এতো কাম-ক্ষুধা কোথা থেকে এলো?

তামান্না ইসলাম: ঘটনা ১- এক তরুণী ঢাকার এক নামকরা হাসপাতালে একজন অত্যন্ত নামকরা ডাক্তার দেখাতে গেছে। ডাক্তারের বয়স ষাটের কাছাকাছি। পুরুষ ডাক্তার, গাইনির ডাক্তার  না, অন্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। রোগীর দেহ পরীক্ষা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে রোগী অবাক হয়ে লক্ষ্য  করলো যে ডাক্তার তার শরীরের সব আপত্তির জায়গায় (রোগের সাথে যে অংশের কোন সম্পর্ক নেই) হাত বুলাচ্ছে।  

alexandriastreetartbyayatarekঘটনা ২- একজন চল্লিশোর্ধ্ব নারী ঢাকা এয়ারপোর্টে লাগেজ স্ক্যানিঙে দিচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সিকিউরিটির  এক অল্প বয়স্ক ছেলে, বড়জোর আঠার-ঊনিশ বছর বয়স। সে হটাৎ করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে লাগেজ টানার ছলে  ওই নারীর বুক স্পর্শ করলো। ভোর পাঁচটা, আশে-পাশে কেউ নেই। সেই নারীটি একইসাথে বিব্রত এবং বিরক্ত, ভাবলো ছেলেটির হয়তো ভুল হয়ে গেছে। সে যতোটা সম্ভব স্বাভাবিক থেকে তার সন্তানের বয়সী ছেলেটিকে বললো,  “এরপর থেকে সাবধানে থাকবেন, এমন যেন আর না হয়।”

ছেলেটির হাব-ভাব দেখে ওই নারীর সন্দেহ হলো,  দুঃখিত বলা দূরে থাক সে যেন শুনতেই পায় নাই। এইবার তার মেজাজ বেশ খারাপ হলো। বেশ কড়া গলায় উচ্চস্বরে আগের কথাটি বললো। ছেলেটি ঘাবড়ে যেয়ে তাড়াতাড়ি  দূরে সরে গেল।

ঘটনা ৩- এক সুন্দরী তরুণী সিএনজিতে উঠেছে একা। মেয়েটিকে দেখে তার যে দুটো বাচ্চা আছে একদম বোঝা যায়  না। খুব নিষ্পাপ সরল চেহারা। আপাদমস্তক ঢিলাঢালা পোশাকে ঢাকা। সিএনজি চালক তার আয়নাটাকে এমনভাবে সেট করলো যেন মেয়েটাকে দেখা যায়। মেয়েটা ভয় পেয়ে দেখলো লোকটি সারাক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পরে মেয়েটি হিম হয়ে গেলো যখন সে দেখতে পেলো সিএনজিচালক মাস্টারবেশন  করছে। পুরো চল্লিশ মিনিটের পথ এই ঘটনা চলেছে।

ওপরের তিনটি ঘটনাই সত্যি। প্রায় প্রত্যেক মেয়ের জীবনে কোনো না কোনো এক সময় এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এবং সাম্প্রতিক সত্যি ঘটনাও বটে।  এই ঘটনাগুলো যখন শুনি, আমার মাথায় আগুন জ্বলে, অস্থির লাগে নিজেদের অসহায়ত্বে, তারপর নিজে নিজে সেই আগুনকে ঠাণ্ডা করি, এক সময় রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করে, কী হবে আর এসব নিয়ে কথা বলে?

কী হয়েছে বাংলাদেশে? বছর বিশেক আগেও তো এসব ঘটতো না। দুই নম্বরটা যদিও বা ঘটতো, সেটা ঘটতো কিশোরী, তরুণীদের সাথে। বাংলাদেশের বাতাসে কি ভায়াগ্রা ভেসে বেড়াচ্ছে? এতো কামনা, বাসনা কোথায় লুকিয়ে ছিল এতোদিন?  

একজন তরুণ-যুবাকে দেখে একজন তরুণী বা একজন তরুণীকে দেখে একজন যুবকের শরীর জেগে উঠতেই পারে, হয়তো একেকজনের একেক রকম, সেটা প্রকৃতির কন্ট্রোলে, কিন্তু তারপরেও তার বহিঃপ্রকাশ কী হবে সেটা মানুষের নিজের কন্ট্রোলে। সেই কন্ট্রোলকে কতোভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়, ধর্ম, সমাজ, সভ্যতা সবকিছুর একটাই লক্ষ্য, মানুষ যেন পশুর মতো আচরণ না করে।

দেশে তো মনে হয় ধর্মচর্চা বেড়েছে। সেই সাথে আধুনিকতাও। আধুনিকতা যদি বেড়ে থাকে, তাহলে সভ্যতাও কি আরও বাড়ার কথা ছিল না? আমরা যদি প্রকৃত অর্থে ধার্মিক বা সভ্য – এর যেকোনো একটা হই, তাহলে কি এই পাশবিকতা কমার কথা ছিল না? তাহলে কেন উল্টো পথে চলছি আমরা? আমাদের সমস্যাটা কোথায়? এখন আর এগুলো ভাবতে ইচ্ছা করে না, প্রচণ্ড রাগে অন্ধ হয়ে মাঝে মাঝে মনে হয় দেশে যদি একটা আইন হতো, গণহারে এইসব পুরুষের পুরুষাঙ্গ কর্তন করা হতো, হয়তো মনে একটু শান্তি পেতাম।

 

শেয়ার করুন: