ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী: ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে খবরটি।

স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর এই স্বীকৃতি কাঙ্খিত, প্রত্যাশিত এবং প্রাপ্য ছিল বলে আমি মনে করি। ‘৭১ এর বীরাঙ্গনাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেবার এই সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। সন্তান হিসেবে আমার বা আমাদের কাছে এটা অবশ্যই গর্বের। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমাদের কাছে তাঁর এই প্রাপ্তিটুকু বহু আগেই অর্জিত, তাই জাতীয়ভাবে তিনি যদি তা নাও পেতেন, তাতেও আমাদের কাছে তাঁর বীরত্ব কিছু কমতো না।
তবে কাল থেকে সারাক্ষণ একটা বিষয় আমাকে ভীষণ ভাবিয়েছে, তাহলো আমার মায়ের সারা জীবনের যে যুদ্ধের আমরা নিরন্তর সাক্ষী তার খুব সামান্য অংশই এদেশের মানুষ জানে। তাঁর নিজের লেখা ” নিন্দিত নন্দনে” বইতে মুক্তিযুদ্ধসহ জীবনের নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে ঠিকই, কিন্তু মানুষ হিসেবে যারপরনাই ক্ষমাশীল এই সংগ্রামী শিল্পী মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রতিনিয়ত তাঁর ক্ষত-বিক্ষত সম্মানের কথা বলতে গেলে কিছুই বলেননি তাঁর উদারতা আর ক্ষমাশীলতার কারণে।
তিনি বলেননি আমার বাবার পরিবারের মানুষেরা নাবালক তিন কন্যা সন্তানের সামনে দিনের পর দিন অশ্রাব্য ভাষায় কীভাবে তাঁর চরিত্রহনন করেছে। আমরা তিন বোন চোখ ফুটেই তাঁর এই অপমানিত জীবন দেখেছি। দেখেছি শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত বলে খ্যাত একটি পরিবার কতটা অমানবিক,অশিক্ষিত আচরণ করতে পারে একজন যুদ্ধবিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত মানুষের সাথে।
আমার ছোট্টবেলার স্মৃতিতে আজো স্পষ্ট সেইসব বিষবাক্য,” দুশ্চরিত্র ” এবং এর সমার্থক আরও অসংখ্য শব্দের সাথে তখন থেকেই আমার পরিচয়। আমার মনে পড়ে আমার বাবার বড় বোন যিনি জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তিনি একদিন আমাদেরই সামনে আমার মাকে বলেছিলেন, “তুমি তো ব্রথেল থেকে আসা একটা মহিলা”… অর্থ না বুঝলেও বুঝতাম যে এগুলো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কোনো শব্দ, কারণ এগুলো ব্যবহার করে আমার মাকে অপমান করা হচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে শহীদ হওয়া আমার চাচা শহীদ খোকন এই পরিবারেরই সন্তান। কোনোদিনই এই শহীদ সন্তানকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হয়নি ওই বাড়িতে। বাড়িটিকে মনে হতো যেন আস্ত একখণ্ড পাকিস্তান।
মনে পড়ে ক্লাস সিক্সে সানফ্লাওয়ার স্কুলে বছরের প্রথম ক্লাস, আমরা তিন বোন স্কুলে যাবো বলে তৈরি হয়েছি, দাদাবাড়ি ধানমন্ডি ৭ এর পানাউল্লাহ হাউজ তখন কুরুক্ষেত্র। আম্মু-আব্বু কাউকে বাড়িতে না পেয়ে আমার উপরে অকারণেই হুংকার শুরু করেছে বড় ফুপুর ডাক্তার পুত্রবধূ। ফোনে কান্নাকাটি শুনে আম্মু ৮ নম্বরের অফিস (জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা) থেকে দুই ঘণ্টার ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে এলো। আম্মু ঢোকামাত্র সেই তথাকথিত শিক্ষিত ডাক্তার ভদ্রমহিলা (?) বাড়ি কাঁপিয়ে হুংকার ছাড়লো, “আপনি একজন স্টুপিড, বাস্টা**, প্রস্****… লজ্জা লাগে না তিন ছেলে নিয়ে বিয়ে করেন?”… (এভাবেই একসময় ও বাড়ির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয় আমার বাবাকে।)
