জেসমিন চৌধুরী: ভাল ছেলের মা: ‘ভাবী, আমার বড় ছেলেটা ভীষণ ভালো, যখন যা বলি মাথা পেতে নেয়, কখনোই তর্ক করে না। ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না ভাবী, খাবার সময় মাছটা আমিই উলটে দেই। আর আমার মেয়েটা? এতো লক্ষী ভাবী, যা দেই চুপ করে তা’ই খায়, যা কিনে দেই তা’ই পরে। নিজে থেকে কিচ্ছু চায় না, একবারেই জেদ করে না। আমার ছোট ছেলেটা এবার সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে ভাবী, পড়াশুনা ছাড়া কিছুই বুঝেনা।‘
দুষ্টু ছেলের মা: ‘ইসস ভাবী, আপনার ভাগ্য এতো ভালো। আমার ছেলেটা কোন কথাই শোনে না, সারাদিন খেলাধূলা আর বন্ধু-বান্ধবের সাথে হৈচৈ, পড়তে বসাতেই পারি না। তার উপরে তো ইন্টারনেট আছেই। আর মেয়েটাও হয়েছে তেমন। সব কথায় তার নিজের একটা বক্তব্য থাকবে। এতো তর্ক করতে পারে ভাবী, আমরা মা-বাবার দিকে চোখ তুলেও তাকাতাম না’।
বাংলাদেশে নাশকতাবাদে তরুণদের দীক্ষা গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে আজ আমরা সবাই হঠাৎ করে আমাদের আরাম কেদারা থেকে ছিটকে পড়েছি। নানান প্রশ্ন, আলোচনা-সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।
সময় এসেছে ভাল-মন্দের সংজ্ঞা নিয়ে নতুন করে ভাববার। কার ভাগ্য বেশী ভাল, ভাল ছেলের মায়ের না দুষ্টু ছেলের মায়ের, তা’ও আবার নতুন করে ভাববার প্রয়োজন।
উপরে বর্ণিত তরুণদের কেউই সন্ত্রাসবাদ-প্রুফ নয়। ইন্টারনেট প্রসূত বিশ্বায়নের কারণে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়া এখন এতো সহজ হয়ে গেছে যে নাশকতাবাদীদের খপ্পরে পড়তে পারে যেকোনো তরুণ, কিন্তু তারপরও এর সম্ভাবনার মাত্রা নির্ভর করে একজন তরুণের ব্যক্তিত্বের উপর।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটি শিশু কি কোন বিশেষ ধরনের ব্যক্তিত্ব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, না’কি তার পরিবার, পারিপার্শ্বিকতা, ছেলেবেলার ঘটনাবলী এবং জীবনযাপনের ধরনের উপর ভিত্তি করে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে?
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে কী ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী তরুণের নাশকতার হাত থেকে বেঁচে থাকতে পারার সম্ভাবনা বেশি? আর সেই বিশেষ ধরনের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে কীভাবে? আমি গত কয়েকদিন ধরে এসব নিয়েই ভাবছি।
যে সন্তান আজ আমার সব কথা বিনা বাক্যে মেনে নেবে, সে কি নিজের মত করে ভাবতে শিখবে? না’কি অথরিটি নিয়ে যে যখন তাকে যা বলবে সে তা’ই মেনে নিতে শিখবে? যে ছেলে ভাজা মাছ উলটে খেতে শেখে না, সে কি তার কাছে উপস্থাপিত একটি মতবাদকে উলটে-পালটে দেখে তার ভাল মন্দ যাচাই করতে শিখবে? যে মেয়ে নিজে কী খাবে, কী পরবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, সে কি উপযুক্ত সময়ে নিজের জীবনের বড় বড় বিষয়গুলিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে?
যে ছেলে পড়াশুনা ছাড়া আর কিছু নিয়েই ভাবে না, তার ভাবনার জগত তো একেবারেই শূণ্য, সেই শূণ্য পাতায় যে কোন ধ্যান ধারণার চিহ্ন এঁকে দেয়া কি খুবই সহজ নয়?
