নারী নির্যাতন কমিয়ে আনতে ‘একটি বিনীত প্রস্তাব’

মোজাফফর হোসেন: সবধরনের নারী-নির্যাতন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য একটি প্রস্তাবনা পেশ করছি- আমার সঙ্গে সকলে একমত হবেন যে, সবসময় পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সমস্যা ছিল নারী ও শিশু নির্যাতন সমাজ বিজ্ঞানীরা অনেক তথ্য-উপাত্ত জাহির করে প্রমাণ করেছেন, পৃথিবী অনেক সংকটকাল অতিক্রম করে আজকের এই অবস্থানে এসেছে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে বলেই আজ আমরা নিজেদের সভ্য ও আধুনিক মানুষ হিসেবে দাবি করছি সকলে একবাক্যে স্বীকার করে নেবেন যে, শিক্ষা-চিকিৎসা-অর্থনীতি-মানবিকতা-সহিষ্ণুতা সবদিক থেকেই আমরা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে উন্নত অবস্থানে আছি

তবে একটি ক্ষেত্রে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি সেটি হলো: নারীর শঙ্কাহীন-স্বাধীন জীবন আমরা এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি নারী-নির্যাতনে বরং নতুন নতুন মাত্রা যোগ হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত আমরা এটাকে এখন পৃথিবীর প্রধানতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতেই পারি

mojaffor-hossain
মোজাফফর হোসেন

নারী নির্যাতনের সমস্যা থেকে আমরা সকলেই—আস্তিক, নাস্তিক, বামপন্থী, ডানপন্থী—এখন পরিত্রাণ চাই পৃথিবীজুড়ে এই সমস্যার মোকাবেলায় কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে এ-পর্যন্ত যত পদক্ষেপ বা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, আগে-পরে সবই ব্যর্থ হয়েছে

ক্ষেত্রবিশেষ নারী-পুরুষে অর্থনৈতিকভাবে সমতায় আনা সম্ভব হলেও, এই সমস্যার সমাধান ঘটেনি ধরে নেয়া হয়েছিল, সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষ পাশাপাশি কাজ করলে নারী-নির্যাতন বন্ধ হবে বন্ধ তো হয়ইনি, বরং এতে দেখা গেছে নারী-নির্যাতনে বিশেষ মাত্রা যোগ হয়েছে আমরা এগুলোকে মলেস্টেশন, সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ, সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট, ইভটিজিং, সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট প্রভৃতি নাম পরিয়েছি

নারীরা এগিয়ে এলেও পুরুষ যেহেতু আল্টিমেট ক্ষমতার অধিকারী, তাই এর ফাঁকফোকর থেকেই যাচ্ছে এই ফাঁকফোকর দূর করতে মোটামুটিভাবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি তাই এ পর্যায়ে আমাদের হাতে নারী-নির্যাতন বন্ধ করার মতো আর কোনো বিকল্প পদ্ধতি অবশিষ্ট নেই

এখন আমার একটি প্রস্তাবনা আছে সমাজের শিক্ষিত-সুধীজনের উদ্দেশে অতি বিনয়ের সাথে আমি আমার প্রস্তাবনাটি পেশ করছি

আমরা দেখেছি, শাসনক্ষমতার স্বরূপ না বদলে নারী-পুরুষ চার দেয়ালের বাইরে যত বেশি অ্যাক্টিভ হবেন, নারী নির্যাতন তত ভিন্নরূপে প্রকাশ পাবে এক্ষেত্রে নারী অথবা পুরুষের একপক্ষকে গৃহজীবন-যাপন করতে হবে যেটি নারীরা হাজার হাজার বছর ধরে করেছেন বা এখনো কোথাও কোথাও করে আসছেন কিন্তু এক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি, নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন সম্প্রতি বাংলাদেশে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীরা বাইরের চেয়ে ঘরেই বেশি নির্যাতনের শিকার হন

আমার প্রস্তাবনাটি হলো: নারীরা ঘরের বাইরে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল কাজে বের হয়ে আসবেন আর পুরুষ গৃহজীবনে চলে যাবেন অর্থাৎ নারী-পুরুষের অবস্থানটা নিজেদের মধ্যে অদল-বদল হবে মাত্র