সেদিন স্কুলের হেড মিসট্রেসকে একটি ব্যক্তিগত চিঠি দিয়ে আম্মু আমাদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে অফিসে ফিরে যায়। চিঠি পড়ে তিনি আমাদের তিন বোনকে কাছে ডেকে সস্নেহে বলেছিলেন, আমরা যেন স্কুলে নিয়মিত আসি, বাড়িতে মন খারাপ করে না থাকি।
স্কুলে গিয়েও (বি.এ.এফ. শাহীন স্কুল, যশোর) শিক্ষকরূপী একধরনের অদ্ভুত মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে দিতে হতো, যার বেশিরভাগই বাবা-মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে এবং আমরা ছয় ভাইবোন আপন কীনা, সেই প্রসংগে। আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম এই সত্যগুলোর মুখোমুখি হতে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, যেসব ভাইবোনদের আম্মু মাতৃস্নেহে লালন-পালন করে এসেছেন আজীবন, তাদের কাছ থেকেও প্রাপ্য সম্মানের কিছুই তিনি পাননি, যদিও তা ভাবতে তিনি নারাজ। জানি সবকিছুকেই আমার মা ক্ষমা করে দিয়েছেন বহু আগেই। জানি যে ভালোবাসা এই দেশের মানুষ তাঁকে দিয়েছে তার কাছে এসব অতি নগণ্য। তবু আজ সারাদিন শুধু এই কথাগুলোই আমি ভেবেছি। এতো কিছু সত্বেও আমাদের ছয় ভাইবোনের মধ্যে আব্বু-আম্মু কোনোদিন বিভেদ শেখায়নি, এতো কিছু সত্বেও আমাদের কাছে কখনো মনে হয়নি আমার মা ‘দুশ্চরিত্র’। স্বামী -সন্তানদের কাছে তাঁর জীবন একটা খোলা বইয়ের মতো,সেখানে কোনো লুকোচুরি ছিলো না।
আজো আমার মা আমাদের পরিবারের বটবৃক্ষ। মা, আজো তোমার যুদ্ধ থামেনি আমি জানি। তোমার জীবনের যুদ্ধগুলো তুমি একাই লড়ে যাচ্ছো অবিরাম। তাতে আমরা কেউ শামিল হতে পারিনি। তবুও তুমি বারবার ভাবতে শিখিয়েছো, জীবন কত সুন্দর! তোমার হৃদয়ে আকাশের বিশালতা। তাই তোমার চোখে তো “সকলই শোভন, সকলই নবীন, সকলই বিমল”…।
আজকে আমার অপ্সরী – ঊর্বশী তাদের নানীর জন্য গর্বিত। তাঁদেরকে কোনো শিক্ষকের প্রশ্নবানে অপদস্থ হতে হয় না মা। তোমার বীরাঙ্গনা তথা মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে “চির উন্নত মম শির”। সমগ্র বাংলাদেশের সাথে আজ আমরাও তোমার প্রতি শ্রদ্ধায় নতজানু মা। জয় বাংলা।
খুবই ভাল লেগেছেমেয়ে হিসাবে আপনাকে ও সেলুট আমরা সন্মান করতে জানি না।আমি গব বোধ করছি আপাকে সালাম ।আমাদের বাচ্চাদের ও সকলকে দেশ পেম শিখাতে হবে
এতদিন লাগল। তবুও স্বীকৃতি পেলেন। আমার হাজার সালাম ।
আমি গর্বিত এই মহিয়ষী জননীর জন্য । যে ভাবেই হোক তিন কুড়িগ্রামের পুত্রবধূ । তার শশুড় বাড়ির অনেকেই বনেদী পাকিস্তানী হলেও তিনি ও তাঁর দেবর শহিদ খোকন সে পাপের কিছু স্খখলন ঘটিয়েছেন।
আমি আমার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক অনেক লেখাতেই তাঁকে সম্মানের সাথে কুড়িগ্রামের বধূ হিসেবে উল্লেখ করেছি। তাঁকে কুড়িগ্রামবাসীর পক্ষে শত কোটি প্রণতি জানাই।
Tomar ei apamaner jonno rastro ei muloto daye. Sikriti dite 45 bachar laglo !!!!!!! Surute sikriti dile hoito eto opoman tomake sajjo korte hotona. Tomar samne kokhno jete parle tomar hat ta chuye dektam ki datute tume toiri. Eto opoman sojjo koreo sobaike khoma kore diyecho. Tpmar moto mayer avab ei jatike agote deyni. Salute tomake.