কাকলি রানী দাস: বেশকিছুদিন ধরে কবি গুলতেকিন খানকে তুলাধুনা করা কয়েকজনের লেখা চোখে পড়ছে। গতকাল শেষ বিকেলে একজনের লেখা দেখে খুব অবাক হলাম, কিছু লেখার জন্য হাত নিশপিশ করছিল। তার লেখায় যে মন্তব্য করেছি তাকেই একটু আধটু পাল্টে এখানে তুলে দিলাম:
গুলতেকিন খান যখন বিয়ে করেন তখন হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের একজন নবীন শিক্ষক এবং অখ্যাত ও দরিদ্র লেখক, তখনও তিনি জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ হননি। কিন্তু গুলতেকিন খান ছিলেন তখনকার সময়ের বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজাত, শিক্ষিত এবং ধনী পরিবারারগুলোর একটির মেয়ে (তিনি প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খানের নাতনী)।
যেই বয়সে একজন কিশোরী চোখে রঙ্গীন স্বপ্ন নিয়ে অবাক চোখে চারপাশের পৃথিবীকে দেখে, সেই বয়সে তিনি দুই হাতে একটি দরিদ্র পরিবারকে সামলেছেন, পাঁচটি সন্তান জন্ম দিয়েছেন এবং এদের মধ্যে চারজনকে লালন পালন করছেন। তারপরও তিনি এই কঠিন দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাশ করেছেন, স্বামীর নাম বা ক্ষমতা ব্যবহার না করেই। ঊনার থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক সুবিধাজনক অবস্থার মধ্যে থেকেও আমরা অনেকেই যেই যোগ্যতা দেখানোর ক্ষমতা রাখি না।
গুলতেকিন খান তার সংসার জীবনে কতটা সংগ্রাম করেছেন, তার ভালবাসার মানুষ সবচেয়ে কাছের মানুষের কাছ থেকে কতখানি অসহযোগিতা, অবহেলা আর অসম্মান পেয়েছেন – আজ সেই কথাগুলো বলা শুরু করতেই সেগুলো অনেকের কাছে `বেডরুমের` কেচ্ছা হয়ে যায়। এর সমালোচনা করে অনেকেই বড় বড় লেখা লিখেছেন, যাদের অনেককেই আপাতদৃষ্টিতে মার্জিত ও রুচিবোধসম্পন্ন মানুষ মনে হয়। কিন্তু দিনশেষে তারা নিজেকে শুধুমাত্র একজন স্বার্থপর আর সংকীর্ণ মানসিকতার মানুষ হিসেবেই প্রমাণ করেছেন।
অনেকের গুলতেকিনের শব্দচয়ন ভাল লাগেনি। দয়া করে একটু বলবেন কি `আমার সাবেক স্বামী` বা `আমার সাবেক স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী` এই শব্দ দুটোর পরিবর্তে গুলতেকিন খান ঠিক কী কী শ্রুতিমধুর শব্দ ব্যবহার করতে পারতেন?? তার বিবাহ বিচ্ছেদের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
দুজন মানুষের বিয়ে এবং বিচ্ছেদ অত্যন্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, তারপরও এই জ্ঞানীদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, বিচ্ছেদটা কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল (যদিও উল্টোটা হওয়াই যুক্তিসংঙ্গত ছিল) – তাই `ছাড় দেয়া` বা সংসার ভাঙ্গার মতো অভিযোগ যদি করতেই হয় তবে সেটা হুমায়ূন আহমেদেকেই করা দরকার ছিল।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, গুলতেকিন খান কেন এতোদিন এই অভিযোগগুলো তোলেননি। তাদের বলছি – হুমায়ূন আহমেদ যখন গুলতেকিন খান এবং তাদের চার সন্তানকে ছুঁড়ে ফেলে তার দ্বিতীয় সন্তানের বান্ধবীকে বিয়ে করে মধুচন্দ্রিমা যাপনে ব্যস্ত ছিলেন, তখন গুলতেকিন খান ব্যস্ত ছিলেন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সন্তানদের পরম মমতায় আগলে রাখতে, ব্যস্ত ছিলেন একইসাথে সন্তানদের মা আর বাবার দায়িত্ব পালনে।

হুমায়ূন আহমেদও হয়তো তাই তার শেষ জীবনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে মরতে পেরেছিলেন যে, তার চরম দায়িত্বহীনতার কোন ছোঁয়া গুলতেকিন খান তার প্রথম পক্ষের চার সন্তানের জীবনে লাগতে দেননি। হয়তো একারণেই নিজের কষ্টের কথাগুলো বলার সময়ও তিনি আগে করে উঠতে পারেনি।
লেখক বা ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদ কোন ঈশ্বর ছিলেন না, একজন রক্ত মাংসের দোষে-গুণে মানুষ ছিলেন। লেখক হিসেবে তিনি অসম্ভব জনপ্রিয় বলে তার কোন দোষ থাকতে পারবে না? তিনি অসংবেদনশীল হতে পারবেন না? বা এগুলো নিয়ে কিছু বলা যাবে না? – কেন?
অনেকে অভিযোগ করেছেন গুলতেকিন খান নাকি সস্তা জনপ্রিয়তা বা খ্যাতি বা আলোচনায় আসার জন্য এইসব কথা বলেছেন। তাই যদি হতো, তবে তিনি হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতেই এইসব নিয়ে বই লিখতেন। কাঁচা হাতের লেখা (অনেকে সেইরকমই মন্তব্য করেছেন) হলেও আপনাদের মতো পাকা পাঠকরা নিশ্চয়ই সেই বই কিনে তাকে ধন্য করতেন – এখনকার থেকে কয়েকগুণ বেশি আলোচনা হতো তাকে নিয়ে, তাই না?
আর শ্রদ্ধার কথা বলছেন?? আপনাদের মতো পাঠক গুলতেকিন খানকে কখনও শ্রদ্ধা করেননি, করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রীকে, যে কিনা লেখক হুমায়ূনকে শত শত উপন্যাস, নাটক, গল্প লিখে, তৈরি করে আপনাদের সামনে হাজির করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং আত্মত্যাগ করেছেন – আর এটাকে বলে স্বার্থপরের শ্রদ্ধা। গুলতেকিন খানের মতো একজন নারীর ঐ কয়েকজনের শ্রদ্ধা না করা বা পছন্দ না করাতে কীইবা আসে যায়?
আরো জানেন বোধ হয়, হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত `দখিন হাওয়া` নামে যেই ফ্লাটে থাকতেন এবং এখনও তার দ্বিতীয় স্ত্রী তার সন্তানদের নিয়ে থাকেন সেটা কিন্তু গুলতেকিন খানের বাবার বাড়ির সম্পত্তি। অসম্ভব জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ যেখানে দ্বিতীয় সংসার পাতার মতো রুচিহীন এবং স্বার্থপর কাজ করতে একটুও দ্বিধা করেননি। আর তাই তার অন্ধ পাঠকদের কাছ থেকে বোধ হয় এর থেকে বেশি কিছু আশা করাটাই বোকামি।
অনেক ভাল লাগল লেখাটি পড়ে। সত্যকথনের জন্য ধন্যবাদ।
Bhai Rani Das .. valo likhchen .. apnar lekha pore ekta kotha share naa kore parlam naa .. once upon a time, Humayon Ahmed ke niye onek kothar reply Boro Bhai e vabe diyechilen, “Humayon Ahmed ekjon sahoshi lok, voog / vul sobai kore, but samagic morjada dibar sahos khub kom luker takhe.” .. kothata amar eto valo leghechilo .. .. .
Darun likhesen apu pore khub khub valo laglo…………..
Ranidi darun likhachan, atai bastab o aprio holao shatti. Apnaka anak thanks.
Thanks a lot for presenting the truth.