উইমেন চ্যাপ্টার: যুক্তি, পাল্টা যুক্তিতে মুখর বৃহস্পতিবারের (২৭ জুন) সংসদে ছিল গঠনমূলক সমালোচনা ও যুক্তিনির্ভর বিতর্ক। দুই জোটেরই জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা নিজেদের মতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। দু-একজন কিছুটা টিকা-টিপ্পনি কাটলেও অযাচিত কোন বাজে মন্তব্য করেননি। পারস্পরিক সমালোচনা ব্যাপকভাবে থাকলেও কেউ ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কোন শব্দ ব্যবহার করেননি।
বাজেট আলোচনা অধিবেশনের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির নেতা ও সংসদ সদস্য মওদুদ বলেন, ‘আমরা কোনো প্রস্তাব দেব না। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, সে ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে।’ তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। এ ধরনের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।
পঞ্চম সংশোধনীকে ‘রাজনৈতিক রায়’ উল্লেখ করে মওদুদ আরো বলেন, ‘উচ্চ আদালতের কোনো রাজনৈতিক ইস্যুতে রায় দেওয়া ঠিক নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিচারকদের স্বাধীনতা নেই। বিচার বিভাগে এত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এর আগে দেখিনি।’
আরো একটি এক-এগারোর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। সুতরাং, আরেকটি এক-এগারো এলে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’
পরে আলোচনায় অংশ নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আপনারা গোঁ ধরছেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। আমরাও বলছি, কোনো প্রকার নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রশ্নই আসে না। নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের অধীনে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেন তত্ত্বাবধায়কে যাবো? দেশে ভোটার আইডি কার্ড হয়েছে। কেউ সিল মারতে পারে না। মিডিয়া খুবই শক্তিশালী। এই মিডিয়ার যুগে কি কারচুপি করার সুযোগ আছে?’ চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের অধীনেও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।’
এদিকে আলোচনায় এসে বিরোধী দলকে পালটা হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বর্জন বিএনপির একার বিষয় নয়। তত্ত্বাবধায়কে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না গেলে কী হবে? রাষ্ট্রপতি যদি এ সংসদকেই জীবিত করেন, তখন কী করবে বিরোধী দল?’ আসন্ন সংকট নিরসনে দ্রুত আলোচনার আহ্বান জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, ‘যতই দিন যাচ্ছে, আলোচনার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে বলছি না, তবে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক হবে না। আপনারা আসেন।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি নির্দলীয় না মানেন, সর্বদলীয় হতে পারে। আসুন, আলোচনা করি।’
তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুকে আর না টানার আহ্বান জানিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘এ শিশু মারা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এসে গেছে। ওই মরা গাছে ফুল ফোটানো যাবে না। যেভাবে সিটি নির্বাচন হয়েছে, সেভাবেই জাতীয় নির্বাচন হবে।’
জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ দুই নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সরকারি দল ও বিরোধী দলকে এক টেবিলে বসতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব বেশি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেন আপনি এ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না? আপনাকে পারতে হবে। আপনাকে ছাড়ছি না।’
বিএনপির এক সংসদ সদস্যের ‘দৈনিক আমার দেশ’ বন্ধের প্রসঙ্গে এক বক্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রথম আলো, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ ও সমকাল সকাল থেকেই সরকারের সমালোচনা শুরু করে। কিন্তু সেগুলো বন্ধ করা হয়নি। কারণ, সেগুলো নিরপেক্ষ পত্রিকা। এ সময় তিনি আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে ধর্মীয় উন্মাদনা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনেন। তবে তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার দেশ চালু করা সম্ভব নয়।’
এছাড়াও আলোচনায় নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনে ধর্মের ব্যাবহার, কুইক রেন্টাল সহ আরো নানান সমস্যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়। আলোচনায় আরও অংশ নেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, রেজা আলী, আ ক ম বাহাউদ্দিন, মোল্লা জালাল উদ্দিন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জিয়াউল হক মৃধা, মুজিবুল হক, ইমরান আহমেদ প্রমুখ।