধের সম্পর্কটা অনেক বেশি(!) বলেই হয়তো সাথে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। দুইটা ঘন্টা, কিছু টাকা, ব্যস। বেচারা হোম সহকারি! কিছু টাকা হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়ে যায় একদিন। আর তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত নারীটির রুটিন আগের মতোই চলতে থাকে।

স্বামী সেই মাতাল হয়ে ঘরে ফেরে, কোন কোন দিন আবার ক্লাব থেকে উঠিয়ে আনতে হয়, আবার একজন নুতন সহকারি আসে, আবার অপমান……………..

সমস্যাটা আসলে এক্স বা বর্তমানে না, সমস্যাটা নারীদের মানসিকতায়। অর্থ একটা ফ্যাক্টর বটে, কিন্তু সব কিছু না। 

আর এক্স মানে আমি মনে করি ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা ময়লা আবর্জনা ছাড়া আর কিছু না। ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর বা কারোর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ঐ ‘আবর্জনা’ কী বললো না বললো তাতে কী এসে যায়? তার কাছ থেকে পজিটিভ কোনো কথা আশা করা মানেই তো তাকে একটু হলেও গুরুত্ব দেয়া।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ডিভোর্স বা অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পরকীয়া নামক অপবাদ যেহেতু মাথায় নিতেই হয় একটা মেয়েকে, তাই সবাই কনফিডেন্টলি বলি না কেন, হ্যাঁ, প্রতিদিনের অত্যাচার সহ্য করার চেয়ে পরকীয়া অপবাদই শ্রেয়। আমি দ্বিধাহীন চিত্তে উচ্চকন্ঠে বলবো এ কথা। কোনো সমস্যা?

reshna-2

শেয়ার করুন:

বাহ্ চমৎকার !
পরকিয়ার দোষ থেকে মুক্ত থাকতে একচেটিয়া পুরুষদের দুষে গেলেন। নারীরা সত্যিই স্বচ্ছ আয়না ! তাদের নিম্নাঙ্গে কুড়ালের কোপ একটা আছে সেটা নিয়ে কতই বাহাদূরী। যখন যেখানে যাবে সেখানেই তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।মধু ছিটালে যেমন পিপড়ার অভাব হয়না। সে যাক, ভাল লাগত পুরুষরা কেন পরনারীতে আসক্ত হয়ে পড়ে সে বিষয়েও কিছু লিখলে।

খারাপ কাজ দিয়ে খারাপকে কখনও ভাল করা যায় না। পরকীয়া ঘৃণ্য কাজ, সেটা যেই করুক না কেন। কিন্তু আপনি সেই লেজকাটা শেয়ালের ঘটনা পুনরাবৃত্তি করতে চাচ্ছেন।

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.