
বিথী হক: ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজের চাপে বেশ কয়েকদিন ফেইসবুকে তেমন একটা সময় দেওয়া হয়নি। কিন্তু যেইমাত্র লগ ইন করলাম, বুঝলাম এতো এতো ইস্যু তৈরি হয়েছে মানুষের। কোরবানি, বৃষ্টি, পরিচ্ছন্নতা, বৈরাগী নিখোঁজ এবং সর্বশেষ সুড়সুড়িওয়ালা ইস্যু ‘৮ মিনিট’। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না, হোমপেইজে সবাই এই ৮ মিনিট নিয়ে যে মজা করছে তার উৎসটা আসলে কী! তারপর এক বন্ধুর পোস্টে বিস্তারিত দেখে রাতে ঘুমাতে গেলাম। এ আর এমন কী ইস্যু?
আমাদের দেশে রোজ ধর্ষণ, খুন, ভিডিও ফাঁস ইত্যাদি এবং ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রমরমা ডিসকাশন চলছে বিভিন্ন বড় বড় গ্রুপে। মনের খোরাক মেটাতে মানুষ তৈরি করে নিয়েছে এসব গ্রুপ, সিটিজেন জার্নালিজমের একটা সুলভ প্ল্যাটফরম তৈরি হয়েছে দেখে আগে ভাল লাগলেও এখন এটাকে বিকৃত যৌনতার প্ল্যাটফর্ম বলে মনে হল। গ্রুপগুলোতে লক্ষ লক্ষ সদস্য একটা ইস্যু নিয়ে পড়লে যেকোনো কিছু সম্ভব। আর এই সদস্যদের ৯০/৯৫ ভাগ যদি তরুণ হয় তাহলে তো কথাই নেই।
বহুল আলোচিত এমন একটা নোংরা গ্রুপে গিয়ে যা দেখলাম তা প্রকাশের মতো মানসিকতা বা ভাষা কোনটাই আমার এই মুহূর্তে নাই। কোন এক ছেলে ঢাকা মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসের সময় প্রশ্ন কিনে চান্স পেয়েছিল, সে এই ঘটনার নায়ক। এই ঘটনার সাথে আসলে ৮ মিনিটের মিল খুঁজতে যাওয়া বোকামী, যে বোকামী আমিও করেছি! মূলকথা হলো, সেই ছেলের সাথে এক মেয়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও কোনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সুড়সুড়িবাজ তরুণরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে এর সুরাহা করতে। হা হা সুরাহার ধরনও বেশ আধুনিক বলে মনে হলো আমার। যদিও মধ্যযুগীয় সুরাহার সাথে মোটাদাগে এর দর্শনগত একটা মিল রয়ে গেছে।
মেয়েটা যেহেতু অন্তরঙ্গ সেসব মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করেছে সেহেতু সে খ, ম! ছেলেটা আর যাই করুক যাদুদণ্ডের সুবাদে সে কোনভাবেই খ,ম হতে পারবে না। কিন্তু ছেলেদের লুচ্চামি যেহেতু সমাজস্বীকৃত তাই তার খুব বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল বা আছে বলে আমার মনে হয়নি। ঘটনা এবং অবস্থানের ধারাবাহিকতায় চিরচেনা সেই ফল, মেয়েটা সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছে। মেয়েটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তা জানি না। সেই আলোচিত গ্রুপে গিয়ে দেখলাম, ছেলে-মেয়েরা আত্মহত্যার খবর শুনে বিশাল সন্তুষ্ট এবং ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বলে সে সন্তুষ্টির প্রকাশও করছে।
গ্রুপটায় বিকৃতমস্তিষ্ক তরুণরা সারাদিন নারী শরীরের খণ্ড খণ্ড ভিডিও আপলোড করে মুখে মুখেই যৌনতার ষোলকলা পূরণ করে। তাদের কেউ বাসে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সময় এরিয়েল শটে মেয়েদের ক্লিভেজ ভিডিও করে, কেউ কোমর ভিডিও করে, কেউ খোলা পিঠ ভিডিও করে, কেউ পর্ণ আপলোড দেয়। এবং শত শত কমেন্টে সেসব নিয়ে যৌন আলাপে যেন খসে খসে পড়ে নোংরামি। পরক্ষণেই দেখি আল্লাহ্ রাসুলের ঘর, দাড়ি, টুপি, মসজিদ, মন্দির নিয়ে একই কীটপতঙ্গের মাতম।
এ থেকে আমরা কী শিখলাম? আমরা শিখলাম নরম-গরম মেয়েদের নগ্নতা আমাদের ধ্বজাধারী সমাজের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহৃত হলে সেটা গ্রহণযোগ্য না হবার কারণ নাই, কিন্তু যেহেতু সমাজের সকল সম্মান মেয়েদের যোনিতে তাই মেয়েটার বেঁচে থাকারও যথাযথ কোন কারণ নাই!