সৌভাগ্যক্রমে আমার বাচ্চাদের বেড়ে উঠার দিনগুলোতে রিডার্স ডাইজেস্টে সন্তান পালন সম্পর্কে আমি একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম যা একহাতে সন্তান গড়ার কঠিন যুদ্ধে আমার জন্য একটা ভাল দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছিল। আমি পড়ে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম যে, বাচ্চাদেরকে ভাল ডিসিশন মেকার হিসেবে গড়ার জন্য একবারে ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করতে হবে।
ব্রেডের সাথে স্ট্রবেরি জ্যাম খাবে না বাটার খাবে, এটা বাচ্চাকেই ঠিক করতে দিলে ধীরে ধীরে সে বড়বড় ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। এই ধরুন, একটু বড় হবার পর কি রঙের কাপড় পরবে, খেলনা কোনটা নেবে, আরো বড় হবার পর ক্লাসে বন্ধু হবে কার সাথে, মাধ্যমিক স্কুলে যাবার পর কোন বিষয় পড়বে, কোন লাইনে ক্যারিয়ার গড়বে, এসব তাকেই নির্ধারণ করতে দিলে সে জীবনের আরো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে শিখবে।
জিম টেইলর নামে একজন মনোবিজ্ঞানী (PHD in Psychology Today) মনে করেন ‘বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া খুব জরুরি, কারণ আজ তারা যেসব সিদ্ধান্ত নেবে তার উপর নির্ভর করবে তাদের ভবিষ্যত জীবনের গতিপথ। সুন্দর জীবনের জন্য নিজের সিদ্ধান্তের স্বল্পকালীন এবং সুদূরপ্রসারী ঝুঁকি এবং সুফল বিবেচনা করতে শিখতে হবে তাদেরকে ছোটবেলা থেকে।‘
আমার ছেলে যখন ছোট ছিল তখন কোক, চকলেট এবং ক্রিস্পস খাওয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ল সে। আমি তখন এই বিষয়ে কিছু পড়াশুনা করলাম, এবং তাকে এই বাজে খাবারগুলোর জন্য একটা মাসিক বাজেট দিলাম। এতো ছোট বয়সে মাসিক বাজেটের বিষয়টা তার জন্য এতো আকর্ষণীয় একটা বিষয় ছিল যে, সে খুব আগ্রহের সাথে তার নিজের বাজেট ম্যানেজ করতো।
মাসের শুরুতে বাজেট অনুযায়ী এই খাবারগুলা কিনে একটা কাবার্ডে রাখা হতো, সে জানতো বেশি বেশি খেয়ে শেষ করে ফেললে একমাসের মধ্যে আর পাবে না, তাই হিসেব করে খেত। শিশুপালন বিষয়ক বইতে পড়া এরকম আরো কিছু কলাকৌশল অবলম্বন করতাম আমি, এবং তার সুফল প্রতি পদে পদে ভোগ করেছি।
অনেকে মনে করেন, ছোট বাচ্চারা তাদের নিজেদের ভালমন্দ বুঝে না, কাজেই মা-বাবারা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে শিশুর জন্য সিদ্ধান্ত নেয়াটাই বেশি মঙ্গলজনক। আসলে মা-বাবারাই যদি সবসময় সব বিষয়ে শিশুর জন্য সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা বাড়বে, কিন্তু এক্ষত্রে তাদের শিশুর কোন ক্ষমতাই সৃষ্টি হবে না।
যদি মনে করা হয়, মা-বাবার মতো শিশুও বড় হয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই সবকিছু শিখবে, সেই অভিজ্ঞতা হতে পারে ভয়াবহ। তার অনেক উদাহরণ ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি।
