বিথী হক: বেশ সুখের কথা, আমরাও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছি। উন্নত দেশগুলোর মত আমাদের দেশেও জঙ্গি হামলা হয়, আমাদের দেশের মানুষরাও ফ্রাস্ট্রেইশনে ভোগেন। মানুষের যখন খেয়ে,পরে,ইন্টারনেট চালিয়ে আরো উদ্বৃত্ত কিছু থাকে তখন এসব ফ্রাস্ট্রেইশন মার্কা বড়লোকি জিনিসপত্রের লক্ষণ দেখা দেয়, যেমনটা পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যায়।
তবে আমাদের দেশীয় ফ্রাস্ট্রেইশন আর বিদেশী ফ্রাস্ট্রেইশনের মধ্যে বেশ পাথর্ক্য আছে কিন্তু। আমাদের দেশের মানুষ ফ্রাস্ট্রেইটেড হলে মানুষের পোস্টের কমেন্ট বক্সে গিয়ে চটিশিল্পের চর্চা শুরু করে। তাদের চটিশিল্পের এহেন সৃজনশীলতা দেখলে অবাক হতে হয়!
তাদের কি বাবা-মা নেই? তাদের বাবা-মা কি কখনো শেখায়নি মানুষের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়? তাদের কি বোন নেই, ভাই নেই? আত্মীয়-স্বজন? কেউই নেই?
থকলে বাবা-মা তুলে গালি দেয়া তো দূরের কথা, একটা অশ্লীল শব্দও মুখ থেকে বের হবার কথা নয়। একটা সময় মানুষ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে, সে পর্যন্ত অন্তত পরিবার নিয়ে কিছু বললে গায়ে লাগার কথা। তাদের কি সেটাও লাগে না?
এদের কি পরিবারও কখনো ছিল না? যে নিজের পরিবারকে ভালবাসতে জানে, শ্রদ্ধা করতে জানে সে অপরের পরিবারকেও শ্রদ্ধা করতে জানার কথা। যে নিজের বাবাকে ভালবাসে, তার তো অন্যের বাবাকেও একইভাবে ভালবাসতে পারার কথা। কেউ যখন এসব জিনিসের ধার না ধেরে অন্যথা করে তখনই বুঝে নিতে হবে, কিছু একটা গন্ডগোল তো অবশ্যই আছে।
এরা পরিবারের স্নেহ মমতা ছাড়া বড় হচ্ছে। এরা জানেনা বাবা শব্দের ব্যপ্তি কতটা, এরা বোঝেনা মা শব্দের বিশালতা কতটা। তাই অনায়াসে বাবা-মা নিয়ে গালিগালাজ করতে পারে।
মানুষ যেই ধর্মেরই হোক, যে মানসিকতারই হোক, যে বিশ্বাসেরই হোক; তাকে শ্রদ্ধা করতে পারাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাপ-মা তুলে গালি দিতে তো রাস্তার টোকায়রাও পারে, শ্রদ্ধা করতে ক’জন পারে! যাই হোক, আপনি যখন কারো বাপ-মা তুলে গালি দিচ্ছেন সেটায় তার কিছু এসে যাচ্ছে না বরং আপনার পারিবারিক, সামাজিক অবস্থান এবং মানসিক দৈন্যতার প্রকাশ পাচ্ছে।
এত কথা বলার শেষ কথা হচ্ছে, আমার প্রত্যেকটা লেখায়, ছবিতে, কমেন্টে যারা মুখ কামাই দিচ্ছেন না তাদের জন্য আমার রাশিরাশি সহানুভূতি। পরিবারের আদর, স্নেহ, মমতা বঞ্চিত হয়ে কি ফ্রাস্ট্রেইটেড জীবন-যাপনই না বেচারাদের করতে হচ্ছে। বিশ্বাস করেন, চাইলেই তো ব্লক করে সমস্যার সাময়িক মুক্তি আমি পেতেই পারি কিন্তু আমি ব্লক করলে সে তো আরেকজনের পোস্টে গিয়ে চটিশিল্পের উত্তরোত্তর বিকাশ ঘটাতে থাকবে। তারপর সে ব্লক দিলে আরেকজনের পোস্টে, আরেকজন ব্লক দিলে আবার আরেকজনের পোস্টে।
আসেন তাদের ব্লক না দিয়ে তাদের হারানো পরিবার, বাবা, মা, ভাই, বোন খুঁজে দেই। চটিলেখক হলে কি হবে, তাদেরও বোঝা উচিত বাবার শাসন, মায়ের স্নেহ আর বোনের আদর কি জিনিস! এসব অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত না হওয়া পর্যন্ত এরা এমনই অমানুষের বাচ্চা হয়ে বেড়ে উঠবে, মানুষের বাচ্চা বানানোর এই গুরুদায়িত্ব তাই আমাদের সকলের!
আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসেন।