বাবুল আক্তারের প্রিয় ঘর, সঙ্গিনী এবং আমরা

বিথী হক: দেশে গরু ছাগল ভেড়া থেকে মানুষ, পোকামাকড় কোনকিছুর নিরাপত্তা নাই, কারো নিরাপত্তা নাই। পায়ের তলায় পিঁপড়া মরে পড়ে থাকলে আমরা যতটা নির্লিপ্ত আর নিস্পৃহ থাকি, ঠিক মানুষের বেলায়ও তেমনি করে থাকতে পারি। এ এক অদ্ভুত অভিযোজন ক্ষমতা আমাদের।

Babul Akhter Policeআজকে ভোরে খবর দেখে আঁতকে উঠলাম! পুলিশ সুপারের সহধর্মিনী খুন। সুষ্ঠু, সুন্দর পরিকল্পনামাফিক মিনিট খানেকের সক্রিয় কার্যক্রমে উপুর্যপরি ছুরিকাঘাত আর কয়েকটা মাত্র গুলি শেষ করে দিয়েছে বাবুল আক্তারের প্রিয় ঘর-সঙ্গিনীকে।

খবরটা দেখেই চুপ হয়ে গেলাম, এমন ঘটনাও ঘটতে পারে বুঝি? আমাদের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা না-ই থাকতে পারে, আমরা অনায়াসে মরতেই পারি; তাই বলে পুলিশের পরিবারের সদস্যদেরও আমাদের মতো হাল হবে? তারাও কি আমাদের মতই সাধারণ জীবনযাপন করে?

আমরা তো জানি পুলিশ ঘুষ খায়, ঘুষ খেয়ে পেট মোটা হয়ে গেলে তারপর স্ত্রী, সন্তান, ছেলেমেয়েদের ঝোলা ভরতে শুরু করেন। তাদের কি অনিরাপদ থাকা মানায় নাকি? তাদের ব্যক্তিজীবনই বা কী জিনিস! আমি সিএনজি ভাড়া বেশি বলে কম্প্লেইন করলেও গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পুলিশও সাহায্য করে না, ইভটিজিং করা ছেলেপিলেদের তাদের হাতে তুলে ধরিয়ে দিলেও ছেড়ে দেয়।

এমন অভিযোগের কমতি নাই এবং সেগুলো চরম সত্যি। তবে তার আগে আপনার নিজেদের কথা একবার ভাবেন তো! আপনি ক’দিন ক’জনের জীবন বাঁচিয়েছেন? ক’জনকে নিরাপত্তা দিয়েছেন? ক’জনকে ইভটিজিং করা ছেলেগুলোর থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন?

পুলিশ আমাদের সেবা করার জন্য টাকা পায়, আমাদের দেয়া করের টাকায় তাদের সংসার চলে। এমনকি যারা ঘুষ খায়, তাদের ঘুষের টাকাও আপনারই পকেটের টাকা। যাই হোক, আপনার কোনো ধারণা আছে বাংলাদেশে সর্বমোট কতজন পুলিশিং করছেন?

Police Super Babulউইকিপিডিয়ার মতে, এক লক্ষ একচল্লিশ হাজার দু’শ তেইশ জন। বাংলাদেশে জনসংখ্যা প্রায় ষোল কোটির কাছাকাছি। আসেন হিসাব করি প্রতিজন পুলিশের ক’জনের জন্য সার্ভিস বরাদ্দ।

একজন পুলিশের এগারো’শ মানুষের নিরাপত্তা দেবার কথা। ভাবেন তো, আপনার পরিবারের ক’জনের দেখভাল আপনি করতে পারেন? ক’জনকে চোখে চোখে রেখে তার নিরাপদ বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে পারেন? যেখানে পাঁচ/ছজন হলেই আপনি পরিবারের ভার সইতে না পেরে ছটফট শুরু করেন, সেখানে একজন পুলিশ এগারো’শ মানুষের যত্ন-আত্তি করে মাথায় তুলে রাখবে, সেটা কিভাবে ভাবেন?

তাদেরও পরিবার থাকে, পেছনে উঠে আসার গল্প থাকে, মেয়ের পুতুলের বায়না থাকে, ছেলের নতুন খেলনা গাড়ির আবদার থাকে।

সর্বোপরি, ইউনিফর্মের আড়ালে তাদেরও আপনার আমার মতো আটপৌরে একটা জীবন থাকে। সেখানে নিরন্তর যুদ্ধ করতে হয়, যুদ্ধ করতে হয় পরিবারের জন্য এবং মানেন বা না মানেন আপনার আমার জন্যও!

Bithi Haque
বিথী হক

ক’দিন আগে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে রিপোর্ট প্রচারের নিন্দা করে সাংবাদিকদের যেসব গালাগালি করলাম, তা নিশ্চয়ই পৃথিবীর সকল সাংবাদিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আইসিস দিয়েও আপনি ইসলাম ধর্মকে বিচার করেন না কিংবা আরএসএস দিয়ে হিন্দুধর্মকে!

পরিমল এবং আহাদদের দিয়ে শিক্ষকদের চারিত্রিক বিশ্লেষণও করবেন না নিশ্চয়ই। লৌকিক, অলৌকিক এমন কিছু কী আছে যেখানে ভাল-খারাপ দুটোর সহাবস্থান নেই? শুধুই ভাল বা শুধুই খারাপ এমন কিছু কি আদৌ আছে?

মানছি, পুলিশে পচনধরা সদস্য সংখ্যাই বেশি হয়তো। হতেই পারে! আপনার আমার পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার হুমকি দিলে আপনি-আমি কতটা সৎ থাকতাম বা থাকবো সেটা একটা ভাববার মতো বিষয় হতে পারতো, যেটা এই পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত হচ্ছে।

আপনারা বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুনের ঘটনায় খুনিদের অদৃশ্য পিঠ চাপড়ে পুলিশের উপযুক্ত প্রায়শ্চিত্তে গদগদ হয়ে ভবিষ্যতে তাদের শুধরে যাবার কথা বলছেন যারা, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক সহানুভূতি! ঈশ্বর না করুক আপনার পরিবারের প্রতি এমন কিছু হোক এবং আরেকজন কেউ সেটা দেখে আপনার অফিসের টেবিলের তলায় হাত কচলানো অভ্যাসের প্রায়:শ্চিত্ত বলে ধরে নিক!

আমি যেমন পুলিশের সাফাই গাইছি না, তেমনি তাদেরকে ছোট করার উদ্দেশ্যেও কিছু বলছি না। আমি মানুষ হিসেবে একজন মানুষের দু:খ, কষ্ট, টানাপোড়েন আর স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় আর্দ্র হই, কষ্ট পাই।

মানুষ কে কত ভাল বা খারাপ সেটার চেয়েও একজনের জীবন গুরুত্বপূর্ণ। আপনিও যতই খারাপ হোন না কেন, আপনার স্বাভাবিক মৃত্যুই আমার কাম্য। প্রতিটি মানুষের মৃত্যু হোক স্বাভাবিক, বার্ধক্যজনিত কারণে, ঘুমের ঘোরে নিশ্চিন্তে কিংবা সারভাইভেল অব দ্য ফিটেস্ট সূত্রানুযায়ী; চকচকে ধারালো ছুরির কিনারে, বন্দুকের নলে কিংবা চাপাতির নিচে নিশ্চয়ই নয়।

সবকিছুর জন্য শুধু পেশা ধরে মানুষকে দোষারোপ না করে আসেন না হাতে হাত ধরে সবাই একটু সবার পাশে দাঁড়াই!

 

শেয়ার করুন:

আজ ভোরে ফেসবুকে খবরটা দেখার পর থেকেই আমার প্রকৃতি অস্থির। অস্বাভাবিক কম্পয়নরত আমার সব। কাজ যা করার তা করছি, না করছিনা। করছি শুধু এলোমেলোভাবে মানসিক অনুশীলন। যে, চরম হিংস্র পশুভিত্তিক পতিক্রিয়া জানাবো, দুনিয়ার কলঙ্ক, নিস্ফলা, জ্ঞানন্ধ বা জ্ঞানপাপী অথবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধি, কুশিক্ষিত, গুপ্তচোরা, লোভী, নীচ, কাপুরুষ, পরহিংসাকাতর, ল্যাংড়া/পঙ্গু মানসিকতার, সত্যের নির্বোধ, নাদান, কাতর, নষ্ট/পঁচা, দূর্গন্ধময়, নর্দমা কীট ইত্যাদি ঘৃণ্য বিশেষণের নষ্ট চিত্তের অমানুষগুলার অপকর্মের ! না, নীচদের অনুসরণ নয়, মানুষের ক্ষোভ, প্রতিবাদ প্রতিক্রিয়াই জানাবো দুনিয়ার মানুষে, নষ্ট চিত্তের অমানুষগুলার অপকর্মের বিরুদ্ধে!

আর বিভিন্ন মাধ্যমের সমবেদনা, ক্ষোভ, নিন্দা, মতামতসহ- বলিষ্ঠ মানবতার মনুষ্য বীর, অদম্য সাহসীকতার কিংবদন্তী জনাব বাবুল আকতার ও তাঁর বীর সন্তানদের শোকাহত দৃশ্যগুলোই বার বার দেখছি, আর মানবতার অবক্ষয়তার অসহ্য যন্ত্রণায় ও ক্রোধে শুধুই কাঁপছি।

দুঃসংবাদটি জানার পর তাৎক্ষণিক একটি প্রতিক্রিয়া লিখেছিলাম। প্রতিক্রিয়াটি নিচে সংযোজিত দিলাম।

১ম প্রতিক্রিয়াঃ-
“ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্নাইলাহি রজিউন….। মানুষতো মারা যাবেই, যারা হত্যা করল তারাও কি মরবেনা? হত্যাকারীরা কাউকে হত্যার সময় থেকেই নিজের মৃত্যু যন্ত্রণায় পালাতে থাকে, তবুও ধুকে ধুকে মরবেই। অনেকগুলা খারাপ মানুষের বিরুদ্ধে একজন ভাল মানুষ অনেক বেশী শক্তিশালী অদম্য। মহৎ বাবুল সাহেবকে ও তাঁহার সন্তানদের যেন আল্লাহ্ পাক, রহমত দিয়ে আজীবন পরিবেষ্টিত রাখেন…আমীন।

যেকোন পেশার মহৎ মানুষের জন্য সবাই ভাল থাকে ও ভাল থেকে সেই মহৎ মানুষের জন্য দোয়া করে। পক্ষান্তরে যেকোন পেশার কিছু খারাপ মানুষের জন্য, সবাই কষ্ট পায় ও খারাপ মানুষদের ঘৃণা করে। খারাপ মানুষকে ঘৃণা থেকেই, বিভিন্ন পেশার বদনাম হয় এবং সে পেশার সবাই ঢালাওভাবে ঘৃণিত হয়। তাই মহৎ ও ভাল মানুষদের উচিৎ, সর্বপ্রথমে নিজ নিজ পেশার খারাপদের, চিহ্নিত করে সংশোধন, সংকোচন ও প্রয়োজনে বিতারিত করণের মাধ্যমে দমন করা।

বর্তমানে সাধারনের রক্ষাকারী পেশার (পুলিশ) মহৎ ব্যাক্তিদের জীবনের নিরাপত্তা, যদি অহরহ ঝুঁকিপূর্ণ হয় বা অনিশ্চিত হয়; তবে সাধারনদের আস্থা কোথায়? স্বাভাবিক ভাবেই সাধারন মানুষ হিসাবে এ প্রশ্নের অস্থীরতা শুরু হয়। আস্থাহীনতার জন্যই সাধারনরা প্রকৃতিগত, অস্বাভাবিক আচরনে লিপ্ত হবে এবং বিলুপ্ত হবে মহত্ব,মহানুভবতা, নৈতিকতা, মানবিক স্বাধীনতাসহ সর্বস্তরের সততা।

তাই সব ভাল মানুষদের প্রতি নিবেদন, আত্ম রক্ষা ও মর্যাদার জন্যই খারাপের বিরুদ্ধে জেগে উঠুন এক্ষুনি। নিজ নিজ স্থান, অবস্থান, পেশায় থেকেই সততা, নিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ ও মানবতা জাগিয়ে তুলুন। ধন্যবাদ…..।।”