হুজুর, জ্বীন, জঙ্গি, জিহাদ-সবই একসূত্রে গাঁথা?

তামান্না স্বর্ণা: ঘটনা ১. আমার মা প্রতিদিন গৃহকর্মি মেয়েটির জন্য ইফতারি পাঠায়। মেয়েটির সাত বছরের ছেলে এসে নিয়ে যায়। পথে এক মসজিদের হুজুর সওয়াবের লোভ দেখিয়ে ওই বাচ্চাটির হাত থেকে ইফতারি নিয়ে যায়। সে নাকি বলে, তোর জন্য অনেক দোয়া করবো, ইফতারিটা দিয়া যা। আমার মা এই কথা শুনে হুজুরের জন্যও ইফতারি পাঠায়। পরদিনও একই কাণ্ড। একটা মেয়ে রোজা রেখে সারাদিন কাজ করে মানুষের বাসায়। তার মুখের গ্রাস কেড়ে নিল? এমন পাপিষ্ঠও হয়?

Tamanna Swarna
তামান্না স্বর্ণা

ঘটনা ২. আব্বা খুবই ধর্মভীরু। খুবই ভালো কথা। তো আমার ভাই হঠাৎ করে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক চিকিৎসা করেও কোন লাভ হচ্ছিল না। শেষতক আব্বা এক হুজুরের শরণাপন্ন হন। সে ভান করতো তার সাথে জ্বীন আছে, সে নিজেই নাকি সুরে কথা বলতো এবং ভান করতো জ্বীন কথা বলছে। বাসার সবাই তো দারুণ খুশি। জ্বীন সব সমস্যার সমাধান করে দিবে। সে সবাইকে চমৎকারভাবে কনভিন্স করল সে মহামানব এবং এরপর থেকে তার প্রতিনিয়ত আমাদের বাসায় আসা-যাওয়া শুরু হল। তার বয়স কম হলেও ৬০ হবে। চিকিৎসার নামে বাসার যত মেয়ে ছিল সে কৌশলে প্রতিটি মেয়ের বুকে হাত দেয় এবং মহিলাদেরও নানাভাবে হ্যারাস করে। পরে কাহিনী জানাজানি হলে সে আসা বন্ধ করে।

ঘটনা ৩. আমি এক হুজুরের কাছে আরবি পড়তাম। আমার ছোট বোনের বয়স তিন বছরের মত হবে। আব্বার খুব শখ একজনকে হাফেয বানানোর। দোষের কিছু নয়। তাই সে আমার ছোট বোনকে আমার পাশে বসিয়ে দিয়ে গেল। হুজুর আদর করে তাকে কোলে নিয়ে বসালো। এভাবে কয়েকদিন গেল। কোরান পড়তে হতো উবু হয়ে। একদিন ঘাড় উঠিয়ে দেখি হুজুরের হাত আমার বোনের বুকের উপর। তিন বছরের একটা বাচ্চার স্তনের কি কোন অস্তিত্ব থাকে? জানি না। কতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। আজও ঘৃণায় রি রি করে উঠে সারা শরীর।

ঘটনা ৪. আমার দাদি এক পীরের মুরিদ ছিলেন। তিনি অনেক ভাল মানুষ ছিলেন। তার ছেলেও একজন হুজুর। তার আমাদের বাসায় নিয়ত আসা-যাওয়া ছিল। তার সাথে তার নারী-পুরুষ মুরিদরাও আসত। একদিন দুইজন মহিলা নিয়ে আমাদের বাসায় উঠলেন। তাদের সাথে কথা বলতে বলতে কী জানি হলো, সবাই দেখলো, ঘরের ভিতর কী হয়েছিল সেটা আমরা কেউ আজও জানি না বা জানতে চাই না।

মূল প্রসংগে ফিরে আসি। এই সব হুজুরদের মুখ দিয়ে ধর্মের কথা শুনলে নাক দিয়ে মুখ দিয়ে পানি আসে, আমারও এসেছিল। এরা আসলে কারা? এরা একদল শকুনি যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষের রক্ত শুষে নেয়, ধর্মের নাম দিয়ে এরা এদের মনের নোংরা কামনা বাসনা পূরণ করে। এদেরই এক নতুন ভার্সন হলো জঙ্গি সম্প্রদায়। পৃথিবীতে সব মানুষ একটা জিনিসই চায় সেটা হলো ক্ষমতা। সে যেই হোক না কেন।

আফগানিস্তান এ খেলাফত আন্দোলন শুরু করে ছিল একদল শরিয়ত বাদীর দল। সাধারণ মানুষ কিছু না বুঝেই ধর্ম রক্ষার নামে তাদের সাহায্য করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা তাদের সবচেয়ে বড় ভুল বুঝতে পারে। কারণ এরা কোন ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে চায়নি। তৎকালিন প্রেসিডেন্টকে সরাতে এই আন্দোলন শুরু করেছিল তারই প্রতিপক্ষ। তার পরে আফগানিস্তান দখল করে রাশিয়া এবং তাদের প্রতিহত করতে আমেরিকা তালেবানদের ব্যবহার করে। বাকি ইতিহাস জানা।

আমাদের দেশে এরকম কিছু যে হচ্ছে না তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। আপনারা আপনাদের ধর্মীয় গুরু দিয়ে মোটিভেট হচ্ছেন, কখনও কি জানতে চেষ্টা করেছেন সে তার পথ ঠিকমতো অনুসরণ করছে কিনা! ইসলাম বাঁচানোর জন্য কোথাও নিরাপরাধ মানুষ হত্যা করার কথা বলা আছে কিনা কোরান হাদিস ঘেঁটে দেখেছেন? নাকি আপনি মরীচিকা অনুসরণ করছেন?

তাদের কথা বিশ্বাস করেন যারা তিন বছরের বাচ্চার গায়েও হাত দিতে পারে? কোথায় আপনাদের war slave রাখার পারমিশন দেয়া আছে, দেখান, আমরাও দেখি কোন অধিকারে হাজার হাজার মেয়েকে যৌনদাসি বানিয়েছেন?

আমি বলছি না সবাই এক রকম। আমি নিজেও অনেক ভাল হুজুর দেখেছি এবং তারা সত্যি ইসলামকে ভালবাসেন, মন থেকে পালন করে নিজ বিশ্বাসকে। নিজের ধর্ম আগে নিজে ভাল করে জানুন, অন্যের মুখের কথায় মোটিভেটেড হবেন না। একটু ভালো করে পড়াশুনা করুন। তাহলে মাথায় যে তারের জ্যামটা হয়েছে সেটা কেটে যাবে।

কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কাউকে জবাই করার অনুমতি দিবে আমি অন্তত এইটা বিশ্বাস করি না।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.