নানা নাটকীয়তায় শেষ হলো নির্বাচনী প্রচারণা, প্রস্তুত গাজীপুর

gajipurউইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক (০৫ জুলাই): দেশের নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ১৭ দিন দীর্ঘ প্রচারণা গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে।

ভোটারের তুলনায় দ্বিতীয় ও আয়তনে সর্ববৃহৎ এই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রচারণায় হয়েছে নানা নাটক। শেষ দিনে দুই প্রধান প্রার্থীর প্রচারকর্মীদের মিছিলের মাধ্যমে নাটকীয় এই প্রচারণা শেষ হয়।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচন উপলক্ষে গাজীপুরে বহিরাগতের সংখ্যা বেড়ে গেছে গত কয়েকদিনে। সাধারণের চাইতে বেশী গাড়ি চলাচল করছে গাজীপুর মহাসড়কের ৫৯টি রুটে। নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতের প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও তা ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তারা যেকোন সময়ে সন্দেহভাজন যেকোন ব্যাক্তিকেই তল্লাশি করতে পারবে।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে কালো টাকা ছড়াছড়ির অভিযোগ ও রয়েছে। ভোটারদের মাঝে বিকাশের মাধ্যমে প্রার্থীরা টাকা ছড়াচ্ছে বলেও প্রচার হয়েছে দেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে। এসব অনিয়ম রোধে তেমন কোন কার্যকর ব্যাবস্থা না থাকলেও সবার আশা নির্বাচন কোন প্রকারের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্পন্ন হবে।

এদিকে প্রচারণার সময়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ শুরুতে দুই প্রধান প্রার্থীকেই দোয়া দিলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লাকেই সমর্থন দিয়েছেন প্রচারণা শেষ হওয়ার ১০ ঘন্টা আগে। এতে জাতীয় পার্টির কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। স্থানীয় জাপা নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষ থেকে সরে আসা সম্ভব নয়।

সর্বাধিক আলোচিত এই সিটি কর্পোরেশান নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের দিকে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দুই বড় দলেরই নেতা কর্মীরা। একদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম থেকে শুরু করে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি আজমত উল্লার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মির্জা আব্বাসও ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী আবদুল মান্নানের পক্ষে প্রচারণার কাজে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন।

১০ লক্ষাধিক ভোটারের এই সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আগামীকাল গাজীপুরবাসী তাদের নগর-পিতা নির্বাচন করবেন।

নির্বাচনী এলাকায় মোট ৩৮৪ টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই নির্বাচনের সকল সরঞ্জমাদিও গাজীপুরে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

সর্বমোট ১০ লাখ ২৬ হাজার নয়শ ৬৪ জন ভোটার ভোট দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এর মধ্যে নারী ভোটার পাঁচ লাখ ২৭ হাজার সাতশ ৮৩ জন ও পুরুষ ভোটার চার লাখ ৯৯ হাজার একশ ৮১ জন।

নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসেবে মোট ৭৭টি পদের জন্য ভোট লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন প্রায় ৫৮২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র প্রার্থী ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ৪৫৭ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ১২৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মোট ৮৪৭ জন র‌্যাব সদস্য কাজ করছেন। শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর নির্বাচনী এলাকাকে গাজীপুর ও টঙ্গী নামে দুটি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরকে তিনটি সাব-সেক্টর ও প্রত্যেকটি সাব-সেক্টরকে পাঁচটি ডিটাচমেন্টে ভাগ করা হয়েছে।

প্রতিটি ডিটাচমেন্টে এক জন অফিসারের নেতৃত্বে দুটি টহল দল কাজ করবে। অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে প্রতিটি সাব-সেক্টরে ৮ সদস্য করে ১৬ জনের ২টি স্ট্রাইকিং টিম রিজার্ভ থাকবে। এছাড়া বম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড ও প্রয়োজনে হেলিকপ্টার কাজে লাগানো হবে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.