সালমা লুনা: শুধু সিনেমা কন্যাদের দিয়ে শিল্পচর্চার বিরাট আধারটিকে দেখলে কি হবে! সিনেমা দিয়ে বললে বলতেই হবে এই এশিয়া অঞ্চলে নারী অভিনেত্রী নয় শুধু, বিবাহিত নারী মানেই আবেদন কম – দিনে দিনে এটা আরো বাড়ছে। ব্যতিক্রম গোণায় আসে না।
এ অবস্থায় শুধু বিয়ের জন্য নিজের আবেদন কমে যাবে এটা বিবেচনায় রেখে ঝটিতি নায়িকারা ঘোষণা দিয়ে বসেন, বিয়ের পর আর অভিনয় নয়। সেক্ষেত্রে পরিচালক বা নায়কদের তেমন কিছু করতে দেখা যায় না, কারণ বিবাহিত আর অবিবাহিত পুরুষমাত্রই আবেদনের ডিব্বা। তা না হলে মহেশ ভাট বা মুকেশ ভাটদের মতো অগণিত পুরুষের আবেদন থাকে কী করে !
আমাদের সমাজই নারীকে এভাবে দেখে। নারীও মানিয়ে নিয়েছে হাজার বছরের পুরনো এই সব ধারণা। বিয়ের পর একটু রঙ-ঢঙ না করলে নাকি স্বামীর কাছেই আবেদন থাকে না (আমার না, বেশীর ভাগের কথা)। সেখানে একজন নায়িকার আবেদন তো মাঠে মারা যাবেই। এটাই বাস্তবতা।
কেননা আমরা দেখি একজন গানের মানুষ, আবৃত্তির মানুষ, নাচের মানুষ কিংবা চিত্রশিল্পী নারীকে বিবাহিত বা অবিবাহিতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় না, নিজেকে জাস্টিফাই করতে হয় না। ইনফ্যাক্ট বিয়ের পর তার ইন্টারভিউ করতেই বা কোন সাংবাদিক হামলে পড়ে!
মাধুরী বা কঙ্গনা, তাদের কথার তারতম্য চিন্তা-ভাবনার প্রাগৈতিহাসিকতা বলে যত না, তার চেয়ে বেশি সমাজের কুশ্রী চিন্তায় কাতর হয়ে ক্যারিয়ার টানটান থাকতেই মান বাঁচাতে ফিরে আসায়।
কঙ্গনা রানাঔত কি বিয়ে করে এই আসনে টিকে থাকতে পারবে?
রঙের ঐ জগতে পারিবারিক জীবনে স্টেবল নায়িকার চেয়ে অবিবাহিত, একলা অথবা স্ক্যান্ডালযুক্ত নায়িকা হট বেশি।
অভিনয়ে অবিসংবাদিত হয়েও শুধুমাত্র কিছুদিন ঘোষণা দিয়ে দূরে থাকার জন্যই কি বিবাহিত নায়িকারা ফিরে এসে হালে পানি পায় না? হাড়ি খুন্তি সংসার আর সন্তান কি তাদের অভিজ্ঞতা মেধা সব নিংড়ে নেয় ! নোওপ! দর্শক টানতে তারা অক্ষম হয়ে পড়ে কেননা কোন বিবাহিত নারী সো কলড দর্শক নামক পুরুষদের মনোযোগ পায় না। তার শরীরী বিভঙ্গ তার জীবনে থাকা স্বামী বা সন্তানের অস্তিত্বকে জানান দেয়, ফলে অভিনয় আর মনোযোগ পায় না।
নারী দর্শকরাও দীর্ঘদিনের অভ্যাসবশত, ঘর-সংসার বাচ্চাকাচ্চা ফেলে কেন আসছে অভিনয় করতে- এই টাইপ চিন্তায় অমুক আনম্যারিড নায়িকার ভাইটাল স্ট্যাটিকটিকস কিংবা চুলের নতুন স্টাইল নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কোন পরিচালক বা প্রযোজক বিবাহিত নারী নিয়ে সিনেমার ব্যবসা করতে চাইবে? তাই বাধ্য হয়েই নায়িকাই “জয় থাকতে ভঙ্গ ভালো ” – ভঙ্গিতে আগ বাড়িয়ে ঘোষণা দেন, আর নয় – বিয়ের পর চুটিয়ে সংসার করবো হে ভাইসব।
শিল্পের এই করুণ বেদন রোদন – যাই-ই বলেন এই চলচ্চিত্র কন্যারাই ধারন করছেন। অন্য মাধ্যমের নারীরা তবুও কিছুটা মানুষ। এঁরা শুধুই মাংসল নারী।
দোষ তাই নারী অভিনেত্রীর নয়, এই সমাজের।
উপরের লেখাটি নিচের লিংকের লেখাটির প্রতিক্রিয়া হিসেবে ছাপানো হলো।