নন্দিতা বৈষ্ণব: ‘যে মেয়েটারে প্রপোজ করা হলো, সে যদি আমার বোন হতো তার জন্যে তো আমি গর্ববোধ করতাম না’। কথাটা বলেছিলেন আমার একজন সহকর্মি, সাম্প্রতিক সময়ে কমার্স কলেজের টিসি প্রাপ্ত স্টুডেন্টদের বিষয়ে।
আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাহলে কি আপনার বোন ঝোঁপ-ঝাড়ে লুকিয়ে প্রেম করলে গর্ববোধ করতেন?’
উত্তর আসলো, যেসব পরিবারের সন্তান ওরা, সেসব পরিবার নিশ্চয়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছে। যা হইছে ঠিকই হইছে। ওরা প্রেম করবে করুক, স্কুলের ইউনিফর্ম পরে কেনো? আর ভিডিও আপলোড কেনো? প্রতিষ্ঠানের রেপুটেসন নষ্ট হইছে। এই সকল ব্লা ব্লা ব্লা..!
যাই হোক, আমি ভাবছিলাম সমস্যাটা আসলে কোথায়? ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করা? নাকি এই বয়সে প্রেম করতে গিয়ে ধরা খাওয়া? নাকি প্রতিষ্ঠানের রেপুটেসন? ছোট থেকেই দেখি অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের সিলেবাসের আউট বুক পড়তে দেন না। কেন দেন না? প্রিয়তম সন্তানের মাথা বিগড়ে যাবে। পড়ালেখা নষ্ট হবে। নিতান্ত সাধারণের মানসিকতা না এটা। অনেক প্রগতিবাদী মানুষকেও দেখছি সন্তানের আউট অব সিলেবাসের পড়াকে ডিসকারেজ করতে। তারা বইয়ের চাইতে চব্বিশ ঘন্টার টিভি চ্যানেলগুলোকে অনেক নিরাপদ মনে করেন। আর মনে মনে শাহরুখ খানকে কলেজ স্টুডেন্ট বানিয়ে রাখেন। সিনেমার শেষে নায়ক নায়িকার মিলনাত্মক পরিণতি খুঁজেন।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে নিজের কলেজ পড়ুয়া সন্তানটি প্রেমে পড়লে। যেন প্রেমের চাইতে খারাপ জিনিস আর দ্বিতীয়টি নেই। এদিকে ইন্টারনেটের যুগে ফেসবুক খুলে জগতের সবকিছু দেখে শুনে বিনোদিত হতে চায় সবাই। যেন নিজের একটা অন্য জগত। কিন্তু পরিবারের কেউ কোথাও কিছু লিখেছে এটা দেখলেই মাথা নষ্ট। সাথে সাথে মুরুব্বিগিরি শুরু হয়ে যাবে।
এখন তরুণ ছেলেমেয়েরা লেখালেখির সাথে যতটা যুক্ত তাতো ফেবু অথবা ব্লগিং এর যুগ বলেই। বছর পনের আগেও তো লেখাপড়ার এমন প্র্যাকটিস ছিলো না। তখন তো শুধু টিভি দেখে, নয়তো আড্ডাবাজি করে সময় কাটাতো।
কদিন আগে মা ফোনে বলছিলো, কোন দরকার নাই এতো লেখালেখির। চারদিকের অবস্থা ভালো না। আমি দিব্যি বুঝে গেলাম কথাগুলো মায়ের নয়, মুরুব্বি গোছের কোন এক আত্মীয়ের। মাতো কোনদিন বই পড়তে কিম্বা লিখতে নিষেধ করে নাই।
আসলে আমরা এবং আমাদের অভিভাবকরা, সবাই যে কত রকম সাংস্কৃতিক সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। একদিকে আকাশ সংস্কৃতি, আরেকদিকে নিজের সমাজের সো-কলড মূল্যবোধ (যেসব নিয়ত ধর্ম , সংস্কৃতি, রীতি, সামাজিক নিয়ম দ্বারা শাসিত ) এই দুয়ের দ্বন্দ্বে পড়ে আছি।
প্রেম এবং যৌনতাকে স্বাভাবিক শাশ্বত জেনেও সবসময় কেমন একটা ঢাকঢাক গুড়গুড়। আর এই সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক অচল ভাবনা থেকেই হয়তো রেপুটেসন অথবা সম্মান কিম্বা মর্যাদাবোধকে খুব ঠুনকো জায়গায় নিয়ে গেছি আমরা। নিশ্চয়ই কোন প্রতিষ্ঠান বা পরিবারের সম্মান এতো ঠুনকো বিষয় নয় যে একটা প্রেমের ভিডিও প্রকাশে সেটা খানখান হয়ে ভেঙ্গে যাবে।