আসমা আক্তার সাথী:
কবে, কোথায় কীভাবে আমি বা আমার পরিবার কোনো বিপদে পড়বো কিনা তা কে জানে। আজ যদি আমি কারো বিপদে এগিয়ে আসি তাহলে আমি নিশ্চিত আমার বিপদেও কেউ না কেউ এগিয়ে আসবে। দুনিয়াটা গিভ এ্যান্ড টেক এর। কেউ স্বীকার করুর বা না করুক এটাই সত্যি। মানুষ হয়ে জন্মেছি কোন মানবিকতাই যদি না থাকে তবে এ জন্মই যে বৃথা।

দয়া করে সবাই মানবিক হোন প্লিজ। এ এক
আতঙ্কিত মায়ের আকুতি। এই আকুতি যদি আপনারা শোনেন, তাহলে হয়ত বাঁচানো যাবে অনেক সুরাইয়া আক্তার রিশাকে। যে রিশা ঘাতকের আঘাতে ক্ষত- বিক্ষত হয়ে জীবনযুদ্ধে হেরে গেল। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই যার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিল এক মানুষরূপী অমানুষ। দিন দুপুরে রাস্তার মাঝখানে শত শত মানুষের সামনে প্রকাশ্যে একটি কিশোরী মেয়েকে ছুরিকাঘাত করে খুনি পালিয়ে গেল। কেউ তাকে বাঁধা দেবার জন্য এগিয়ে এলো না!
একটি মানুষেরও মনুষত্ববোধ জেগে উঠলো না? ১/২ মিনিটের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেনি নিশ্চয়ই। একটি মেয়ে ছুরিকাঘাতের ফলে মারা গেল, তবে সে আঘাত কতটা গভীর হয়েছিল, ভেবে দেখুন তো। রিশাকে রক্তাক্ত করতে যতোটা সময় লেগেছিল, সে সময়ে কেউ কী একজন ছিল না, যার মনে এতোটুকু মায়া জন্মেছিল?
খুনি তো কয়েকজন ছিল না, মাত্র একজন অমানুষ, কিন্তু রাস্তায় ছিল অন্তত ৫০ জন মানুষ। কারও চোখে পড়লো না? তবে কি তারাও অমানুষ ছিল? আহা মা রিশা! আমাদের ক্ষমা করে দিস আমাদের এ অক্ষমতার জন্য। এমন নয় যে ঘটনাটি রাতে ঘটেছে, ঘটনা ঘটেছে দিন দুপুরে।

এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা! অনেকেই হয়তো ভাবছেন আমি রিশার পরিবারের জন্য সান্ত্বনার বাণী না লিখে বা খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবি না জানিয়ে সমাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলছি, পথচারীদের মানবিক হতে বলছি, এ আবার কেমন ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ!
এবার তবে কারণটা বলি। আমরা একটু মানবিক হলে, সাহসী হলে আর সোচ্চার হলে ওই খুনি ওবায়েদ এ ঘটনাই ঘটাতে পারতো না, আর পালানো তো দূরের কথা।
খুনির গ্রেপ্তার এবং তারও পরে শাস্তির কথা আসে। কী লাভ এসব বলে? রিশা মরলো তো মরলো, তাতে প্রশাসনের কী এলো-গেলো। রিশা কি তাদের মেয়ে? রিশার খুনি কি দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে? সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে জঙ্গীরা। সুতরাং তাদের ক্রসফায়ার যত দ্রুত হবে, রিশার খুনি ওবায়েদের ক্রসফায়ার কি তত দ্রুত হবে?
রিশার মতো এমন আরও কত ঘটনার খুনিরা, সন্ত্রাসীরা এ সমাজে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আর রিশার ঘটনা তো সদ্য প্রসূত। এখনই বিচার? পাগল নাকি! ”পুরান পাগলে ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি’।
এখন বলবেন, তো আর লিখে লাভ কী? লিখছি এ কারণে যে আমিও একজন মা। আমারও আছে পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান। যার মায়ায় আমি আচ্ছন্ন। যার ভবিষ্যত নিয়ে আমি যারপর নেই উৎকন্ঠিত এবং আতঙ্কিত।

পথচারী ভাইবোনেরা, আপনাদের কাছে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা আঁচল পেতে ভিক্ষা চাই। বলি কী চলুন, দেশব্যাপী আমরা সাধারণ মানুষরা সচেতন হই, গণজাগরণ গড়ে তুলি, শপথ করি আমাদের সামনে আমাদের সন্তানেরা যেন আর কোনদিনও রক্তাক্ত না হয়। আমরা মায়ার বাঁধনে তাদেরকে বেঁধে রাখি। আজ আপনি আমার সন্তানকে বাঁচালে, কাল আমি বা অন্য কেউ বাঁচাবে আপনার সন্তানকে। এটাই নিয়ম। কারণ আমাদের মেরে ঠেকানো যাবে কি গণজোয়ারের ঢেউ?
গত ২৪ আগস্ট উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী স্কুলের সামনেই দুপুর নাগাদ পদচারী সেতু পেরিয়ে নিচে নামার সময় ওবায়েদ নামের এক দুর্বৃত্তের হাতে ছুরিকাঘাত হয়ে ২৮ আগস্ট ঢাকা মেজিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। জানা গেছে, দোকান কর্মচারি ওবায়েদ প্রায় আট মাস ধরে রিশাকে উত্যক্ত করে আসছিল।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রভাষক
২৯.৮.১৬
বাঙ্গালী জাতি না কি মাকে বড় ভালবাসে? তাই যদি হয়, তবে মায়ের ডাক পৌঁছে যাক সবার ভেতর।