আবেগ, লোকনিন্দা, আত্মহত্যা ও অন্যান্য

শারমিন জোহরা সিমি: সাবিরা নামের বোকা মেয়েটা কেমন করে যেন মনের মধ্যে বসে গেছে, কয়েকদিন ধরেই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আসলে এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারি না বলেই হয়তো।

সে আধুনিক নাকি প্রাগৈতিহাসিক সে বিশ্লেষণ নাহয় আজ না-ই হলো। স্বীকার করি যে, মানুষের একটা বয়স থাকে- যখন বুদ্ধির চেয়ে আবেগ বেশি কাজ করে। যে মেয়েটা পরিবার পায় নি, ভালবাসা পায়নি- সে যখন আবেগে জড়ায়, পরিবার চায় সে চাওয়াটা অনেকের চেয়ে হয়ত অন্যরকম। কিন্তু তা বলে আত্নহনন… কখনই নয়!

Sharmin Shimiআফসোস অল্প বয়সের ঐ আবেগে তারা যাদেরকে নির্বাচন করে বেশিরভাগই হয় ভুল মানুষ। যারা এত আবেগ, ভালবাসা, প্রেমের জন্য একেবারেই অযোগ্য। আমার আজকের লেখা সাবিরা সমমনা আবেগী- অভিমানীদের জন্য।

সমাজ থেকেই আমরা মেয়েরা শিখি শরীরই আমাদের সব, সবকিছুর প্রাণকেন্দ্র। পুরুষের যেমন উপার্জন, বুদ্ধিমত্তা, কর্ম, ক্ষমতায়ন এসব হলেই হয়- শরীর সুশ্রী কিংবা শুদ্ধ হবার দরকার পড়ে না; মেয়েদের বেলায় ঠিক ঊল্টো।  আমাদের মায়েরা পুত্র সন্তানকে শেখান না যে, একজন নারীর যেমন সচ্চরিত্রবান হওয়া প্রয়োজন, তেমনি একজন পুরুষেরও চরিত্র অনেক মূল্যবান। শরীর গেল তো সব গেল- এটা কেবল মেয়েরাই শেখে, কী অদ্ভূত!

উচ্ছৃংখল জ়ীবন কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। শারীরিক শুদ্ধতার গুরুত্ব অনেক – নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই। তবে তার গুরুত্ব কখনো জ়ীবনের চেয়ে বেশি হতে পারে না। এই পৃথিবীতে মানুষের জীবনের তুল্য কিছুই নয়।

যদি কখনো কোনো মেয়ে ট্র্যাপড হয়েই যায়, তার কি কোন উপায় নেই? সময় নিয়ে ভাবলে, দিনের পর দিন হাতড়ালে নিশ্চয় উপায় মিলবে।

আমি মনে করি পরিত্রাণ তো পরিত্যাগ, সেই অমানুষকে। সেই লোকের কিছুই হবে না আর আমি মরে খুন! এ কেমন বিচার! তাকে শাস্তি দিতে নিজেই মরে যাবো! আমি বলবো নিজেই প্রত্যক্ষ করো তার সাজা, যদি নিজে দিতে না পারো অপেক্ষা করো। তুমি না করলেও তোমার মত কেউ না কেউ করে দেবে। সেদিন তুমি জিতবে- যেদিন জানবে সে ভাল নেই!

প্রত্যাখ্যাত হবার সাথেই … এত তাড়াহুড়ার কী ছিল, একটু কী গ্যাপ নেওয়া যেত না! একদিন হয়তো অনুশোচনা হতো। আর যার এটি হয় না, বিশ্বাস করো মেয়ে- সে মানুষ নয়, শারমেয় শাবক! যে জন্তুটি বিয়ের যোগ্য নয় – বাড়ি পাহারায়ই উপযোগী!

আমার কথা হলো- পাপবোধ যদি কাউকে গ্রাস করে মরে গিয়ে পাপমুক্ত হবে কেমন করে!

জানা মতে সব প্রধান ধর্মেই কেবল মহাপাপই শুধু নয় সবচে’ জঘণ্যতম, ঘৃণ্যপাপ হলো আত্মহত্যা। গ্লানি মোচনের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাও, তিনি ক্ষমা করেন (আত্মহত্যা ছাড়া আর সব পাপই)। ক্ষমা চেয়ে শুদ্ধ হতে চেষ্টাই তো সমাধান। শয়তানের পায়ে পড়ে থেকে নিজেকে বিসর্জন কেন?

স্বভাবগত কারণে কেউ কেউ খুবই অভিমানি, তবে সমান্তরালে ইতিবাচক নয় কেন! ইতিবাচক না হলে সমঝোতা হবে কী করে! অন্তত নিজের সাথে।

যে মেয়েটি অভিমানে মরে গেল, ভাবলো আর একজনকে দায়ী করলেই হয়ে গেল! কী বোকা মেয়ে, কিছু নগদ টাকা গচ্ছা ছাড়া ওর যে কিছুই হবে না, বুঝলেই না! আর লোকনিন্দা? সে যে পুরুষ মানুষ!

আর পরিবার যদি বা অসম্মান বোধ করে, তাকে হয়তো উন্নত দেশে পাঠিয়ে দেবে! তাতে তার বরং লাভই হলো- উন্নত জীবনের পাশাপাশি উদ্দাম জীবনটাই উপভোগ করবে তখন। শাস্তি নয়, তাকে পুরস্কৃত করে গেলে! বেঁচে থাকলে হয়তো দেখতে কোনো বিশ্বাস ঘাতক নয়, তোমারই যোগ্য কেউ একজন অপেক্ষা করতো অনেক ভালবেসে।

আবেগ ছাড়াও আত্মহত্যার উপজীব্য আছে- লোকভয়! হায়! পরীক্ষায় খারাপ ফল থেকে শুরু করে প্রেম জানাজানি, কানাকানি।

যারা জীবনের বিভিন্ন ধাপে পাশ করেনি তারা পৃথিবীতে বেঁচে নেই? অবশ্যই আছেন, সফল মানুষের উদাহরণের তালিকা বেশ দীর্ঘ।। সময়ের আবর্তনে সব একদিন ঠিক হয়ে যায়। মানুষ পিতৃশোক ভোলে, সন্তানকে চিরকালের জন্যে হারিয়েও মা বেঁচে থাকে।

কারো জীবনই তরঙ্গহীন নয়। সেই তরঙ্গ কখনো তুফানতুল্য- ছারখার করলেও একসময় থেমে যায়। জীবন তবু প্রবহমান। একদিন সে ঊর্বর সমভূমিতে পৌঁছে দেয়। তবে সেজন্যে তো সময় দিতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে, আর করতে হবে চেষ্টা।

নিজের কিছু দুঃসময় কাটিয় ওঠার গল্প বলেছিলাম একদিন। সেদিনের শেষ কথাটার পুনঃরাবৃত্তি করতে চাই- “ জ়ীবন অমূল্য আর মানুষ অনন্ত সম্ভবনাময়”।  

 

শেয়ার করুন: