আমি এবং আমার মেয়ে

তামান্না ইসলাম: আমি একজন প্রচণ্ড ভিতু মানুষ, এর প্রধান কারণ সম্ভবত হচ্ছে শারীরিকভাবে আমি খুব দুর্বল। একটা নমুনা দিলেই বুঝা যাবে আমি ঠিক কতোখানি ভিতু।

Black girlsদিনের বেলায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, এমন সময় পাশের ঝোঁপে সরসর শব্দ হলো, আমি এক লাফে যেয়ে আমার বরের হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম। দেখা গেল ঝোঁপের মাঝে একটা সাদা কালো নিরীহ বেড়াল। ছোটবেলায় আমি যে কোন ধরনের খেলা ধুলায় চোখ বুজে লাস্ট হতাম বিপুল ব্যবধানে।

জানুয়ারি মাস এলেই আমার কান্না পেত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নামক বাধ্যতামূলক অত্যাচার শুরু হবে বলে। আমার যতোগুলো অপূর্ণতা আছে, তার ভিতরে আমি সবচেয়ে লজ্জিত আমার সাহসের অভাব এবং শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে।

আমার মেয়ের জন্মের পর থেকে আমি খালি প্রার্থনা করেছি, আমার মেয়ে যেন এই ক্ষেত্রে অন্তত আমার মতো না হয়। শক্ত পোক্ত হয়। শারীরিক এবং মানসিকভাবে।

আমার প্রার্থনার কারণে, নাকি বাবার জীনের কারণে জানি না, সে ছোটবেলা থেকেই মেয়ে আমার খেলা পাগল। বহু বছর ধরে সকার খেলে খেলে তার পায়ের লাথির জোর এখন মাশাল্লাহ অনেক। পায়ের পেশী এবং লাথির জোর তার অন্যতম গর্বের বিষয়।

যেসব দিন তাদের দল ছেলেদেরকে কোন খেলায় হারায় বা সে কোন ছেলেকে গোহারা হারাতে পারে, তার চোখে আমি অন্যরকম তৃপ্তি চিকচিক করতে দেখি। আমি অবাক হয়ে জানতে চেয়েছি এর কারণ কি?

সে আমাকে বলেছে “আমার টিচার, বন্ধু অনেকেরই ধারনা মেয়েরা খেলাধুলায় ভাল হতে পারে না, এটা শুধু ছেলেদের কাজ, আমার খুব রাগ হয় এটা শুনলে। আমি ওদেরকে ভুল প্রমাণিত করতে চাই।”

কয়েকদিন আগে কি কারণে যেন তার চেয়ে বড় এক ছেলে তাকে তাড়া করেছে সোডার ক্যান নিয়ে এবং তাকে ভিজিয়ে দিয়েছে। আমার মেয়ে বদরাগী না, কিন্তু এই কাজে সে যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছে এবং সেই কারণে সেই ছেলেকেও সে সোডা দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে।

ছেলেটা তার অভিভাবকের কাছে নালিশ করেছে। এতে মেয়ে খুবই ক্ষিপ্ত, কিন্তু সে একাই সেটা ফেস করেছে। আমাকে বলার পর আমি বললাম “তোমারও আমাকে বলা উচিত ছিল। বল নাই কেন? “

সে উত্তর দিয়েছে, “আমি নিজেই নিজের টেক কেয়ার করতে পারি। নালিশ করে দুর্বলরা। আমি তো কোন অপরাধ করি নাই আর আমি দুর্বলও না।”

শেয়ার করুন: