তামান্না ইসলাম: অফিসে ঢুকতেই চোখে পড়লো একটা ডিসপ্লে বোর্ডের দিকে, একটা সুন্দর ছবি। একটা কালো মেয়ে বোর্ডে কিছু এঁকে কিছু বুঝাচ্ছে দুটো সাদা ছেলে, মেয়ে আর কালো একটা মেয়েকে। আপাতদৃষ্টিতে অতি সাধারণ এই ছবিটার পিছনে লুকিয়ে আছে অনেক সংগ্রাম, বাধাবিপত্তি পার হওয়ার গল্প।
একজন কালো মানুষের কাছ থেকে সাদারা কিছু শিখছে। এটা এখন চোখে সয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু একটা মেয়ের কাছ থেকে শিখছে ছেলেরা, তাও আবার ইঙ্গিনিয়ারিং, এতো সহজ গ্রহণযোগ্য নয় ব্যাপারটা।
হিলারি ক্লিনটনের একটা স্ট্যাটাস পড়ছিলাম কিছুদিন আগে , তার মতে, মেয়েদেরকে দেখা হয় আলাদা লেন্স দিয়ে, সাধারণ মানুষ প্রেসিডেন্ট, সেনেট হিসাবে ছেলেদের দেখেই অভ্যস্থ, একজন মহিলা প্রার্থীকে এমনভাবে তাদের সাথে কথা বলতে হবে যেন তারা তার কথা বুঝতে পারে, এটা অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ। তার যদি ইচ্ছা হয় সে চিৎকার করবে পুরুষ প্রার্থীদের মতো সেটা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
এই গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হয়তো হিলারির মতো মহিলাকেও নিজেকে বদলাতে হয়েছে যেন সেই আলাদা লেন্সের মধ্য দিয়ে গেলেও তার কথা লোকে গ্রহণ করে, বুঝতে পারে। আমি দেখেছি আমি আজ পর্যন্ত যতো স্পিকারের কথা শুনেছি, মহিলাদের কথা আমাকে যেভাবে স্পর্শ করে পুরুষ বক্তাদের কথা ততটা করে না। তার মানে কি? এই চ্যানেলটা যদি হয় একই লিঙ্গের সেখানে যোগাযোগটা ক্লিক করে ভালো। যেখানে বিপরীত লিঙ্গের শ্রোতা বেশী, সেখানে এই যোগাযোগ ঘটানো কঠিন অবশ্যই।
এছাড়াও পরিবর্তনকে বেশিরভাগ মানুষই ভয় পায়, দ্বিধা করে। যেই চোখ, কান, মস্তিষ্ক, মন অভ্যস্ত হয়ে গেছে পুরুষের নেতৃত্বে, আধিপত্যে তাদেরকে বদলানোর জন্য অনেক বাধা বিপত্তি, ঝড়-ঝাপটা পেরোতে হয় বৈকি। আমার এক হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বান্ধবী বলছিল তার লড়াইটা পুরাপুরি ব্যক্তিত্বের, অনেক কঠিন হতে হয় তাকে, অনেক বেশী মুখরাও, শুধু নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য।
হিলারির যুদ্ধ, আমার কোম্পানির সেই কালো টেকনিক্যাল লিডার মেয়েটির যুদ্ধ আর আমার ইঞ্জিনিয়ার বান্ধবীটির যুদ্ধ কিন্তু একই। ভাবতে ভালো লাগে আমরা একা নই। ওহ হ্যাঁ অফিসের ডিসপ্লে বোর্ডটির ক্যাপশন ছিল “Empowerment from Inside”।
নিজের ঘর, নিজের স্কুল, নিজের পরিবার, নিজের সমাজ, নিজের দেশে মেয়েরা শক্তিশালী হও, একদিন রাজতন্ত্রের মতো একচেটিয়া পুরুষতন্ত্রও ধসে পড়বে।