সারিতা আহমেদ: সমাজ আধুনিক হয়েছে। মেয়েরা নাকি স্বাধীন হয়েছে। সবাই কেতা মারতে, ট্রেন্ডি ফ্যাশানে দেখাতে ব্যস্ত কে কত স্বাধীন ও ড্যাম কেয়ার পার্সোনালিটি।
কিন্তু শপিং মলে ফ্যাশান স্টপে, ক্যাজুয়াল ড্রেসে সেলফি তোলা সুন্দরীটিও বুঝতে পারে না, আসলে সে নয়, ‘বাজার’ ঠিক করে দিচ্ছে সে কতটা মাপে খাপে খাপে নিজের শরীর, পার্সোনালিটি তৈরি করবে।
বাজার ঠিক করে আমরা কী খাবো, কী পরবো। কতোটা খাব, কতোটা পরবো। সেখানে আমার আপনার পছন্দের স্বাধীনতা জাস্ট ধোপে টেকে না।
একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যায় ।
অনলাইন শপিং হোক বা যেকোনো মার্কেট প্লেস। আপনার শারীরিক গঠন যেমনই হোক, আপনাকে মধ্যবিত্তের বাজার দেখতে চাইবে ৩৬-২৪-৩৬ মডেল রূপেই।
মেয়েদের জিন্স হোক বা ক্যাজুয়াল আউটফিট, আরামের কথা ভেবে কেউ সেগুলো তৈরি করে না। তৈরি করে না এটা ভেবেও যে পোষাকটা সব রকমের মেয়েরা ক্যারি করতে পারবে কিনা।
যেহেতু বাজার ‘ঠিক’ করে দিয়েছে, তাই আপনাকে নিজের সাধের বডিটা ঐ ৩৪ সাইজের ভেতরেই ফিট করাতে হবে।
আপনি যদি স্কিনি না হন, সাইজ জিরো না চান, তাহলে বাপু বোরখা কিনুন।
আমাদের প্রডাক্ট একটা নির্দিষ্ট মাপে চলে, মাপের খাপে ঢুকতে পারলে আপনি আধুনিক; নইলে আপনি আউট অফ ফ্যাশন। সে আপনি যতই শিক্ষিত, রুচিশীল বা আধুনিক হোন না কেন!
পোষাক নির্বাচনের স্বাধীনতা বাজার ঠিক করবে। আপনি নন।
উল্টোদিকে ছেলেদের পোষাকে কিন্তু কমফোর্ট শেষ কথা। তাদের জন্য বাজারি কোনো ব্রাণ্ড সাইজ ‘ঠিক’ করে জিনিস বেচার কথা ভাবে না।
আরাম করে ঢিলেঢালা আউটফিট তারা বাছতে পারে। তাদের ম্যাটেরিয়াল যেমন তুলনামূলক উন্নত, তেমনি প্রচুর অপশন।
অনেকে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসু প্রশ্ন তোলে, ‘পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা নিয়ে যারা এতো নেগেটিভ কথা বলেন, তারা খুঁজে দেখান তো বর্তমানে কোথায় আছে এমন জিনিস? কারা চালায় এই ব্যবস্থা? যত্তসব গাঁজাখুরি গপ্পো! ‘
তা এই বাজারি চাহিদা, মেয়েদের প্রতিটা ধাপে একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি রাখা, এগুলো তাহলে কীসের ফসল? অ্যাডাম’স অ্যাপেল ,নাকি নিউটন’স অ্যাপেল !
** তুমি যেহেতু মেয়ে সুতরাং তোমার ফিগার হতেই হবে ‘বাজারের চাহিদা’ মতো।
তোমায় ফিট হতেই হবে সাইজ জিরো-তে।
** তোমায় মাখতে হবে সাদা হবার ক্রিম। কালো নিয়ে আদিখ্যেতা কবিদের কাজ, বাজারের নয় ।

** তুমি মেয়ে, তাই তোমার ওভারসাইজ পোষাক, জুতো থাকলে লজ্জা পেতে হবে তোমায়। যতই ‘আমার স্টাইল’ বলে চালানোর চেষ্টা কর, বাজার-সভ্যতা তোমার সামনে একটি দাঁত ক্যালানো আয়না ধরবে।
** তুমি মেয়ে, তাই তুমি কিছুতেই নিজের পছন্দের সুগন্ধি/ ডিও কিনতে পারবে না। অনেক ক্ষেত্রেই তোমায় দেখানো হবে লেডিস অনলি ব্রান্ড।
** তুমি মেয়ে, তাই যত খিদেই পাক তুমি কিছুতেই ডায়েটিং নামক বাজারি চাহিদা থেকে মুখ ফেরাতে পারবে না। ভুড়ি নিয়ে গর্ব করা সুখী পুরুষের পেটেন্ট, যা তোমার জন্য নিষিদ্ধ ।
** তোমার জন্য বাজার হরেক রকম ব্রান্ড দিয়েছে, ‘মাই চয়েস’ ক্যাপশান দিয়েছে।
পুরুষ যাতে বলতে পারে ‘ওরে তোদেরই তো বাজার। শপিং এ সারাদিন কাবার।’ তার বিপুল হাতছানি দিয়েছে ।
সবই দিয়েছে , কিন্তু সাথে একটি ডেড লাইনও দিয়েছে অলক্ষ্যে। এই লাইনের বাইরে নিজেকে নিয়েছ কী তুমি প্রতিবন্ধী কোটায় নাম তুলেছো। তোমার জন্য পাবলিক সিম্প্যাথি থাকবে, স্পেশাল অর্ডার থাকবে। আড়ালে চাপা হাসি-টিটকিরিও থাকবে।
এসব কিছুই তুমি প্রতি পদে পদে বুঝবে, কিন্তু ডিঙিয়ে যাবে আর বলবে ,’আমি প্রকৃত স্বাধীন, আমার লাইফ নিজের মতো কাটানোর সুযোগ আধুনিক সমাজ দিয়েছে। সত্যিই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা আগের যুগে ছিল, এখন ইতিহাস। ‘