রাগে চিৎকার করছি আমরা

রুখসানা কাঁকন: আমি একজন রাগী নারী। হে সমাজ তুমি যদি কেবল আমার নরম নরম শরীর আর নরম নরম কথার ভক্ত হও, তাতে আমার রাগ আরো বাড়ে। আমি রাগে কাঁপতে কাঁপতে চিৎকার করে আমার অধিকারের কথা বলি যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষশাসিত সমাজে আমাদের মূল্য দিতে না শিখে।

রাগের বিশাল ব্যাপ্তি আছে এবং এই রাগ বিস্ফারিত হতে হতে এই পৃথিবীর সমস্ত অধিকারের যেটুকু আমাদের পাওনা তার জন্য আমি লড়াই করেইRuk 2 যাবো।
আমার মত অসংখ্য নারী যখন আমার হাতে হাত ধরে উঠে দাঁড়াবে, তখন তোমরা কী করবে?
আমাদের মনের হাজার শক্তিগুলো যোগ করলে তোমাদের কাপুরুষের শারীরিক শক্তি চুরমার হয়ে যাবে।
আর একে যদি তোমরা ফেমিনিজম বলো, হ্যাঁ আমরা তাই।

তোমরা এই ফেমিনিজিমের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। যদি তোমরা চাল ধোয়া হাতের নারী খোঁজো, তবে তা ভুল, যদি তোমরা নারী মানে রং করা মুখ বোঝো, এটা তোমাদের ভুল, আমরা এখন মাঠে-ঘাটে -বন্দরে-রাস্তায়-অফিসে-ঘরে সব  জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছি।

বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতা, সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমাম, অপু, নীলম, বন্যা, সাথী সবাই সবাই একসাথে হাঁটছি।
পৃথিবী এখন রাগী নারীই চায়। তোমরা তোমাদের পুরুষাঙ্গ দিয়ে নারীকে আর আহত করতে পারবে না, নারীরা এখন ভয়ঙ্কর রেগে গেছে।  

তোমরা নিজেদের পুরুষবাদ নিয়ে অসামাজিক কাজ করে নারীকে দাবিয়ে রাখবে, সেই দিন শেষ।
তনুর লাশ যখন কবর থেকে উঠে আসবে, তোমার সামনে দাঁড়িয়ে যাবে, প্রশ্ন করবে কেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, কেনই বা তাকে হত্যা করা হলো, তখন তুমি বা তোমরা কী করবে, বলবেই বা কী? আছে কিছু বলার?
আমাদের ভিতর আজ হাজার হাজার তনু জন্মাচ্ছে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে, যাদের ভিতর প্রতিশোধ জ্বলছে। তোমরা আর কতো আমাদের হিজাব দিয়ে, ধর্মের দোহাই দিয়ে, বুলি দিয়ে, পুরুষবাদ দিয়ে আটকে রাখবে?

আমরা নারীবাদের জন্ম দিয়েছি, আমাদের ফেমিনিস্ট বলে গালি দিলে সেই গালিই উল্টো তোমাদের গায়ে লাগবে, তখন দেখবে আমাদের আগুনের তাপ কী ভয়ঙ্কর!
আমরা সবাই অনেক সহ্য করেছি।
অনেক পুড়েছি, অনেক জ্বলেছি। এই দেখো পুরুষ, তুমি আমার হাত পুড়িয়ে দিয়েছো, মুখে এসিড দিয়েছো, আমাকে পাঁচ বছর বয়সে ধর্ষণ করেছো, আমাকে যখন ইচ্ছা তখন ভোগ করেছো, আমাকে মায়াবতী বলেছো প্রয়োজনে, আবার প্রয়োজন শেষ হলে এই আমাকেই ছলনাময়ী বলতে মুখে বাধেনি তোমার।
তোমাদের কাছে আমাদের মন বাঁধা, তোমাদের কাছে আমাদের শরীর বাঁধা, আর নয়।
শুনে রাখো পুরুষ, আমরা শিকল ভেঙে ফেলেছি।
আমাদের শরীর আমাদের জিম্মায়।
আমরা ঠিক করবো আমাদের শরীর কীভাবে ব্যবহার করবো।
আমাদের যন্ত্রণা হতাশা, দুঃখ এখন জমে পাথর হয়ে গেছে যে পাথর দিয়ে আমরা তোমাদের বিকৃত মুখে ছুঁড়ে মারবো। আমাদের অধিকার ঠিকমতো বুঝতে শেখো,
নাহলে তোমাদের অধিকার রক্ষা কঠিন হবে।
অনেক তো হলো।
আমরা এখন রাগে চিৎকার করছি।

লেখক: টেলিকমিউনিকেশন একজিকিউটিভ, জার্মানি

শেয়ার করুন:

বেগমরোকেয়া, প্রীতিলতা, জাহানারী ইমাম প্রমুখ ফেমিনিজম দিয়ে আক্রান্ত ছিলেন না। বরং সমাজের অংশ হিসেবে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাবারই চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টায় নারী-পুরুষ সবাই মিলে তাঁদের সহায়তা করেছে।
এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, রোকেয়া, প্রীতিলতা, জাহানারা, থ্যাচার কিংবা তেরেসা প্রমুখের নারীবাদের সাথে এই আধুনিকযুগের “নারীবাদ” একেবারেই ভিন্ন।
বেশিরভাগ নারী বোরখা নিয়ে কিছু বলে না। নারীরাই যদি বোরখা নিয়ে কিছু না বলে তাহলে পুরুষরা কী করবে? একজন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে বলে যে সে বোরকা ব্যবহার করবে না। তাহলে সেই স্বামীর বিভিন্ন কারণে কিছুই করার থাকার কথা নয়। নারীরাই বরং বোরকার বড় পৃষ্ঠপোষক।
এই কথাগুলো আমি নারী বিদ্বেষ থেকে বলছি না। বলছি বাস্তবতার আলোকে। শ্বশুর কর্তৃক বউ নির্যাতনের ঘটনা যত না ঘটে শ্বাশুড়ি কর্তৃক বউ নির্যাতনের ঘটনা তার চাইতে বেশি ঘটে। অস্বীকার করবেন?
আর মোদ্দা কথা নতুন কোন কথা শোনাতে পারেন নাই। আবেগ ছাড়া। নতুন কথা শোনাতে না পারলে মানুষ শুনবে না।

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.