‘বেহেশত পাবার ভাইরাস’: মুক্তি মিলবে কবে?

সেবিকা দেবনাথ: ভেবেছিলাম কিছু বলবো না। লিখবো না। আমার কীসের দায় ঠেকেছে? আমি তো দিব্যি আছি। খাচ্ছি। ঘুমাচ্ছি। অফিস করছি। কাজ-কর্ম সবই তো রুটিন মাফিক চলছে। তবে অসুবিধাটা কোথায়?

যাক গে। যে যা করছে করুক গে। এসব ভেবেও কেন যেন স্বস্তি পাচ্ছি না। বুকটা টনটন করে। ফেসবুকে, টিভিতে ও পত্রিকায় পাতায় এত্ত এত্ত বীভৎস চিত্র ও বর্ণনা দেখে শুনে ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। আর বারবার মনে পড়ছে কবি শেখ ফজলুল করিমের ‘স্বর্গ নরক’ কবিতার কয়েকটি চরণ।

Gulshan 7“কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাঁধনে মিলি যবে পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরি কুঁড়ে ঘরে।”

দেশে কী এক ‘বেহেশত পাবার ভাইরাস’ আসলো, যা সব লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। রঙিন স্বপ্নগুলো তছনছ করে দিয়ে হতাশার কালিমায় ঢেকে দিচ্ছে। আর ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে আশার আলো। এই ‘বেহেস্ত পাবার ভাইরাস’ কিন্তু আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়।

আগে শুনতাম দাঁড়ি-পাল্লায় ভোট দিলেই নাকি বেহেশতে যাবার টিকিট কনফার্ম হয়ে যেত। এই হুজুগে অনেকেই বেহেশতে যাবার টিকিট কনফার্ম করেছিলেন। এর সত্যতাও রয়েছে। জামায়াতকে আমরা ভোট দিয়ে জয়ী করেছি। দিন পাল্টেছে। পাল্টেছে বেহেশত পাবার  টিকিট কনফার্ম করার ধরনও।

এখন জিহাদের নামে তাণ্ডব চালিয়ে মানুষ হত্যায় বেহেশতে যাবার টিকিট কনফার্ম হয়। ওই টিকিট কনফার্ম করতে একটা গোষ্ঠী দিনকে দিন উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য হেন কোন কাজ নাই যা তারা করতে পারে না এবং করছে না। হায় রে! কোথায় আছি আমরা? তথ্য প্রযুক্তির এই যুগেও কত অবাস্তব জিনিসে/ ভাবনায় বিশ্বাস করছি।
কত লোভ আমাদের! বেহেশত নামের যে জায়গা কখনো চোখে দেখিনি কিংবা আদৌ আছে কী না তার নাই ঠিক, অথচ সেখানে যাবার জন্য মরীয়া হয়ে উঠেছি।

সত্যিই কি বেহেশত বলে কিছু আছে? যদি থেকেও থাকে সেখানে যাওয়া কি এত সোজা? যার দোহাই দিয়ে বেহেস্ত পাবার জন্য এত মরীয়া হয়ে উঠছে সেই স্রষ্টা কিসে সবচেয়ে বেশি খুশি হোন, তা কি তারা আদৌ জানে?
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তারা তা জানে না। জানলে ওই পথ তারা বেছে নিতো না। এমন কি ওই পথও মাড়াতো না। কষ্ট লাগে বেহেশত পাবার অবাস্তব চিন্তায় কত সম্ভাবনাময় জীবন হারিয়ে যাচ্ছে।

SEBIKA
সেবিকা দেবনাথ, সাংবাদিক

গুলশানের ট্রাজেডি আমাদের সেকথাই মনে করিয়ে দেয়। বেহেশতে যাবার আশায় যারা গুলশানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তাদের লাশ এখন রাজধানীর সিএমএইচ-এ পড়ে আছে। সন্তানের লাশ নিতে যাচ্ছেন না বাবা-মা। সন্তানের মুখদর্শনও করতে চান না তারা। সন্তান হারানো শোকে আহাজারি করছেন না। অথচ শত অপরাধের পরও সন্তানকে বুকে টেনে নেন বাবা-মা। কতটা আঘাত পেলে ওই বাবা-মা এতোটা কঠিন হয়েছেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

যে সন্তানের কৃতকর্মের জন্য বাবা-মায়ের মাথা হেঁট হয়, সমাজে মুখ দেখাতে তারা লজ্জিত হন, সেই সন্তান কীভাবে বেহেশতে যাবে? যারা এখনও ওই পথে কথিত বেহেস্তে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা কি এই ঘটনা দেখে শিক্ষা নেবে? মায়ের পায়ের নিচের বেহেশত ছেড়ে ওরা কি এখনও ওই ভুয়া বেহেশতের পিছন পিছন দৌঁড়াবে? ভাবতেই চোখ ভিজে যায়। এই ‘বেহেশতের ভাইরাস’ থেকে কিভাবে আমরা রক্ষা পাবো?

সব আশা যখন মিলিয়ে যায় তখন ভরসা রাখি অদেখা এক শক্তির উপর। মনে মনে বলি, ‘ঈশ্বর পথ দেখাও। যারা ওই মরীচিকার পেছনে ছুটছে ওদের তুমি সুমতি দাও। ভালবাসার ক্ষমতা দাও। প্রতিটি সন্তান যেন তার বাবা-মায়ের বুক-কোল জুড়ে থাকে সেই আশীষ দাও।’

শেয়ার করুন:

Children of corrupt parents will seek relief from the tyranny of own bringing up. Just check how those parents make their living, how they earn, you may find answer why their children look for relief in in dangerous way. They are not basically looking for “heaven or behesto” they are trying to run away from own hell existing as family made of corrupt parents.

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.