আমার এই প্রস্তাবনার সাথে আপনাদের কোনো নৈতিক দ্বিমত থাকার কারণ নেই কারণ, আপনারা সকলে চান নারী-নির্যাতন বন্ধ হোক আর এই জটিল সমস্যার সমাধানে একপক্ষকে যদি ঘরের ভেতর বন্দিজীবন কাটাতেই হয়, তাহলে সেটি পুরুষদেরই করা উচিত এর পক্ষে আবার দুটো নৈতিক কারণ আছে

এক. সমস্যাটা যেহেতু পুরুষের স্বভাব ও চরিত্রে; কাজেই তাদেরকেই আমরা বন্দী জীবনে নিয়ে যাবো, যেভাবে আমরা গৃহকর্তাকে নয়, চোরকে জেলে বন্দী করে রাখি

দুই. নারীরা যেহেতু কয়েক হাজার বছর বন্দী জীবন কাটিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই এবার সেটি করার পালা পুরুষদের

অর্থনীতি-সমাজনীতি-রাজনীতি প্রভৃতিক্ষেত্রে নারীর একক ক্ষমতা থাকলে নারী-নির্যাতন (শারীরিক ও মানসিক) বন্ধ হবে কেন হবে সেটি আমার এই প্রস্তাবনায় তুলে ধরছি

নারী যখন সকল ক্ষমতার উৎস হবে, তখন নারী-নির্যাতন আইনের যে সব ফাঁকফোকর একজন পুরুষ বের করতে পারেন, সেটি আর তখন পারবেন না কারণ বিচার ও প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে নারীর একক ক্ষমতা থাকবে গোষ্ঠীপ্রীতির কারণেও নারীরা নারীর ভালো দিক দেখবেন যেভাবে এখন পুরুষরা দেখছেন

এক্ষেত্রে অনেকে পুরুষ-নির্যাতন’র সম্ভাবনার কথা তুলবেন আমি বলব, কিছু ব্যতিক্রম বিশেষ সেটিও হবে না কারণ নারীরা চরিত্রগত ও প্রকৃতগতভাবে পুরুষের মতো না একজন ৬০ বছর বয়সী পুরুষ ৭ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে স্বভাবগতভাবে এবং প্রকৃতিগতভাবেও কিন্তু নারীরা সেটা রাখে না স্বভাবগতভাবে নারীরা অনেক কমবয়সী ছেলেকে সন্তান কিংবা ভাইতুল্য দৃষ্টিতে দেখে থাকে আর প্রকৃতিগতভাবে পঞ্চাশোর্ধ নারীরা যৌনকামী হয় না পাশাপাশি ১৫ বছরের নিচে ছেলেদের ধর্ষণ করে একজন নারী কোনো তৃপ্তিও পাবে না এ থেকে শিশু-যৌন নির্যাতনও বন্ধ হবে এই প্রস্তাবনার আরো একটি প্লাস পয়েন্ট হলো, গণধর্ষণ জিরোতে নেমে আসবে কারণ পাঁচজন নারী একসঙ্গে একজন পুরুষকে ধর্ষণ করে যৌনতৃপ্তি পাবে না

আমরা সকলে জানি, বায়োলজিক্যালি, নারীরা যৌনকামী না হলেও তার সঙ্গে সঙ্গম করা যায় কিন্তু পুরুষের সঙ্গে সেটি করা সম্ভব নয় যে-কারণে মৃত নারীকেও কখনো কখনো ধর্ষণ করা হয় কিন্তু মৃত পুরুষকে ধর্ষণ করার কোনো সুযোগ নেই

এখন সম্ভাবনা থাকলো পুরুষের এককভাবে ধর্ষণের শিকার হওয়ার একজন নারী দ্বারা একজন পুরুষও কখনো ধর্ষণের শিকার হবে না এর কারণ হলো, এককভাবে দৈহিক শক্তিতে নারীর চেয়ে পুরুষ বেশি শক্তিশালী এক্ষেত্রে পুরুষ তার পেশিবলে নিজের কথিত ‘সম্ভ্রম’ রক্ষা করতে পারবে একথা সত্যি যে, নারীরা যদি প্রকৃতিগতভাবে পুরুষের চেয়ে বেশি পেশিশক্তিবান হতো তাহলে ধর্ষণ-ঘটনা সংখ্যা এমনিতেই কমে যেত

আমার এই প্রস্তাবনায়, একজন পুরুষও নারীকে তার পেশিশক্তিবলে ধর্ষণ করতে পারবে না কারণ পুরুষ তখন নারীশাসিত সমাজব্যবস্থায় বাস করছে, তাই পুরুষ অপরাধী হয়ে কোনো সামাজিক ও আইনগত সহযোগিতা পাবে না

নারীরা সবধরনের ক্ষমতায় থাকলে হয়তো পুরুষকে নির্যাতন করার সুযোগ তৈরি হবে কিন্তু এক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে নারীরা সৎ থাকবে কেননা চরিত্রগতভাবে নারীরা পুরুষদের চেয়ে সৎ ও সহনশীল বিভিন্ন সমীক্ষায় সেটি দেখা গেছে সমীক্ষাগুলো যেহেতু পুরুষ দ্বারা পরিচালিত তাই সেখানে পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে পারি

আমার এই প্রস্তাবনার কিছু সহায়ক সুবিধাও রয়েছে আমরা এখন প্রশ্ন তুলতে পারি: নারী সবদিক থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের চালকের আসনে থাকলে পৃথিবীর অগ্রগতি কেমন হবে? আমার অভিমত হলো, এখন যেভাবে চলছে তার চেয়ে ভালোভাবে চলবে আমাদের এখন ঠিক করতে হবে- সুখি পৃথিবীর জন্যে কি পুরুষালি শক্তির দরকার—যে শক্তি যুদ্ধ করতে জানে অকারণে, যে শক্তি অকারণে কোটি কোটি টাকা পারমাণবিক শক্তি ও মহাকাশ জয়ের পেছনে ব্যয় করে চলেছে, যেখানে পৃথিবীর বহু মানুষ এখনো খাদ্যহীন-চিকিৎসাহীন-শিক্ষাহীন দিনযাপন করছে, যে শক্তি বিনা কারণে দূষিত করছে জলবায়ু—নাকি আমরা সেই শক্তি চাই, যে শক্তি মমতাময়ী, মানুষকে ভালোবাসতে জানে, মাতৃগুণে গুণান্বিত, প্রকৃতিগতভাবে কোমল ও মানবিক

সর্বগৃহীত পর্যবেক্ষণ হলো, স্বভাবগত এবং প্রকৃতগতভাবে নারীরা যুদ্ধ ও সংঘাত-অপ্রিয় হয় ইতিহাস বলে, খুব কমসংখ্যক নারীই এ পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে খুন, জখম, ধর্ষণ, প্রতারণা (বিশেষ করে আর্থিক), ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, পাচার, দখল, জোর-জবরদস্তি, দৈহিক নির্যাতন– এই সকল অপরাধ বা অমানবিক কাজের সিংহভাগই করে আসছে পুরুষ

নারীর এই চিরন্তন শান্তিকামিতার কারণে আজ পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোকে কতগুলো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নারীরাষ্ট্র’ কিংবা ‘পুরুষরাষ্ট্র’ বলে আলাদা করে চিহ্নিত করা হচ্ছে যেমন আধিপত্যবাদ নীতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে ‘পুরুষরাষ্ট্র’নামে ডাকা হচ্ছে অন্যদিকে মানবিক ও জনকল্যাণমূলক নীতির কারণে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোকে ‘নারীরাষ্ট্র’বলে পরিচিত করে দেয়া হচ্ছে

অনেকে হয়ত এক্ষেত্রে বলবেন, নারীরা হিংসুটে ও ঝগরাটে স্বভাবের হয়, তাই যুদ্ধ চলবে আমার কথা হলো, পুরুষ উদার ও বন্ধুত্বপূর্ণ বলে যদি আমরা মনেও করি, সেটি ঠিক না

পৃথিবীর এ-পর্যন্ত যত যুদ্ধ হয়েছে এবং হচ্ছে তার পেছনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পুরুষরা কাজেই ধারণাবশত নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না এক্ষেত্রে যুদ্ধের সম্ভাবনাকে আমি একেবারে এড়িয়ে যাচ্ছি না তবে সেসব যুদ্ধে শিশুরা কম শিকার হবে যেহেতু যুদ্ধে তখন নারীরা অংশ নেবে, নারীরা স্বভাবগুণে শিশুদের প্রতি সদয় থাকবে দ্বিতীয় সুবিধা হলো, যুদ্ধে নারী নির্যাতনের শিকার হবে না কারণ, সেখানে পুরুষের শক্তি শূন্য

এখন যুদ্ধাক্রান্ত দেশে আমরা দেখে থাকি, নারীরা যেমন পরিবার, নিজের সন্তান, সংসার বাঁচাতে উদগ্রীব থাকে, তেমনি তাকে উদগ্রীব থাকতে হয় তার সম্ভ্রম বাঁচানোর জন্যে্ও এক্ষেত্রে যুদ্ধাক্রান্ত পুরুষকে কেবল তার নিজের জীবন ও সংসার বাঁচাতে উদগ্রীব থাকতে হবে প্লাস, বর্তমান বিশ্বে জঙ্গিবাদের যে প্রভাব, সেটিও শূন্যে নেমে আসবে

পারিবারিক বা সামাজিক কাজে নারীশাসিত সমাজে পুরুষরা বাইরে বের হলেও আদম টিজিং বা মলেস্টেশনের শিকার হবে না কারণ পুরুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের দিকে নারীর ‘কুদৃষ্টি’ দেয়ার বায়োলজিক্যাল কারণ নেই

আমার এই প্রস্তাবনা নিয়ে আমি কয়েকজন বিজ্ঞজনের সঙ্গে কথা বলেছি তারা আমাকে বিদ্রুপ করে বলেছেন, তাহলে কি গর্ভধারণের কাজটিও পুরুষরা করবে? আমি বিনয়ের সঙ্গে বলছি নারীরা প্রকৃতিগত কারণেই গর্ভধারণ করবেন তবে সন্তান লালন-পালন করবে পুরুষ এতে সন্তানের বেড়ে ওঠাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না—এটা এখন পরীক্ষিত সত্য

কেউ কেউ আমাকে প্রশ্ন করেছেন, ছেলেরা হাউসমেকার হিসেবে কেমন হবে? আমি বলেছি মেয়েদের চেয়ে খারাপ না ক্ষেত্রবিশেষ আরো ভালো অতি গুরুত্বপূর্ণ এক প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন আমার এক বন্ধুজন আমি যেহেতু স্বীকার করে নিচ্ছি, শারীরিক শক্তিতে পুরুষরা এগিয়ে এক্ষেত্রে যে সব সেক্টরে কায়িক শ্রমের প্রয়োজন, যেমন- ভবন নির্মাণ, খনন কাজ- সেখানে পুরুষ শ্রমিক রাখা হবে কিনা না রাখলে কাজের গতি শ্লথ হয়ে যাবে কিনা আমি তাকে বলেছি, যেহেতু প্রযুক্তিগতভাবে আমরা অনেক উন্নত হয়েছি, তাই কায়িকশ্রমের গুরুত্ব এমনিতেই কমে আসবে

দ্বিতীয়ত, পুরুষ শ্রমিকের কাজ করতে নিষেধ থাকবে না যেহেতু সবদিক থেকেই সুবিধাজনক স্থানে নারীরা থাকবেন, তাই শ্রমিক শ্রেণিতে কিছু পুরুষ কাজ করলেও তারা নারীদের নির্যাতন করার সাহস পাবে না তৃতীয়ত, নির্মাণকাজের মতো কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজের গতি যদি কিছুটা কমেও যায়, তাতেও সমস্যা নেই বৃহত্তর স্বার্থে এটুকু আমাদের মেনে নিতেই হবে চতুর্থত, নারীরা ছোট থাকতে থাকতে বাইরে কাজ করতে থাকলে, খেলাধূলায় অংশ নিলে, কায়িক দিক থেকেও এখনকার চেয়ে শক্তিশালী হবেন বিবর্তনবাদ যদি সত্যি হয়, তাহলে পরিস্থিতির কারণে অদূর ভবিষ্যতে পুরুষের চেয়ে পেশিশক্তিতে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে

আমার এক বিচক্ষণ বন্ধু অনেক মূল্যবান একটি প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন স্বীকার করে নিচ্ছি, তিনি না বললে বিষয়টি আমার দৃষ্টি থেকে এড়িয়েই যেত তার ভাষ্যে, আমার এই প্রস্তাবনার সাথে ধর্মের কোনো সংঘর্ষ হবে কিনা?