সময় পাল্টেছে, আমাদেরকেও পাল্টাতে হবে। মা-বাবা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বাচ্চাদের সামনে কয়েকটি ভাল অপশন তুলে ধরতে পারেন যার মধ্য থেকে নিজের পছন্দেরটা বেছে নিতে পারে বাচ্চারা। আরেকটি জরুরি বিষয় হচ্ছে ছোট থেকে যুক্তিপূর্ণভাবে তর্ক করতে শেখা। কোন প্রশ্ন না করেই যদি কোন বিশ্বাসকে মেনে নিতে শেখে একটি শিশু, হোক না তা ধর্মীয়, সামাজিক বা অন্য যে কোন বিশ্বাস, পরবর্তিতে যখন তার সামনে কেউ একটি ধ্বংসাত্মক বিশ্বাস তুলে ধরবে, প্রশ্ন না করেই তার সেটা মেনে নেবার সম্ভাবনাই বেশি।
আমাদের বেড়ে উঠায় বিবেকের বা চিন্তার ব্যায়ামের বিষয়টা প্রায় অনুপস্থিত। ধর্মের দৃষ্টিতে কোনটা পাপ কোনটা পূণ্য, সমাজের দৃষ্টিতে কী ভাল কী মন্দ তা নির্দ্বিধায় মেনে নিতে শেখানো হয় আমাদেরকে, ফলে আমাদের বিশ্বাসের ব্যায়াম হয় প্রচুর, কিন্তু বিবেকের ব্যায়াম হয় না একেবারেই। নিজে ভেবে চিন্তে ভাল মন্দ নির্ধারণের চর্চ্চা আমরা করি না, তাই অশুভ কোন শক্তি এসে যখন ধর্মের কথা বলে অশুভ কোন ধারণা তুলে ধরে তা মেনে নিতে অসুবিধা হয় না আমাদের।
এই কথাগুলোকে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে, অনেক বেশি ফার ফেচেড মনে হতে পারে, কিন্তু ছোট একটা বীজ থেকে যেমন বিরাট গাছ হয়, ছোট একটা ভাবনা থেকে বিশাল কোন সমস্যার সমাধানেও পৌঁছা সম্ভব।
এই সমস্যা যেমন একদিনে সৃষ্টি হয়নি, সমাধানও একদিনে হবে না। ধরে ধরে জঙ্গিদের ফাঁসিতে ঝুলাতেও যদি সক্ষম হই আমরা, তাতে কি এই জঙ্গি সমস্যার সমাধান হবে? বরং বন্ধ করতে হবে নতুন নতুন জঙ্গির জন্মের প্রক্রিয়া, জঙ্গি তৈরির কারাখানায় হানা দিতে হবে, আর সেই কারখানা আপনার আমার ঘরে ঘরেই স্থাপিত হয়েছে বা হচ্ছে বলেই দেখা যাচ্ছে।
আমরা এতো বেশি ভালো ছেলেদের এতো বেশি ধ্বংসের পথে যেতে দেখেছি যে, বলতে ইচ্ছে হয় আর ভাল ছেলে চাই না, আসুন এবার কিছু দুষ্টু ছেলে গড়ে তুলি, যারা কথায় কথায় তর্ক করবে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবে, নিজের স্বপ্নকে ধরার জন্য মা-বাবার ছেলেকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্নকে উপেক্ষা করবে, জেদ করবে, পড়াশুনা ছাড়া অন্য বিষয় নিয়েও ভাববে।
হয়তো এসব দুষ্টু ছেলে বড় হয়ে অশুভ শক্তির সাথেও তর্ক করবে, অশুভ পথের আহ্বানকে উপেক্ষা করে নিজের নির্বাচিত পথে চলতে পারবে।
“কী ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী তরুণের নাশকতার হাত থেকে বেঁচে থাকতে পারার সম্ভাবনা বেশি? আর সেই বিশেষ ধরনের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে কীভাবে? আমি গত কয়েকদিন ধরে এসব নিয়েই ভাবছি।…… এই কথাগুলোকে কষ্টকল্পিত মনে হতে পারে, অনেক বেশি ফার ফেচেড মনে হতে পারে, কিন্তু ছোট একটা বীজ থেকে যেমন বিরাট গাছ হয়, ছোট একটা ভাবনা থেকে বিশাল কোন সমস্যার সমাধানেও পৌঁছা সম্ভব।”
Sounds like a toilet thought. When you take those thoughts too seriously and think you can change the world so effortlessly, coming up with policies from toilet instead of proper research, all you’ll do is crook the society.
