সাবিনা শারমিন: ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঐশী। হয়তো জল্লাদও প্রস্তুত হয়ে যাবে যথাসময়েই। শুনেছি ফাঁসির দড়িতে ঝুলালে জল্লাদেরও শাস্তি লঘু হয়। কিন্তু হতভাগ্য ঐশীর মৃত্যুদণ্ড হয়তো কোন কারণেই আর লঘু হবে না। কারণ ঐশীর অপরাধের বিচার কাজ প্রায় শেষের দিকে।

ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে ৭২০ পৃষ্ঠার পেপার বুক। নিম্ন আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হাইকোর্টের শুনানি বর্তমানে অপেক্ষমান।
পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে তাঁদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে দু’বার মৃত্যুদণ্ড দেন মহামান্য আদালত। প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকাও জরিমানা করা হয়। প্রধান বিচারপতির অনুমোদন পেলেই এই মামলার শুনানি শুরু হবে। হ্যাঁ, আইন তার নিজস্ব গতিতেই এগিয়ে চলছে। হয়তো ঐশীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়বিচার। তাই হয়তো অবশেষে ফাঁসির মঞ্চেই ঝুলতেই হবে ঐশীকে।
ফাঁসির মঞ্চে ওঠার আগে কোথায় থাকবে তার ছোট ভাই ওহী? তাকে কি জানানো হবে যে একমাত্র বেঁচে থাকা বড় বোনটিও সে হারাতে যাচ্ছে? ফাঁসির ক্ষণ ঘনিয়ে আসার আগে কি বাবা-মার মুখটি মনে পড়বে ঐশীর? যে বাবা-মাকে সে নিজ হাতে কুপিয়ে হত্যা করেছিলো, দড়িতে ঝুলে পরার সময় মেয়েটি কি মা বলে চিৎকার করে উঠবে? ঐশীর শেষ কথাটি কী হবে? সেকি বলবে, মা আমাকে তুমি বাঁচাও! আমি ভুল করেছি, আমাকে মাফ করে দাও। আরেকবার জন্ম নিলে তোমাদের দুঃখ দূর করবো আমি।
বাংলাদেশের অনেক মানুষ, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঐশীর ফাঁসিতে ঝোলার ক্ষণটির জন্যে অপেক্ষা করছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেয়ার জন্যে সমগ্র দেশ যেভাবে অপেক্ষা করে, আমরাও কি সেভাবেই অপেক্ষা করবো?
যে কোনদিন রাত বারোটা এক মিনিটেই হয়তো বা অধীর আগ্রহ নিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় জেলখানার বাইরে গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষ অপেক্ষা করবে। মুহুর্মুহু লাইভ সংবাদ প্রদানের প্রতিযোগিতা চলতে থাকবে মিডিয়া কর্মীদের।
ঠিক তেমনিভাবেই বাবা-মা হত্যার অপরাধে ঐশীর মৃত্যুদণ্ডে অসাধু এবং সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে, যাক ন্যায়বিচার হয়েছে। কারণ তাদের যুক্তি কেন সে মাদকাসক্ত হলো, আর কেনই বা বাবা-মাকে হত্যা করলো। আমাদের মতো অনেক সাধারণ দেশবাসীই হয়তো ভাবছেন অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে মেয়েটি। এবার যদি দেশে মাদকাসক্তি চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মহাশক্তিধর মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার কৌশল আমরা জানি না। কারণ তারা অতি বুদ্ধিমান ও কৌশলী। যারা আমাদের হাতে এসে আত্মসমর্পণ করে, আমরা সেই অপরিণত শিশুকেই শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলি।
আমার মতো হয়তো অনেকেই ভাবছেন, ঐশীর ফাঁসি হলে সবচাইতে ক্ষতি হবে বাবা-মা হারা দাদীর কাছে লালিত পালিত একমাত্র ছোট ভাইটির। যে শিশুটি একটি দুর্ঘটনার কারণে বাবা-মা আর একমাত্র বোন হারিয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে যাবে। যাদের সহমর্মিতা আছে তাঁরা হয়তো ভাবছেন মাদকাসক্ত একমাত্র বোনের হাতে বাবা-মা খুন হলেও সেই ছোট ভাইটির জীবনের প্রয়োজনেই জেলের ভিতরে হলেও সুস্থভাবে বেঁচে থাকা প্রয়োজন ঐশীর।
দু’টি সম্ভাবনাময় জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার এই দায়িত্ব মানুষ হিসেবে আমাদের সকলের। এ বিষয়টি বিচক্ষণতার সাথে বিবেচনার দায়ও তাই আমাদেরই। ঐশীকে শুধু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার জীবন কেড়ে নিলেই যার সমাধান হবে না। আইন প্রতিষ্ঠার জন্যে হয়তো জীবনের বিনিময়ে জীবন যাবে, কিন্তু যাদের জীবন ঐশী নিয়েছে তাঁরা বেঁচে গেলে তো ঐশীর উপর তাঁরা প্রতিশোধ নিতেন না। বরং মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের মেয়ের জন্যে প্রাণ ভিক্ষাই চাইতেন।
হতভাগ্য কিশোরী মেয়েটির এই করুণ পরিণতির জন্যে কারো কোন দায় নেই। এখানে দায় নেই দেশের, দায় নেই পিতামাতা এবং আত্মীয় স্বজনের, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর, সংসদ সদস্যসের, দায় নেই ইয়াবা ব্যবসায়ী কোন জনপ্রতিনিধির কুপুত্রের।
দেশ বিদেশের নারী নেতৃত্ব, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর। ঐশীর ব্যাপারে একেবারেই নীরব এই সংগঠনগুলো। নীরব আইন ও সালিশ কেন্দ্র ।
অথচ আমরা দেখেছি একাত্তরের রাজাকার আলবদরদের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ নিয়ে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো কী তৎপরই না ছিল। কিন্তু, ঐশীর ফাঁসি নিয়ে বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোতো দূরের কথা, দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এক পা এগুচ্ছে না। আমরা জানিনা এর প্রকৃত কারণগুলো কী।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য কবি নির্মলেন্দু গুণ ঐশীর জন্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন আরো অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকেই রাষ্ট্রপতির কাছে ঐশীর প্রাণভিক্ষা চাচ্ছেন। কিন্তু শক্তভাবে আইনের সহায়তায় অথবা সংগঠিতভাবে জনমত তৈরিতে কেউ কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
ঘটনার সময় সে প্রাপ্তবয়স্ক ছিল কি ছিল না সে বিষয়টি নিয়েও সাধারণ জনমনে রয়েছে নানা ধরনের বিতর্ক। যদিও আমরা জানতে পেরেছি বিচারক ঐশীর প্রকৃত বয়স প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আর সে যে সাবালিকা, এটাও প্রমাণ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তার মানসিক সুস্থতার বিষয়টি নিয়ে। তবে সচেতন শিক্ষিত অনেক মানুষেরই অজানা নেই যে দীর্ঘদিন মাদকাসক্তির কারণে সুস্থ, স্বাভাবিক মানসিক স্বাস্থ্য হ্রাস পায়। দেখা দেয় ডিপ্রেশন, স্কিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডারসহ অনেক জটিল রোগ। তাই শারীরিক সুস্থতার মতো মানসিক সুস্থতাও একজন মানুষের সার্বিক সুস্থতা বিবেচনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
তাছাড়া তার স্পর্শকাতর বয়স বিবেচনায় এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে সমগ্র দেশের মানুষের মধ্যে ঐশীর প্রতি জেগে উঠেছে সহানুভূতি। তার প্রতি রয়েছে সহমর্মিতা, আবেগ আর করুণা, যা কখনই আইনকে অমান্য করে নয় ।
তনুর জন্যে রাস্তায় নেমেছে তার বাবা-মা। মিতুর জন্যে তার পরিবার। ঐশী হত্যা করেছে তার নিজ পিতামাতাকেই। পিতা-মাতাকে হত্যা করে সে অন্য কথায় নিজেকেই হত্যা করেছে। সে নিজেই দাঁড়িয়েছে নিজের বিপরীত অবস্থানে।
গত বছরের ১৫ অক্টোবর এই হতভাগ্য মেয়েটির মা হয়ে জীবন ভিক্ষা চেয়ে লিখেছিলাম ”ঐশীর মায়ের একটি অলৌকিক চিঠি” শিরোনামে। কারণ ঐশীর বাবা-মা কেউ নেই, তাঁরা বেঁচে থাকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারতেন।
আমরা প্রাপ্তবয়স্ক সকল বাবা-মা আশা করছি ঐশীর ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করে তাকে কোন লঘুদণ্ড দেয়া হবে। কারণ ঐশী বয়সে অনেকটাই অপরিণত।
শারীরিক বয়স এবং মানসিক বয়স সকলের ক্ষেত্রে একসাথে পরিপক্ক হয় না। পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বখে গিয়ে যে ভুল সে করেছে, যে অপরাধ করেছে, সেটা শুধরে নেয়ার সুযোগ তাকে মহামান্য আদালত দেবেন এই প্রার্থনা আমাদের সকলের। যারা ঐশীর মতো মেয়েদের মাদকের দিকে ঠেলে দিয়েছে,তাদের খুঁজে বের না করে ঐশীকে ফাঁসির দন্ডে ঝোলালে হয়তো বিষয়টির আপাত সমাধান হবে, কিন্তু মাদকের করাল থাবা থেকে সমাজকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না, তৈরি হবে আর অনেক ঐশী,খুন হবে অনেক বাবা-মা।
[email protected]
নাকি ঐশী মেয়ে মানুষ বলে মানুষের এত মায়া হচ্ছে, অনেক ছেলে মানুষও তো এইরকম অপরাধ করেছে কই তার জন্য তো কারো এমন মায়া হয় নাই।
যে অপরাধ করবে তাকে অপরাধের শাস্তি পেতেই হবে। এইটাই নিয়ম। আর অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ফলেই অপরাধের পরিমান কমে যায়। এতে ভুল মায়া দেখিয়ে লাভ নাই। মায়া দেখানোর অনেক জায়গা আছে, ভালো জায়গায় মায়া দেখানোই ভালো।
আপনি বলছেন আপনার মতো সবাই চিন্তা করছে ভাইটির কথা। সবাই চিন্তা করছে টিক ই তবে আপনার মতো নয়, আপনার মতো ক্ষুদ্র গ্যানি মানুষ ই চিন্তা করতে পারে আপনার মতো। যে মেয়ে তার শক্তিশালী তার মা ও বাবাকে হত্যা করতে পেরেছে, সে কি দুর্বল ভাইকে হত্যা করতে পারবেনা?
যে জন্মদাতা মা বাবা কে হত্যা করতে পারে তার সামনে ভাই কি? কি ভাবে আপনি এই মেয়ের হাতে আপনি নিরিহ এই শিশুটাকে তুলে দেয়ার কথা ভাবলেন। আপনি ত একটা নির্দয় মানুষ। একটা খুনি কে বাঁচাতে ছাচ্ছেন আরো খুন করার জন্য। বিবেক খাটান।
oishir fashi howya thik na. she to morei ache. bhaitar jonno tar jiboner ostitter proyojon ache.tar jibonta bhaiyer jonnoi ekhon dorkar. oishir durbishoho jiboner kotha sensitive manushera onubhob korte parbe.amar khub koshto hoy. o to ei shomaj byabosthar shikar. or ei porinotir jonno jara dayi, taderke shastir aotay ana hoy na keno?
আপনি বলছেন আপনার মতো সবাই চিন্তা করছে ভাইটির কথা। সবাই চিন্তা করছে টিক ই তবে আপনার মতো নয়, আপনার মতো ক্ষুদ্র গ্যানি মানুষ ই চিন্তা করতে পারে আপনার মতো। যে মেয়ে তার শক্তিশালী তার মা ও বাবাকে হত্যা করতে পেরেছে, সে কি দুর্বল ভাইকে হত্যা করতে পারবেনা?
যে জন্মদাতা মা বাবা কে হত্যা করতে পারে তার সামনে ভাই কি? কি ভাবে আপনি এই মেয়ের হাতে আপনি নিরিহ এই শিশুটাকে তুলে দেয়ার কথা ভাবলেন। আপনি ত একটা নির্দয় মানুষ। একটা খুনি কে বাঁচাতে ছাচ্ছেন আরো খুন করার জন্য। বিবেক খাটান।