শাহীন আক্তার: অনেকেরই বিভিন্ন দিবসের প্রতি বেশ এলার্জি আছে। ভালোবাসা কি একদিনের, বাবা – মাকে কি ভালোবাসার জন্য বিশেষ দিন লাগে নাকি….. এরকম অনেক অ্যান্টি দিবস স্ট্যাটাস ফেসবুকে দেখা যায়।
সেসব জ্ঞানী (!) মানুষদের মতো আমার কোন দিবসের প্রতি এলার্জি নেই। বরং মনে হয়, আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে এমন এক একটি বিশেষ দিবস নতুন করে জীবনী শক্তি যোগায়।
আজ বিশ্ব মা দিবস। জীবনে মা দিবসের প্রথম উপহার পেলাম আমার ছেলের কাছ থেকে। তাই আবেগটা অনেক বেশী, সে সাথে মনের কোনে জমানো চাপা কষ্ট আমার মায়ের জন্য। জীবনে মাকে কখনো তেমন কোন উপহার দেইনি। কখনো আমার মাকে ৫০০ টাকা দিয়ে যদি বলতাম, তোমার জন্য কিছু নিও। আমার মা সে টাকার সাথে আরো ৫০০ টাকা দিয়ে আমার জন্য কিছু নিয়ে আসতো।
প্রবাসী হওয়ার পর থেকে তো মাত্রা আরো বেড়েছে। যদি বলি, আমার পরিচিত কেউ দেশে যাচ্ছে, সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় তার শপিং পর্ব, মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি সবার জন্য। কয়েকদিন আগে এমনই কাণ্ড ঘটাতে যাচ্ছে দেখে, আমি বললাম মা মানুষের সমস্যা হবে তুমি বেশী কিছু দিওনা।
মা বললো, দরকার হলে জিনিসের সাথে আমি একটি চিঠি দিয়ে দিব, লিখবো সারা বছর নাতি-নাতনির জন্য কিছু দিতে পারিনা। আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারিনা।
এমনি আমার মা। যখন মায়ের কাছে ছিলাম, তখন কখনো মাকে জড়িয়ে ধরিনি। এখন আমি মায়ের কাছ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, ইচ্ছে হয় মাকে জড়িয়ে ধরতে, মায়ের শরীরের গন্ধ নিতে। যখন জীবন পরিক্রমায় চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন মাকে ডাকি আর কিছুক্ষণ কাঁদি, যদিও সে ডাক মায়ের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।
মাকে নিয়ে এত কথা হয়তো এমনিতে কখনো বলা হতো না, যদি না এ বিশেষ দিবসটা না থাকতো।
মাগো, প্রতিদিন এই সান্ত্বনা নিয়ে ঘুমাতে যাই যে আরো একটি দিন ঘনিয়ে এলো তোমার কাছে যাওয়ার। যদিও সে দিনটি কবে জানা নেই।