অসুস্থ সমাজ ঠুনকো বিবেক

নায়না শাহরীন চৌধুরী: আরেকটা ঘটনা ঘটে গেছে। মা হত্যা করেছে তার শিশুকে। হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছে। ঘটনার তদন্ত হবে। তবে, তাতে যাই বেরিয়ে আসুক, শিশুটি আর ফিরবে না।

Nainaকিছুদিন আগের লেখা “একে অপরকে আরেকটু ভালবাসুন”-এ যা বলেছিলাম, ঘটনা আরও ঘটবে। তাই ঘটছে। পুরো সমাজ আজ অসুস্থ। দোষারোপের অভ্যাস থেকে আমরা বেরুতেই পারছি না। সন্দেহ, ভুল বোঝাবুঝি, রাগ, মারধোর এগুলো বেড়েই চলছে। আর তার বলি হচ্ছে নিরীহ শিশু।

আগে বউ খুন হতো, এখন শিশু হত্যা মুড়ি মুড়কির পর্যায়ে যাচ্ছে। কেন? একটু গভীরে যাওয়ার সময় কি কারো আছে? না, নেই। আমরা দোষারোপ, কুটনামী, কথা চালাচালি এসব খুব ভাল পারি।

আগের বিয়ে ছিল, চরিত্র খারাপ, এসব কথা বলতে পারলে আমাদের মুখে আপনাতেই পানি আসে, গলা নেমে যায়, চোখ ছোট হয়ে যায়। কারো উপর সবটা দোষ ঢেলে দিতে পারলে আমরা আরাম পাই। উপরের ঘটনা কেন ঘটল তার পুরোটা আমরা এখনও জানিনা। তবে বউকে বাচ্চা হবার পর বাচ্চা রেখে বের করে দেবার অমানবিক সংস্কৃতি যে দেশে নতুন নয়, সে দেশে এরকম দুএকটা ঘটনা ঘটতে পারে, এবং ঘটছে। আত্মহত্যা, হত্যা, এ ধরনের ঘটনা, সাধারণ মানুষ তখন ঘটায়, যখন তার মানসিক স্থিতি স্বাভাবিক থাকে না। সিরিয়াল কিলাররা স্কিজফ্রেনিক, তাই তারা ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে। যারা অসুস্থ না, তারা কখন অসুস্থ হয়ে উঠছে, আমরা কি তার খবর রাখার প্রয়োজন বোধ করি?

আমার বাসায় যে মেয়েটি কাজ করতে আসে, তাকে তার স্বামী পিটিয়ে শরীর ফুলিয়ে দিয়েছে। নেশার তাড়নায় কামড়ে দিয়েছে হাত। মেয়েটি ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ঘর ছাড়ার পর রাস্তায় পেয়ে আবার পিটিয়েছে। একটি ছেলে আছে মেয়েটির। ছেলেটিকে হয়তো আর দেখতে পাবে না। আমি ওকে ১০৯২১ (http://nhc.gov.bd/)এ ফোন করতে বলেছি , আর থানার নম্বর দিয়েছি। জানিনা ও কতদূর লড়াই করে বাঁচতে পারবে।

এই হানাহানি, হিংসা, মারামারির সমাজে বাধ্যতামূলক মানসিক কাউন্সেলিং এর দরকার। কিন্তু সেটা সবাই হাস্যকর ভাববে। নিজের প্রেস্টিজ আগে। অন্যের জীবন আমাদের দেখার বিষয় না। এরকম ভাবনা যতদিন চলবে ততদিন যা ঘটছে, যা নিয়ে আমরা আফসোস করি, যা আশা করি না, তা ঘটতে থাকবে। থাকুক ঘটতে, মা মারুক বাচ্চাকে, স্বামী মারুক বউকে। আমাদের কি?

-সঙ্গীত শিল্পী ও লেখক

 

শেয়ার করুন: