সেলিম ওসমানরা তো এখানেই বেড়ে উঠেছে

জেসমিন চৌধুরী: দেশব্যাপী আন্দোলনের ফলস্বরূপ আদালতের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের সেই স্কুল কমিটিকে বাতিল এবং শিক্ষককে বহাল রাখার সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু গতকাল রাতের খবরে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি এবং পুরো বিষয়টিকে ধর্মীয় অবমাননার প্রতিবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা দেখে মনে হলো, সাফল্য এখনো অনেক দুরে। তারপরও বলব যে কোন সাফল্যকে গুরুত্ব দিয়েই বৃহত্তর সাফল্যের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

salim-osmann-11-newsnextbdএ বিষয়ে আমার লিখা আর্টিকেলগুলোতে অনেক সমালোচনা এসেছে। আমি তাতে ক্ষুব্ধ নই, আলোচনা সমালোচনা ছাড়া সত্যে পৌঁছুনো যায় না। আবার ৫০০ শব্দের একটা লেখায় সবসময় একটা চিন্তাকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয়না, অন্তুত আমার সেই যোগ্যতা নেই।

আমি যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম, তখন আমার ক্লাসে মেথর সম্প্রদায়ের একটি মেয়ে পড়ত। কাচুমাচু হয়ে বসে থাকতো ক্লাসের পেছন দিকে, তার পাশে কেউ বসতো না। টিফিন টাইমে আমরা স্কুলের সামনে রাখা ড্রাম থেকে এল্যুমিনিয়ামের একটা গ্লাসে করে পানি খেতাম। সেই মেয়েটি পানি খেতে চাইলে কেউ একজন তার হাতে পানি ঢেলে দিত। গ্লাস বা ড্রামে হাত দেয়ার অনুমতি সেই মেয়ের ছিল না।

কুলি সম্প্রদায়ের একটি ছেলে ছিল যে ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হতো, তার বেলায়ও স্কুলের ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন ঘৃণা অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল শুধুমাত্র তার জন্মগত পরিচয়ের কারণে। সেই একই সময়ে এক মেম্বারের ছেলে পড়তো আমাদের সাথে যে লুংগি পরে স্কুলে আসতো, প্রকাশ্যে আকিজ বিড়ি ফুকতো আর মারামারি করত। শিক্ষকরা কখনোই তাকে শাস্তি দিতেন না।

‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ জাতীয় কবিতাগুলো আমরা শুধু মুখস্তই করতাম, এসব কবিতা পড়ানোর সময় শিক্ষকরা আমাদেরকে বাস্তব জীবনে এই বিশ্বাস ধারণ করার উপদেশ তো দিতেন না’ই, তদুপরি তারা নিজেরাও প্রকাশ্যভাবে অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিতেন।

আজ হয়তো সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু আজকের নাগরিকরা সেই সময়েরই প্রোডাক্ট। মানুষের জন্মগত ভিন্নতাকে নয়, বরং ক্ষমতার দাপটকে শ্রদ্ধা করা আমরা তখন থেকেই শিখেছি। সেজন্যই বারবার বলছি সেলিম ওসমান বৃষ্টির সাথে পড়েনি, গড়ে উঠেছে।

আমার মনে হয়না আজও এব্যাপারে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। সময়ের সাথে সাথে ভিন্নতার মাত্রাও পাল্টেছে, মানুষকে হেয় করে দেখার মত ধারণার সংখ্যাও বেড়েছে। এবিষয়ে আরো বিশদ কিছু লিখবো সময় নিয়ে, কিন্তু আজ সকালের নিজের ভাবনাগুলোকে নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারলাম না।

আমরা আপাতত এন্টিবায়োটিক খেয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু একই সাথে ভিটামিন এবং ব্যায়ামের উপযোগিতার কথা কি খুব বেশি অপ্রাসংগিক? সবমিলিয়ে ভীষণ অসুস্থ বোধ করছি। সবকিছুর পর এন্টিবায়োটিক তো খুব বেশি খাওয়াও যায় না।

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.