মেয়েহীন বিবাহোৎসব: একটি ভয়ানক অভিজ্ঞতা

মোহাম্মদ আমিন: বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক এনাম, আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন- যেমন সদালাপী তেমন অমায়িক। চন্দনাইশ, আমাদের একই উপজেলায় বাড়ি। এনামের মা-বাবা, ভাই-বোন ও পরিবারের প্রায় সবাই আমেরিকায়। ১৫ জুলাই ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ এনামের ছোট ভাই হাফেজ রায়হানের বিয়ে। আমাকে অংশগ্রহণ করতেই হবে। এমন বন্ধুর দাওয়াত উপেক্ষা করার শক্তি ও ইচ্ছা কোনোটাই আমার নেই। প্রথম দাওয়াত দিয়েছিল আমেরিকা থেকে।

OLYMPUS DIGITAL CAMERA
ছবিটি সংগৃহীত

এনামের গর্বিত কণ্ঠ এখনও কানে বাজে : আমীন ভাই, আপনি তো জানেন, আমার ছোট ভাই একজন খুব বড় মাপের হুজুর ও কোরানে হাফেজ।

বললাম : জানি।

গর্বে আরও প্রগলভ হয়ে উঠেছিল এনামের গলা : শুধু জামাই নয়, বউ, বউয়ের মা, বউয়ের বাবা, বউয়ের ভাইবোন, বউয়ের নানা-নানি, বউয়ের আত্মীয়স্বজন এমনকি বউয়ের পড়শী পর্যন্ত প্রায় সবাই আলেম। বাঁশখালীর মেয়ে তবে চট্টগ্রাম শহরে থাকে। সবাই উচ্চশিক্ষিত। এমন আলেম পরিবার বাংলাদেশে আর নেই।

বলেছিলাম : ভালো।

ব্যক্তিগত কিছু কাজ পড়েছিল চট্টগ্রামে। সময় করে ওঠতে পারছিলাম না। বিয়ে উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম গেলে ওই কাজগুলোও সেরে আসার সিদ্ধান্ত নিই। তাই ছুটি নিয়ে বিয়ের দুদিন আগে চট্টগ্রাম চলে যাই। বিয়ের পূর্বের রাতে রিং করে এনাম, ‘ভাবীকেও আসার জন্য বলতাম কিন্তু এ বিয়েতে কোনো মেয়ে অ্যালাউ না। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বলতে পারিনি’।

আমি একাই বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব। আমার বউ ঢাকায়। অতএব এতে আমার কিছু যায় আসে না। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে “কোনো মেয়ে অ্যালাউ না ”- কথাটি আমার কাছে সাংঘাতিক পশ্চাৎগামিতা ও মারাত্মক উদ্ভট মনে হলো। বেগম রোকেয়ার প্রপিতামহও বুঝি এমন কথা শুনলে আঁতকে ওঠতেন। মেয়েহীন বিয়ে- এ কী শুনলাম! তাহলে বিয়েটা কার সঙ্গে হচ্ছে? এনামকে নয়, নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি।

কমিউনিটি সেন্টারের নাম পিসি পার্ক, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।

বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি, বর বেচারা প্রাত্যহিক পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরে স্টেজে বসে আছে। এটাই তার সাধারণ পোশাক। তার দুপাশে দুটি করে চারটি চেয়ার। তাতে কয়েকজন মুরুব্বি বসে আছেন। সবার মুখে দাড়ি। বিয়ের স্টেজে কনের জন্য কোনো স্থান নেই। তাহলে জীবন-স্টেজে কীভাবে স্থান হবে? অনুষ্ঠানে মেয়ে দূরে থাক, বিপরীত লিঙ্গের কোনো শিশু পর্যন্ত চোখে পড়ল না। প্রায় ৯৫ ভাগ অতিথির মুখে দাড়ি। কোথায় এলাম? এটা কী বাংলাদেশ? আমি টাই পরে গিয়েছি। নিজেকে মনে হচ্ছিল অড ম্যান আউট। ইচ্ছা করছিল খেয়ে তাড়াতাড়ি এ অজানা স্থান থেকে চলে যাই। কিন্তু এনাম ছাড়বেন না, সবাইকে দেখাবেন- ‘আমিও এসেছি’।

থাক, বন্ধুর জন্য বন্ধুর পথ অতিক্রম করাই বন্ধুত্ব।

বিয়ের অনুষ্ঠান কিন্তু কোনো হৈ চৈ নেই, আনন্দ নেই, উল্লাস নেই, উদ্দীপনা নেই, হাসি নেই, জীবনের জয়গান নেই, সৃষ্টির কোনো মাদকতা নেই – চারিদিকে থমথমে ভাব। মনে হয় কোনো ভয়ঙ্কর কিছুর শঙ্কায় সবাই আতঙ্কিত। দেশীয় সংস্কৃতির ছিটফোঁটাও দেখা গেল না। ভারতীয় সংস্কৃতির অাগ্রাসনের মতো অন্য সংস্কৃতির আগ্রাসন মনে হলো। কারও হাতে কোনো ক্যামেরা নেই। ভিডিও হচ্ছে না।

এনাম ও তার আর এক ছোট ভাই জাহেদ মোবাইলে মাঝে মাঝে বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দের ছবি তুলছিল। আমাকেও বরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। কুট করে একটা ছবি তোলে নেন বরের সঙ্গে। বর আমার পূর্ব পরিচিত। আমেরিকায় তাদের বাসায় একসঙ্গে খেয়েছিলাম। এনাম বলল : হুজুরকে (ছোট ভাই, তিনিই বর ও কোরানে হাফেজ) অনেক বলে কয়ে শুধু মোবাইলে ছবি তোলার অনুমতি পাওয়া গেছে। শরিয়তের বাইরে সে কিছু করে না।

কনে কোথায়?

জিবে কামড় দেন এনাম : এমন প্রশ্ন করাও পাপ।

চন্দনাইশ পৌরসভার চেয়ারম্যান খোকা ভাই বললেন : আমার স্ত্রী ও মেয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসার জন্য রেডি হয়েছিল। ভাগ্যিস, গাড়িতে উঠার আগে এনাম রিং করে ‘মেয়ে অ্যালাউ না’ বাণী দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। নইলে মারাত্মক লজ্জায় পড়ে যেতাম।

এনাম হাসলো : বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়ে – হুজুরের না-পছন্দ।

আবার চারিদিকে তাকালাম। কোনো মেয়ে নেই কোথাও। যেন আজবপুরী। মেয়েহীন এমন বিয়ের অনুষ্ঠান- জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। মনে হচ্ছিল বিয়ে নয়, কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। সবাই শবানুগমনের জন্য প্রচণ্ড শোক নিয়ে অপেক্ষা করছে। তাই হাসতে পারছেন না কেউ, বলতে পারছে না কেউ।

(লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া)

শেয়ার করুন:

লেখাটি অতিরঞ্জিত। ইসলাম এগানা ও বেগানা আলাদা করেছেন। আর সেটা যেখানেই হোক না কেন। বিয়ের বাড়িতে এগানা বেগানা এক সাথে হয়ে যাবে এরকম নীতি ইসলামে নেই। আর ইসলামের নীতি অনুযায়ে বর বসে থাকে থাকবে মসজিদে এবং সেখান থেকে মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে এবং মেয়ের পছন্দ হলে বিয়ে করবে নয়তো রদ করে দিবে। এখানে জোড় পূর্বক কিছু নেই। প্রয়োজনে আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য জীবন পড়ে দেখতে পারেন। লিঙ্ক http://www.amarbanglapost.com/book-adorrsh-bibah/

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.