লীনা পারভীন: “Candidate must have fair complexion and smart in physic”. এটি আমার লেখার হেডলাইন নয়। এটি একটি চাকরির বিজ্ঞাপনের ভাষা। সম্প্রতি আমাদের দেশের বৃহত্তম পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে যোগ্য প্রার্থীর জন্য প্রত্যাশিত রিকোয়ারমেন্ট। কর্মবিবরণী দেখে অনুমান করা যাচ্ছে এটি একটি মার্কেটিং বা সেইলস ডিপার্টমেন্টের কোন একটি পদের বিজ্ঞাপন, যেখানে এডিশনাল জব রেসপন্সিবিলিটির জায়গায় এরকমই চাওয়া হয়েছে।
যে কোন নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিছু সাধারণ নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। আপনি যে প্রকৃতির চাকরিদাতাই হোন না কেন আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে চাকরি দেয়াটা কোন দয়া দাক্ষিণ্যের ব্যাপার নয়। আপনার যেমন প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে দক্ষ মানবসম্পদ দরকার, তেমনি প্রার্থীদেরও কাজ করার সুযোগ দরকার।
চাকরি দিচ্ছেন বলে আপনি আপনার মনের মাধুরী মিশিয়ে যা ইচ্ছা তাই লিখতে বা বলতে পারেন না। প্রতিটা পেশার কিছু নৈতিক মানদণ্ড থাকে। ঠিক তেমনি আপনি যদি একজন মানবসম্পদ কর্মকর্তা হয়ে থাকেন তাহলে মনে রাখবেন, আপনার জন্য নৈতিকতা বজায় রাখা হচ্ছে এক নম্বর, যেখানে আপনার প্রতিটা আচরন, প্রকাশ, বক্তব্য এমনকি আপনি যখন কারো সাথে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা করছেন সেখানেও খুব সতর্কতার সাথে এই প্রফেশনাল এথিকস মেনে চলতে হয়।
চাকরির বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটা পদক্ষেপে পালন করতে হয় কিছু নৈতিক মানদণ্ড। যেমন আপনি যখন কোন ইন্টারভিউ নিবেন, তখন কি কি প্রশ্ন করা যাবে আর কি কি বিষয় আলোচনা করা যাবে না এই সংক্রান্তও কিছু নিয়ম কানুন আছে।
আধুনিক সভ্য সমাজে এগুলা খুবই সাধারণ নিয়ম কানুন বলেই আমরা মনে করি। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের জন্ম দেয় এমন কিছু থেকে বিরত থাকার জন্যই মূলত এই নিয়ম কানুনগুলো তৈরি করা হয়েছে।
EEO (Equal Employment Opportunity) বলে একটা টার্ম আজকাল প্রতিষ্ঠিত এবং যে কোন প্রতিষ্ঠিত সংস্থা বিশেষ করে যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য এটি ঘোষণা করাটা একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা। আমেরিকাসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে এই সংক্রান্ত আইনও প্রতিষ্ঠিত। যদিও আমাদের দেশে এটি অনেক প্রতিষ্ঠানই চালু করতে দেয় না বা কোন প্রকার লিখিত অঙ্গিকার তৈরি করতে চায় না।
এ কথাটির অর্থ হচ্ছে আপনার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে আপনি কোনপ্রকার বৈষম্য তৈরি করতে পারবেন না। চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে কোন প্রক্রিয়াতেই আপনি কাউকে তার জাত, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, গায়ের রঙ, সেক্স এমনকি কাউকে তার প্রেগন্যান্সি বা সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা জেন্ডার দিয়ে কোন প্রকার বৈষম্যের মুখোমুখি করা যাবে না।
কর্মক্ষেত্রে যে কোন মানুষের যোগ্যতা হচ্ছে তার শিক্ষা, ব্যক্তিত্ব, কর্মযোগ্যতা ইত্যাদি। একটি চাকরির বিজ্ঞাপন কেবল বিজ্ঞাপনই না। এটি আপনার প্রতিষ্ঠানের ফেইস। একজন প্রার্থী ইন্টারভিউ দিতে যাবার আগে অবশ্যই সে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা নিয়ে যায়। চাকরিক্ষেত্রে কর্মীদের প্রাথমিক চাওয়া হচ্ছে একটি সুন্দর কর্ম পরিবেশ, বৈষম্যহীন পরিবেশ। তাই এটি প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব সেই প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হয়। আপনি একজন এমপ্লয়ার তাই কর্মক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখাটা আপনার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।

আমি জানি না যে প্রতিষ্ঠানটি এই ধরনের অবমাননাকর শব্দের বাহারে তাদের নিয়োগবিজ্ঞপ্তিটি সাজিয়েছে তারা এইসব বিষয় সম্পর্কে আদৌ সচেতন কিনা? এই প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় হলেও তাদের ব্যবসার বিস্তার দেশের সীমানা ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও বিস্তৃত। যে প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতিতে এতটা অবদান রাখছে তাদের কাছে আমরা আরো দায়িত্বশীল আচরন আশা করি।
ক্লায়েন্ট বেইজ কোন কাজ করলেই তাকে আকর্ষণীয় ও সুঠাম দেহের হতে হবে সেইদিন এখন আর নেই। দেহ আছে যোগ্যতা নাই, সেই কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানের কী উন্নয়ন করবে? আপনি আসলে একজন কর্মীর কাছে কী প্রত্যাশা করেন? সেটি নির্ধারণ করাটা খুব জরুরি। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্ব যখন লড়াই করছে যোগ্যতার ভিত্তিতে টিকে থাকতে তখন শরীরের বাহ্যিক সৌন্দর্য কখনই একজন কর্মীর বিবেচ্য হতে পারে না।
সময় এসেছে আমাদের দেশেও কর্মক্ষেত্রে সমযোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের নিমিত্তে একটি আলাদা আইন করার। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করতে হবে সকল প্রকার বৈষম্যের ঊর্দ্ধে উঠে কর্মী নির্বাচন এবং কর্মীবান্ধব একটি পরিবেশ তৈরি করার। তা নাহলে এরা সারাজীবনই এরকম কুপমণ্ডুকতা নিয়ে দেশের মাথা হয়ে থাকবে।
এমনিতেই বর্তমান সময়ে আমরা বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল পার করছি। আমাদের সন্তানদের মানসিক গঠন নিয়ে শংকিত। পুরো দেশ জুড়ে আলোচনা হচ্ছে আগামী প্রজন্মকে কিভাবে নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে একটি সুস্থ জীবনধারায় ফিরিয়ে আনা যায়। সেখানে দায়িত্ব নিতে হবে সবারই। একা পরিবার কিছুই করতে পারবে না। কর্মক্ষেত্রের রয়েছে বড় ভূমিকা। আর তাই আশা করছি আমাদের দেশের কর্পোরেট হাউজগুলো আরো বেশি সচেতন এবং দায়িত্ববান হবে।
@ Anira, I fully agree with you that we should primarily focus on the competence of the applicant instead of medium of education or look. However, I believe body odour and bad breath are hygiene issues that can’t just be ignored. Bad hygiene negatively impacts people around him/her in a workplace.
In many situation we see that we prefer a Eglish medium students over a bengali medium even though the bengali medium student is much more meritorious . Because the English medium student looks posh. Or we don’t shortlist someone because that person has body odour or bad breath . Definitely the must criteria is that the person is able to perform his or her task efficiently. If not so, even an angel will be rejected.