শিল্পী জলি: বিয়ে মেয়েদের মনে একটি রঙিন স্বপ্ন ধরায়– মূলত বয়স এবং হরমোনজনিত কারণে। কেননা ঐ বয়সটিতে সন্তানধারণের ক্ষমতা পিকে থাকায় সন্তানের বাবাকে খুঁজে পাবারও তীব্র বাসনা অনুভূত হয়।
ঐ উপলব্ধির কারণে অনেক মেয়ের বিয়ে হতেই ঘরের কাজ, শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা এবং চব্বিশ ঘন্টার ডিউটি এসে যে ঘাড়ে পড়বে ঐ দিকটিতে একটুও নজর যায় না। এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে যৌতুক প্রদানকেও নেগেটিভ অর্থে দেখার প্রবণতা উঁকি দেয় না। বরং বিয়ে হবে, বর হবে, ঘর হবে, এবং চাঁদনী রাতে তুমি-আমি চিন্তাতেই তারা বিভোর থাকে। অতঃপর বিয়ে হয়ে যায়, বর কাছে এসে হাত ধরতেই বউ ঢলে পড়ে একেবারে বুকের মাঝ বরাবর–তুমি আমার, আমি তোমার, সোনা!
বর ঘোষণা দিক বা না দিক।
দেশে প্রচলিত একটি কথা আছে, ‘বিয়ের রাতে বিড়াল মারা’ আর হিন্দুদের মধ্যে আছে ‘কালরাত্রি’। ঐ রাতে সহবাস বর্জনীয়। বউ পেলেও বউ ধরা ছোঁয়ার বাইরে, কিছুটা অপেক্ষা, ধৈর্য, এবং সঙ্গীর গুরুত্ব অনুধাবনের সুযোগ পাওয়া।
মুসলমানদের মাঝে তেমন বিধি নিষেধ না থাকলেও বিড়ালের কথাটি মনে রাখা জরুরি। ঐ রাতে স্বামী সোহাগকে লিমিটে না রাখতে পারলে বর পরবর্তীতে তেমন মূল্যায়ণ করে না, বরং ভোর পাঁচটা বাজার আগেই ঘুম থেকে তুলে বাইরে পাঠিয়ে দেয় ঘরের কাজে হাত লাগাতে, বাড়ির লোকের মন জয় করতে।
জীবনের শুরুতে প্রথম রাতেই সরাসরি এ্যাকশনে গেলে বাসর রাতেও তেমন সময় দেয় না, ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে না, পরিবার বা দশের কথা শেয়ার করে না। বাকি জীবনে সম্পর্ক বলতে থাকে শুধু শারীরিক পর্যায়ের, অতঃপর প্রতিরাতে উচ্চস্বরে নাক ডেকে ব্যাঙের মতো ঘ্যা ঘু ঘ্যা ঘু ঘুমানো।
অনেক পরিবারেই আদর্শ বউয়ের চিত্র হলো, ঘুম থেকে উঠেই বাড়ির বড়দের পা ধরে সালাম করা এবং দিনরাত তাদের মন জয়ের চেষ্টা করে যাওয়া। সালাম করলেও চেহারা খারাপ কেন, কাল কেন, চিকনা কেন, মোটা কেন, ফকিরনী’র ঝি….বিশেষণে বিশেষিত হবার সম্ভাবনা কমে না।
কেননা নিজেকে নিঃশেষ করে দিলেও মানুষের মন পাওয়া বড় কঠিন। আবার একবার মন জয় করলেই তাদের পাওয়া সম্পূর্ণ হয় না, বরং নতুন নতুন আরও বায়না করতে থাকে।
দিনের পর দিন অন্যের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে বদলে যাওয়া নারীর সময় এবং সুযোগ হয় না নিজের দিকে আর ফিরে তাকাবার, নিজের জীবন নিজের মতো করে যাপন করার, নিজেকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার, সমৃদ্ধ করার। এই সত্ত্বা হারিয়ে ফেলা নারীর প্রতি এক সময় তার বরও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। না চাইতেই অতি ভালোবাসা পেয়ে সে বিরক্ত অনুভব করে, তাকে বোঝা মনে হয়। এক সময় যাকে দেখে তার মন প্রাণ গেয়ে উঠতো, শিরায় শিরায় পুলক অনুভূত হতো, সেই তাকে দেখেই মনে হয় কী ভুলই না করেছি –পুরো জীবনই বরবাদ।
ওদিকে নিজের সব সাধ-আহ্লাদ-স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে মেয়েটিরও নিজের আলাদা জগৎ বলে কিছু থাকে না। সে দিনরাত স্বামীর পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে আর বরের বিরক্তি চরম সীমায় পৌঁছুতে থাকে।
স্ত্রীকে সুখী করতে কেউ কখনও বিয়ে করে না, বরং নিজের জীবনটি পূর্ণ করতে এবং এক্সসাইটিং ওয়েতে যাপন করতে ছেলেরা বিয়ে করে। কোনো মেয়ে নিজের সত্ত্বা হারিয়ে ফেলে বরের সুখ-দুঃখের উপর পুরো নির্ভরশীল হয়ে পড়লে, তার লেজে লেজে চলতে থাকলে, কিছুদিন পর তাঁর নিজের জীবনই লেজেগোবরে হয়ে যায়, নিজেকে ডাবল লোডেড মনে হয়, সেইসাথে তো আছেই চাল আনো, ডাল আনো, নুন আনো, আটা আনো….।
মেয়েদেরকে নিজের জন্যে বাঁচতে হবে, নিজের ভার নিজেকে বইতে হবে, নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসতে হবে–লক্ষ খুঁত থাকলেও। নিজের সত্ত্বাকে বিসর্জন দিলে নিজের অস্তিত্বই আর থাকে না। তখন তার জীবন থেকে আনন্দ, উচ্ছ্বলতা দিন দিন হারাতে থাকে। অমন সঙ্গ কেউই উপভোগ করতে পারে না। আর মানুষের করুণার উপর ভর করে জীবন চালানো যায় না।
যেসব মেয়ে অন্যের কালো, হ্যাংলা, কানা, বুড়া, বুক ছোট, হিপ চাপা, মাথা খারাপ, ঝগড়াটে, চরিত্র খারাপ ইত্যাদি কথায় পাত্তা দিয়ে আহত হয় বা জীবনকে বিসর্জন দিতে উদ্বুদ্ধ হয়, তারা নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসতে শেখেনি, নিজের জীবনটি নিজের জন্যে যাপন করতে শেখেনি। তাই তাদের কদর অন্যরাও বোঝে না কেননা তাঁদের সেল্ফ-স্টিম কম। ওটা বাড়ানোই তাঁদের একমাত্র কাজ–উপায় নিজের মত করে চলা, নিজস্বতাকে ফিরিয়ে আনা, অন্যের কথায় পাত্তা না দেয়া।
মানুষের জন্যে হাজার করলেও পৃথিবীর সবাইকে কখনও সুখী করা যায় না। বরং নিজের মত করে চললে, সৃষ্টিশীলতা বাড়ালে, বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে কিছু করে যাবার সম্ভাবনা থাকে। যার সুবিধা অনেকেই পেতে পারে।
প্রতিটি জীবনই অতি মূল্যবান এবং তাঁদের সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রও সীমাহীন। পৃথিবী এত সমৃদ্ধ, এত রকমারি ঐশ্বর্যে ভরপুর যে চাইলেই যে কেউ নিজেকে কোন একটি ক্ষেএে সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে। হিরো আলমই তার উদাহরণ। সে তাঁর নিজের জীবনটি নিজের মতো করে যাপন করছে, তাঁর সামর্থ এবং স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করছে।
একদল তাঁর কাজ পছন্দ করছে, অন্যদল অবজ্ঞা– সে পাত্তাও দিচ্ছে না, কেননা জীবন তাঁকে সেল্ফ-স্টিম এবং সেল্ফ রেসপেক্ট শিখিয়েছে।
নেইম এবং ফেইমের সাথে সেল্ফ-স্টিম রিলেটেড নয়। ফেইম আজ থাকলে কাল নাও থাকতে পারে, কিন্তু সেল্ফ-স্টিম থাকা অপরিহার্য। আর তার প্রধান শর্ত হলো নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসা, নিজের জীবন নিজের মতো করে যাপন করা, গতিশীল রাখা।
wow ..just wow ..eto shundor likha keo kemne likhe .. onek onek meyder eita dhore dhore porano uchit .. nijer shotta bishorjon deyar moto vul jeno kono meye na kore ..