আমি বলেছি, না কারণ, আমি আমরা জানি, ইসলামে ঘরের বাইরে বের হলে নারীদের পর্দা করার নির্দেশ আছে নারীদের বাইরের কাজে ইসলাম ধর্মে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এসবের কারণ হলো, ঘরের বাইরে ‘পর-পুরুষ’ মানুষের আধিক্য যখন ঘরের বাইরে, রাষ্ট্রকাজে, সবখানে নারীরা থাকবে তখন বাইরে নারীপর্দার গুরুত্ব কমে যাবে

পুরুষ না থাকলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশের ব্যাপারে ধর্মীয় বাধা থাকবে না সে কারণে ইসলামের অনেক রীতি হয়তো বদলে যাবে এবং সময়ের সাথে সাথে এই বদলকে খোদ ইসলাম ধর্মেও স্বাগত জানানো হয়েছে এখানে এ কারণে ইজমা-কিয়াসের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে অনুরূপভাবে হিন্দুধর্ম ও খ্রিস্টান ধর্মেও সমস্যা হবে না

যারা এখন মানবতাবাদী বলে নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, যারা সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা চান, তারা হয়ত বলবেন, তাহলে তো পুরুষ পিছিয়ে গেল! জেন্ডার সমতা হলো না তাদের বলছি, আমিও জেন্ডার সমতার পক্ষে কিন্তু যেহেতু সেটি সম্ভব হচ্ছে না তাই আপাতত এর চেয়ে বেটার প্রস্তাবনা আমার জানা নেই যদি কারো থেকে থাকে, আমি সেটি সাদরে গ্রহণ করব এবং অন্যদেরও করতে পরামর্শ দেব তবে ইতোমধ্যে প্রয়োগ করা হয়েছে এমন প্রস্তাবনা এখানে গৃহিত হবে না

এক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত কোনো লাভ আছে কিনা এমন প্রশ্নও কেউ কেউ করতে পারেন। আমি তাদের আশ্বস্ত করছি এই বলে যে, আমার কোনো মেয়ে সন্তান নেই, কাজেই এ থেকে আমার ব্যক্তিগত লাভ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

নোট: জোনাথন সুইফট-এর ব্যঙ্গরচনা ‘এ মডেস্ট প্রোপোজাল’ দ্বারা অনুপ্রাণিত।

 

শেয়ার করুন:

এরকম একটি অভিনব ও চমৎকার প্রস্তাবনার জন্যে মোজাফফর হোসেনকে অসংখ্য ধন্যবাদ। মনে হয় তিনি ছাড়া আমাদের দেশের খুব কম পুরুষ-ই এই প্রস্তাবে রাজি হবেন। নারীরা শাসন-ও প্রশাসনের এবং বাইরের সকল কাজের দায়িত্বে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পেলে যুদ্ধ, দাঙ্গা, সাইবার, নিউক্লিয়ার অ্যাটাকনেক্টাই কমে যাবে যেহেতু নারীরা শান্তিকামী যুদ্ধবিরোধী। সন্তানধারণ ও সন্তানপালনের ব্যাপারটার একটা সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। তা না হলে ঘরের সব অন্যান্য কাজ-ই পুরুষরা যদিও করতে পারে, সেই সঙ্গে পারে ন্তানপালনের কাজো করতে(দুগ্ধদান ব্যতিত)। কিন্তু মানবতার স্বার্থে, এবং মানবিক বিশেষগুণগুলো আয়ত করার জন্যে শিশুদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নারীদের কিছুটা ভূমিকা থকা অবশ্যক- রোল মডেলের মতো। ফলে আজকের শিশুদের সভ্য, উন্নত ও মানবিকতর নাগরিক করে গড়ে তোলার স্বার্থেই শিশু প্রতিপালনের কিছুটা দায়িত্ব-ও যদি নারীর ঘাড়ে চাপিয়ে দুইতে হয়, ঘরের –বাইরের দুই দায়িত্ব মিলে তার মাথা থাকবে সবমময় ভারি বোঝায় পূর্ণ।আরেকটা কথা। নারীসূলভ দেশ আর পুরুষসূলভ দেশের কথা পশ্চিমী এক দার্শনিকের লেখা পড়ে আমি নিজে দেড়এক যুগ আগে এই ধারণাকে প্রচার করি আমাদের দেশে । তবে সব দেখে শুনে যা আমার, ধীরে ধীরে নারী রাষ্ট্র আর পুরুষ রাষ্ট্র কোনটাই আর থাকবে না। প্রক্ক্রিতির ক্লিবলিঙ্গের মতো উভয় গুণের সমন্বয়ে গরে উঠবে তৃতীয় ধারার এক রাষ্ট্র যে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছি আমি, মোজাফফর উভয়েই। (জনাথম সুইফট=ও বটে) ।

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.