What you suggested in this post- “আসুন এবার কিছু দুষ্টু ছেলে গড়ে তুলি, যারা কথায় কথায় তর্ক করবে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবে, নিজের স্বপ্নকে ধরার জন্য মা-বাবার ছেলেকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্নকে উপেক্ষা করবে, জেদ করবে..” – can end up like this-
http://www.banglatribune.com/columns/opinion/145273
আপনার কথাগুলো একগুয়েমি এবং এগুলো একান্তই আপনার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা।
আপনি মূল সমস্যা পাশ কাটিয়ে অন্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছেন । আমরা ৪ ভাইবোন কখনো পিতা মাতার সাথে তর্ক করি নাই , তাই বলে কি আমরা উচ্ছন্নে গেছি । আল্লাহর রহমতে আমরা তিন ভাই বোন গ্রাজুয়েট এবং ধর্ম মেনে সামাজিক জীবন পালন করি । অন্আয বে ানটাও ও গ্রাজুয়েট হওয়ার পথে পনি অনেকটা আবেগ দিয়ে বিবেকের কন্ঠ রোধ করতে চাইছেন । আরও ভাবুন , একমুখী নয় বরং বহুুমুখী ভাবনা দরকার। আর আপনি একটা বাজে কাজের ছবি ব্যবহার করেছেন । সো ব্যাড ইট ইজ ।
অনেক বন্ধুকে দেখেছি যারা ছোট বেলায় চুপচাপ থাকে কিন্তু একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠেই পাল্টে যায়। বড় উদাহরন আমি নিজে । আমি সারাজীবন মা বাবার সাথে তর্ক
করি নাই । কারন আমি বুঝতাম – আমার চেয়ে আমার মা বাবা আমার বিষয়ে ভালো বোঝেন । আপনার ১০ – ১৫ বছরের ছেলে মেয়েদের চাইতে কি আপনি বেশি বোঝেন না ? নাকি কম বোঝেন ? তবে একটা সময় তাদের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত এবং সেটা গ্রাডুয়ালি । আর অনেক চেলেকেই দেখছি তার ছোটবেলায় দুষ্ট কিন্তু বড় হয়ে শান্ত আবার এর উল্টোটাও ।
ধন্যবাদ
Well written.
It is important for the child to exercise intellect to take his own decisions by himself so that when he is grown up he could take proper decision in difficult situations.
Agree.
I am beginning to enjoy your article
Thank you for your interest.
Thanks for the suggestion. I would’ve given appropriate references if I used statistics. The allusions used are memories from reading articles long time back and have become a part of my realisation.
It was a captivating read. However, some of the definitive conclusions are begging for supporting facts or references to authentic research findings. Personal observations are always better served with a good amount of doubt.
Thank you for your feedback and good suggestions. I would’ve given appropriate reference if I included statistics. The allusions are from my memory and have become a part of my own realisations.
আমি মনে করি, মা-বাবাকে শুধু সন্তানের ভালো মন্দের সিদ্ধান্তের উপর স্বাধীনতা দিলেই হবে না। সন্তানের নেয়া সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক তা বিবেচনায় রেখে তাদের সন্তানদের সার্বিক সহযোগিতা করা…।
It was a captivating read!
Some of the definitive conclusions related to human nature should have been armed with references to supporting facts or acclaimed research findings. Unproven observations are better served with some extent of doubts.
good write up
Thank you 🙂