এবার আসি ভিক্টিম ব্লেমিং করা আদিম সমাজের ধর্মপ্রাণ সুড়সুড়িওয়ালা ধার্মিকদের যুক্তিতে। যেহেতু ভিডিও করা হয়েছে, সেহেতু সেটা ছড়াবেই, মানুষ দেখবেই। দেখানোর উদ্দেশ্য না থাকলে কি কেউ ভিডিও করে নাকি? তারও আগের কথা সে এসব কেন করেছে? সে জানে না ছেলেরা কেমন হয়? তো, সমাজ যেহেতু লুইচ্চা ছেলেদের ঘরের মানুষ আর মেয়েদের যৌনপল্লীর যৌনকর্মী ভাবে, তাহলে সমাজের দৃষ্টিতে ভাল মেয়েরা কাকে বিয়ে করবে? কার সাথে থাকবে?
ছেলেরা যতই ভাল হোক, তাদের চরিত্রে পরপ্রিয়তা থাকবেই, এটা যদি ধ্রুব হয় তাহলে ভাল মেয়েদের জন্য ভাল মেয়েরা ছাড়া আর ভাল কোন অপশন কি আছে? থাকুক বা না থাকুক সমকামিতা নোংরামি! এখন তাহলে বিজ্ঞ সমাজ কী রায় দিবেন? ভাল মেয়েদের সচেতনতার সাথে খারাপ ছেলেদের সাথে জীবন কাটাতে হবে নাকি অন্যকিছু?
এখন তাহলে বলেন, সমস্যাটা কোথায়? ছেলেতে? মেয়েতে? যৌনতায়? ভিডিও তে? নাকি ভিডিও দেখায়?
এই যে ক’দিন আগে আক্তার জাহান আত্মহত্যা করল, সবাই তো মৃত অস্তিত্বটাকে শিয়াল-কুকুরের মত ছিঁড়ে খেল। কেন লড়াই করলো না বলে তার ব্যক্তিগত জীবনের ব্যবচ্ছেদ করে তাকে জনসম্মুখে হেনস্থা করলেন। আচ্ছা মনে আছে সাবিরার কথা? প্রেমিকের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যে আত্মহত্যা করেছিল? তাকে কী কী বলা হয়েছিল সেসব কি মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন আছে? –বোধ হয় না! সে আত্মহত্যা করেছিল বলে কী-বোর্ড কাঁপিয়ে জীবন সম্পর্কিত যে মহান বাণী দিয়েছিলেন, সেই বাণী আজকে পরিবর্তিত হয়ে সন্তোষে রূপ নিল কিভাবে, আমি সমীকরণ মেলাতে পারছি না।
যার শরীর নিয়ে এতো আনন্দ-ফূর্তি করেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে যাদুদণ্ডের যথাযথ ব্যবহার করতে পারেন সে শরীরকে প্রয়োজন শেষ হলে নর্দমার চেয়েও পচা সমাজে ছুঁড়ে ফেলতে লজ্জা লাগে না আপনাদের? আপনারাই বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্কের বিরুদ্ধে বড় বড় লেকচার দেন, রাতের আধারে শরীরের ভার কমাতে যাদের দ্বারস্থ হন, তাদের বেশ্যা বলে গালি দেন আবার তাদেরই শরীরের ভিডিও দেখে স্বমেহন করেন; আপনারা যে নিজেদের আত্মপ্রসাদ নিয়ে জটিলতায় আছেন তা কি বুঝতে পারছেন?
এবং সর্বশেষ, এসব নোংরা গ্রুপ কাদের নেতৃত্বে, কাদের সহায়তায় চলে খুঁজতে গিয়ে নিজের চারপাশ নিয়ে যে গর্বটা আমার ছিল সেটা স্তিমিত হয়ে গেছে। নারীদের নিয়ে যারা কাজ করেন, নারীদের যারা সম্মান করেন, মানবতার স্লোগান দিয়ে যারা রগ ছিঁড়ে ফেলেন তারা এসব গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক। আমি ফিরে গেলাম সেখানে, যেখান থেকে সবাই একসঙ্গে লড়াইটা শুরু করার কথা ছিল। নিজের মনে বিড়বিড় করে বললাম, “যারা রক্ষক, তারাই ভক্ষক”!
Asole prithibita jukhtihinder dokhole. Jekhane sottikar er jukhtir chorcha hoy,sekhnae mukhto chitar sadhinota. Tai amader sokoler chesta kore jete hobe nirontan.
?
Asole prithibita sottikar er jukhtihinder dokhole.jekhane sottikar er jukhtir charcha hoy , sekhanae mukhto chinter sadhinota. Amader sokoler chesta korte hobe nirontan.
Asole prithibita sottikar er juktihin der dokhole. Juktir sothik charcha jekhane , mukto chinta hoy sekhane. Amader seta chalea jete hobe chirontan.
অত্যন্ত সময়োপযোগী লেখাটি। যেহেতু আইটির সাথে জড়িত সেহেতু ভালো মন্দ অনেক কিছুই চোখে আসে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
হাসান- http://www.hebiro.com/
?
Sorry, it was a mistake punctuation sign.
Sorry it was a mistake punctuation sign.
Sorry, it was a mistake.
Sorry, it’s a mistake.
Loved this writing..This double standard society and people are mocking the word Feminism..Uneducated People..
মানুষের বিবেক যখন মরে যায় তখন মানুষ এধরনের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়।এ জন্য ছেলে মেয়ে উভয় দায়ী কারন তারাই এটার সুযোগ করে দিছে, আর পরে পস্তায়। কারন এখানে মেয়েদের ই বেশি ক্ষতি হয়।